১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, সোমবার, ১১:৩০

মোদির সফরেও নেই তিস্তার সম্ভাবনা

না, এবার আর কোনো রাখঢাক নয়। দিল্লি সফর পরবর্তী ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন খোলাসা করেই বললেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্চের ঢাকা সফরে ঝুলে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের কোনো সম্ভাবনা দেখছে না ঢাকা। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এপ্রিলে পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের আগ মুহূর্তের (মার্চে) ওই সফরে সঙ্গত কারণেই তিস্তা চুক্তির আশা করা যাচ্ছে না, এটি চ্যালেঞ্জিং হবে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আয়োজনে অংশ নিতে আগামী ২৬শে মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা আসছেন। ওই সফরের কর্মসূচি এবং অন্যান্য প্রস্তুতি চূড়ান্ত করতে দিল্লি গিয়েছিলেন পররাষ্ট্র সচিব। ৪ দিনের সফর শেষে গতকালই ঢাকায় ফিরেন। বিকালে গণমাধ্যমের আগ্রহে ব্রিফিংয়ে বসেন তিনি। সেখানে মোদির সফর বিষয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে জ্যেষ্ঠ সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সফরটির দিনক্ষণ এখনো পুরোপুরি চূড়ান্ত হয়নি।

তবে এটুকু আলোচনা হয়েছে, ২৬শে মার্চ তিনি আসবেন। সকালের দিকে বা দুপুরের দিকে আসতে পারেন জানিয়ে সচিব বলেন, সেক্ষেত্রে বিকাল থেকে আমাদের মূল অনুষ্ঠানটা হবে। সেখানে অংশগ্রহণ শেষে রাতে হয়তো অফিসিয়াল ব্যাঙ্কুয়েট বা অন্য গুরুত্বপূর্ণ কোনো কর্মসূচি থাকবে। পরদিন অর্থাৎ ২৭শে মার্চ হবে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। তাছাড়া ওই দিনে তিনি ঢাকার বাইরে যেতে পারেন। টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার আলোচনা চলছে জানিয়ে সচিব বলেন, শিডিউলে অনেক প্রস্তাবই আছে। কিন্তু হাই-প্রোফাইল সফরগুলোর সূচিতে শেষ সময়েও সংযোজন-বিয়োজন হতে থাকে। উল্লেখ্য, গত বছরের ১৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে মুজিববর্ষ উদ্বোধনের মূল অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। তাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে আমন্ত্রিত ছিলেন। কিন্তু করোনা মহামারির ভয়াবহতায় সফর এবং মূল আনুষ্ঠানটি স্থগিত করতে হয়েছিল। পরে অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়েছে।

মোদির সফরের আগে ঢাকা আসছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী
এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্চের ঢাকা সফরের আগে দিল্লির বিদেশমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বাংলাদেশ সফরে আসছেন। দিল্লি সফরকালে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন মন্ত্রী জয়শঙ্করের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করে তাকে ঢাকা সফরের আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সচিব নিজেই এ তথ্য জানান। গতকাল সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে বাংলাদেশে আসতে পারেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মোদির সফর কেবল উদ্যাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না জানিয়ে মোমেন বলেন, মোদির সফরে মুজিবনগর থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রস্তাবিত স্বাধীনতা সড়ক, ফেনী সেতু এবং মহাত্মা গান্ধী ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ডিজিটাল প্রদর্শনীর উদ্বোধন হতে পারে। এর বাইরে সফর ঘিরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনাসহ ৫-৬টি সমঝোতা স্মারক আলোচনার টেবিলে রয়েছে।

দিল্লিতে সচিব পর্যায়ের আলোচনায় এবারো তিস্তা চুক্তির বিষয়ে ভারতের পক্ষ থেকে আশ্বাস পূণব্যক্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গে এপ্রিলে নির্বাচন। নির্বাচনের আগে এগুলো (তিস্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি) করা কঠিন। যেহেতু মার্চে প্রধানমন্ত্রীর সফর, আর এপ্রিলে নির্বাচন। সেক্ষেত্রে সফরটি তো পেছানোর সুযোগ নেই। তাই এই সফরে তিস্তা চুক্তি সই করা চ্যালেঞ্জিং হবে বলেই মনে করি আমরা।

আরেক প্রশ্নে সচিব বলেন, ইলেকশন হবে। কিন্তু আমাদের চাওয়ার জায়গাটা যদি অপূর্ণ থেকে যায় তাহলেও হতাশা আসে, এটা স্বাভাবিক। তবে আমরা আশাবাদী থাকতে চাই। আমরা বলেছি, দেখো আমাদের দেশে এটা সবার মধ্যে প্রত্যাশা থাকে, যখন সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। আমরা তাদের এ-ও বলেছি, আমি দেশে ফেরার পর কিন্তু আমাদের সাংবাদিকরা প্রথম প্রশ্ন করবেন তিস্তা নিয়ে।

সচিব বলেন, এটা যেহেতু প্রোট্র্যাক্টেড ইস্যু। এটা চট করে কিছু বলে দিবে, নেগেটিভ কিছু বলবে তা-ও না। তারা পরিমিত পথে কথা বলেছে। তাতে করে তারা যে আন্তরিক নয়, সেটা বোঝা যায়নি। সেক্ষেত্রে আমরাও আমাদের পয়েন্টটা শক্ত করেই বলেছি।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=261088&cat=2