১ ফেব্রুয়ারি ২০২১, সোমবার, ১১:১৩

মৌসুমের রেকর্ড শৈত্যপ্রবাহ

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রাজারহাটে ৫.৫ ডিগ্রি; কাল থেকে কমতে পারে শীত

ঠাণ্ডা মৌসুম যায় যায় অবস্থায়ও এত শীত! প্রচণ্ড এই ঠাণ্ডাটা বাংলাদশের মধ্যাঞ্চলে খুব বেশি অনুভূত না হলেও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ তীব্রভাবে টের পাচ্ছেন। বিশেষ করে কুড়িগ্রাম ও রাজশাহী জেলায় চলছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এ সব অঞ্চলে গতকাল তাপমাত্রা ছিল ৫.৫ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। আজো এমন অবস্থা থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। এসব অঞ্চলে এখন হাঁড় কাঁপানো শীত। শরীরের উষ্ণতা বাড়াতে মানুষ রাত কাটাচ্ছে আগুন জ্বালিয়ে। ভারী লেপও ঠাণ্ডা দূর করতে পারছে না।

গতকাল দেশের সর্বত্র নিম্ন তাপমাত্রা ছিল কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাটে ৫.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাই ছিল চলতি শীত মৌসুমে বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড। এর আগে পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি দেশের ইতিহাসে সর্বনিম্ন  তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সেদিন নিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সেদিনই নীলফামারীতে নিম্ন  তাপমাত্রা ছিল ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সে তুলনায় ২০১৯ ও ২০২০ সালটি ছিল অনেকটা উষ্ণ।

রাজধানী ঢাকা মধ্যাঞ্চলের আওতায় পড়েছে। রাজধানী মৃদু শৈত্যপ্রবাহের আওতায় থাকলেও প্রচণ্ড শীতে অভ্যস্ত না হওয়ায় এটুকু শীতেই বেশ বেকায়দায় পড়েছে রাজধানীবাসী। নিম্ন তাপমাত্রা খুব বেশি না পড়লেও খোলা আকাশের নিচে রাত যাপনকারী ছিন্নমূল মানুষ অথবা রেল ও বাস স্টেশনে ঘুমানোর জায়গা যাদের তাদের কাছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের মতোই অনুভূতি। আবার বস্তিবাসীদেরও একই অবস্থা। তাদের মাথার ওপরে পলিথিনের ছাউনি থাকলেও তারাও তীব্র শীতে সীমাহীন কষ্টে রাত যাপন করে।

দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল থেকে আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন, ওসব অঞ্চলে পানি এত ঠাণ্ডা যে সকাল বেলা ছোঁয়া যায় না। ঠাণ্ডায় হাত অবশ হয়ে আসে। বেলা না বাড়লে ঘর থেকে বের হওয়ার সংখ্যা একেবারেই কম।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ঠাণ্ডা তাপমাত্রার একটি বলয় ওপর থেকে নিচে নেমে আসছে এবং আনুভূমিক হয়ে তা ছড়িয়ে পড়ছে চার দিকে। এর শুরু অনেক উত্তরে হলেও প্রচণ্ড ঠাণ্ডাটা আসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এলাকা থেকে। এর একটি বর্ধিতাংশ বাংলাদেশের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কয়েকটি অঞ্চলে অবস্থান করছে। আর এসব অঞ্চলেই নমেছে তীব্র থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ অর্থাৎ এসব অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকবে ক্ষেত্র বিশেষে। বিশেষ করে রাজশাহী ও কুড়িগ্রাম অঞ্চলে চলছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ।

অপর দিকে ময়মনসিংহ বিভাগ এবং রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অবশিষ্ট অঞ্চল ও টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের নিকলি, মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল, খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, বরিশাল এবং ভোলা অঞ্চলের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তীব্র শৈত্যপ্রবাহের এই অবস্থা আজ সোমবার থাকলেও আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। ক্রমান্বয়ে রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশে বেশ শীত পড়ে। ইংরেজি ক্যালেন্ডারে আজ থেকে ফেব্রুয়ারি শুরু হলেও বাংলা ক্যালেন্ডারে আজ ১৮ মাঘ। মাঘ মাসের অবশিষ্ট ঠাণ্ডাও থাকবে। তবে দিনের বেলাটা মোটামুটি উষ্ণ থাকলেও রাতে শীত থাকবে।
সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কুড়িগ্রামে ৫.৫ ডিগ্রি, দিনমজুরের মৃত্যু

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহ আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় হুল ফোটানো কনকনে ঠাণ্ডা আর উত্তরের শিরশির হাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মানুষ ঘরের বাইরে থাকতেই পারছে না। উত্তর জনপদ এখন কার্যত হিমঘরে পরিণত হয়েছে। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় কুড়িগ্রামে পাঁচ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শীতজনিত রোগে আত্রান্ত হয়ে রাজারহাটে ইরিবোরো চারা তুলতে গিয়ে আজাদ আলী (৪৩) নামে এক দিনমজুর মারা গেছেন। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এ অঞ্চলে তাপমাত্রা নিম্নগামী। এতে মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগের মুখে রয়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। ভরা ইরিবোরো মৌসুমে তীব্র ঠাণ্ডায় পানিতে নেমে কৃষি শ্রমিকরা চারা রোপণ করতে পারছেন না। ফলে বোরো ধান চাষ ব্যাহত হচ্ছে। অন্য দিকে কাজ করতে না পারায় খাদ্য সঙ্কটে পড়ছেন কৃষিশ্রমিকেরা।

জেলার হাসপাতাল ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও রোগী ভর্তির খবর পাওয়া গেছে। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ নানা শীতজনিত রোগে। বৃদ্ধদের অধিকাংশই শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতলে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

গত কিছু দিন ধরে ঘনকুয়াশা ভেদ করে দুপুর ১২টার দিকে সূর্য কিছু সময়ের জন্য দেখা গেলেও উত্তাপ নেই। ভর দুপুরে কোথাও কোথাও আগুন জ্বালিয়ে ঠাণ্ডা নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে অনেককে। বিকেল ৫টার মধ্যে রাস্তা, বাজার ঘাট, ঘরবাড়িসহ পুরো এলাকা ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ছে যা পরদিন দুপুর ১২টা পর্যন্ত থাকছে। ফলে হাটবাজার ও রাস্তা-ঘাটে জনসমাগম কমে গেছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, রোববার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কুড়িগ্রামে রেকর্ড করা হয় পাঁচ দশমিক পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আরো ৭২ ঘণ্টা এ রকম পরিস্থিতি থাকবে বলেও জানান তিনি।

রাজশাহীতে রেকর্ড শীতে নাকাল জনজীবন

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে মাত্র একদিনের ব্যবধানে তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শনিবার রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর গতকাল রোববার সর্বনিম্ন তামপাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ একদিনের ব্যবধানে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমেছে। এটি সারা দেশের মধ্যে রোববারের দ্বিতীয় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এ ছাড়া রাজশাহীতে চলতি মৌসুমের এখন পর্যন্ত রেকর্ড সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এর আগে চলতি শীত মৌসুমে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ৭ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিস এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ফলে এক দিকে রেকর্ড তাপমাত্রা হ্রাস, অন্য দিকে ঘনকুয়াশা আর হিমেল বাতাসে রাজশাহীতে আবারো বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তীব্র শীতে কাঁপছে মানুষ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি বেড়েছে রাজশাহীর ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষের। রেলওয়ে স্টেশন, বাসটার্মিনাল ও পথের ফুটপাথের ওপর খোলা আকাশের নিচে থাকা এসব মানুষের দিন-রাত কাটছে খুবই কষ্টে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে নিদারুণ ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।

আগামী দু-একদিনের মধ্যে এ অবস্থার কোনো উন্নতির সম্ভাবনা নেই। তীব্র শৈত্যপ্রবাহের কারণে সর্বনিম্ন এই তাপমাত্রা আরো এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আপাতত আবহাওয়া অধিদফতর এমন আশঙ্কার পূর্বাভাসই দিচ্ছে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতার্তদের মধ্যে পর্যাপ্তসংখ্যক কম্বল বিতরণ করা হচ্ছে। তবে সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এগিয়ে এলে শীতার্ত মানুষ অসহনীয় ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পাবেন।

পঞ্চগড়ে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, হাড়কাঁপানো শীতে কাঁপছে পঞ্চগড়ের মানুষগুলো। আবহাওয়া অফিসের হিসাবে মধ্য মাঘের পর পঞ্চগড়সহ উত্তরের জেলাগুলোতে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে তীব্র হয়েছে শীতের কাঁপন। গতকাল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। আবহাওয়া অফিসের হিসাব মতে, এটি মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ।

গত শনিবার মেঘাচ্ছন্ন আকাশ আর উত্তরের কনকনে শীতল বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় দিনভর তীব্র শীত অনুভূত হয়। বিকেলে সামান্য সময়ের জন্য সূর্যের মুখ দেখা গেলেও কুয়াশার কারণে ছিল না কোনো উত্তাপ। সন্ধ্যার পর থেকে প্রবল হতে থাকে উত্তরের হিমশীতল বাতাস। মধ্যরাত পর্যন্ত কুয়াশার দেখা না মিললেও শেষ রাত থেকে শুরু হয় ঘনকুয়াশা, যা অব্যাহত থাকে গতকাল রোববার দুুপুর পর্যন্ত। দুপুরের পর মেঘ কেটে গেলে দেখা মেলে সূর্যের। তেজও ছিল বেশ। বেড়ে যায় তাপমাত্রাও। শবিবার বেলা ৩টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার যেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১৫ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে সেখানে গতকাল রোববার একই সময়ে তারা সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করে ১৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় কিছুটা হলেও দুর্ভোগ কমেছে শীতার্ত মানুষগুলোর।

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, শনিবারের পর রোববার দুপুর পর্যন্ত সূর্যের আলো না থাকা এবং উত্তরের ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। অবশ্য দুপুরের পর থেকে সূর্য দেখা যাওয়ার পর থেকে উত্তাপ বেড়ে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ অবস্থা আরো কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে তিনি জানান।
সৈয়দপুরে জনজীবন বিপর্যস্ত, ১ জনের মৃত্যু

সৈয়দপুর (নীলফামারী) সংবাদদাতা জানান, ঘনকুয়াশা আর উত্তরের হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জনপদ নীলফামারীর সৈয়দপুর। চলতি শীতের সর্বনি¤œ তাপমাত্রায় জবুথবু হয়ে পড়েছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। চরম দুরবস্থায় পড়েছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী ও কৃষিজীবীরা।

সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় এ অঞ্চলের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘনকুয়াশার কারণে বেলা ১১টা পর্যন্ত দৃষ্টিসীমা ছিল ৬০০ মিটার। ফলে সকাল থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে কোনো বিমান ওঠানামা করেনি। যানবাহনও চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। এতে বিড়ম্বনায় পড়েছেন বিমানযাত্রীরা। শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের ফলে প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না। এতে শহরে মানুষজনের চলাচল কমে গেছে। ছিন্নমূল মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। কিন্তু ইরি-বোরোর আবাদ যাতে বিলম্ব না হয়, সে জন্য চাষিরা শীত উপেক্ষা করে মাঠে থাকলেও চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

এ দিকে শীত নিবারণের জন্য প্রয়োজনীয় গরম কাপড়ের অভাবে আগুন জ্বালিয়ে তাপ নিতে গিয়ে এক ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধাসহ দুইজন অগ্নিদগ্ধ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তাদের মধ্যে একজন আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা নারী চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন।

দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে শীত থাকবে আরো ২-৩ দিন
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলে শৈত্যপ্রবাহ আরো জেঁকে বসেছে। সারা দিন কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ার পর একটু রোদ দেখা গেলেও শীতের তীব্রতায় নাকাল শীতার্ত মানুষ। এক সাপ্তাহর বেশি সময় ধরে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এ অবস্থা আরো দুই-তিন দিন থাকবে। শীতের তীব্রতায় প্রাণিকূল হয়ে পড়েছে নাকাল। যবুথবু অবস্থা।

গতকাল রোববার দিনাজপুরের তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁওয়ের ওপর দিয়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ। হিমেল হাওয়া ও কনকনে শীতের তীব্রতায় খেটে খাওয়া মানুষ অসহায় অবস্থায় পড়েছে। তারা বের হতে পারছে না কাজে। শীতের তীব্রতায় বাড়ছে মানুষের রোগ-বালাই। কনকনে বাতাসে চরম বিপাকে পড়েছে শিশু এবং বৃদ্ধরা। দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল এবং অরবিন্দু শিশু হাসপাতালসহ জেলার সব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর ভিড়। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না কেউ। গরম কাপড়ের অভাবে অসহায়-দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষ খুব কষ্টে আছে। ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহনগুলো দিনের বেলায় রাস্তায় চলাচল করছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। এতে সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়েছে। প্রতিনিয়ত ঘটছে হতাহতের ঘটনা। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস ইনচার্জ তোফাজ্জল হোসেন জানান, এ পরিস্থিতি আরো দুই-তিন দিন থাকবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/559712