৩১ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার, ৯:৫৩

প্রতিবছর ধানের উৎপাদন খরচ বাড়ায় লোকসানে কৃষকরা ॥ লাভবান ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট

অপর্যাপ্ত মজুদ, ধান চাল সংগ্রহ করতে না পারা এবং যথাসময়ে আমদানির ব্যর্থতার কারণে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বড় চালকল মালিক ও পাইকারী ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বাজারে চাল, পেঁয়াজ ও আলুর মতো নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার জন্য ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’ এবং তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি)। কৃষিমন্ত্রীর অভিযোগ আড়তদার-মিলাররা ‘কারসাজি করে’ চালের দাম বাড়াচ্ছে। আড়তদাররা বলছেন, ধানের উৎপাদন কম হওয়ায় মূলত চালের দাম বাড়ার কারণ। সরকার এবং ব্যবসায়ীদের পরস্পর দোষারোপের রশি টানাটানিতে পিষ্ট হচ্ছেন অসহায় কৃষকরা। প্রদিবছর বাড়ছে ধানের উৎপাদন খরচ। চালের দাম বেশি হলেও তার প্রভাব নেই ধানের দামে। ফলে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। এতে ধান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষীরা। চালের মূল্য বৃদ্ধিতে স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য করোনাকালে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দিয়েছে। দ্রুত চালের দাম কমানোর দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) গবেষণায় উদ্বেগজনক এমন তথ্য উঠে এসেছে। চাল, আলু ও পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির কারণ উদঘাটনের জন্য মাঠ পর্যায়ে এ গবেষণা চালায় বিএআরসি। সম্প্রতি এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। গত তিন বছরে (২০১৭ থেকে ২০১৯) আমন মৌসুমে প্রতি কেজি চালে মিলাররা লাভ করেছেন চার টাকা ৬০ পয়সা থেকে সাড়ে ৯ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ২০১৮ থেকে ২০২০ সালের তিন বছর বোরোর চাল প্রক্রিয়া করে এসব মিল মালিকরা লাভ করেছেন চার টাকা ৭০ পয়সা থেকে আট টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত। জানা গেছে, চালের উপজাতসূমহ (বাই প্রডাক্ট) থেকে প্রচুর আয় হচ্ছে মিল মালিকদের। কিন্তু তারা কোনও হিসাবে তা বিবেচনায় আনছেন না। এসব বিবেচনায় নিয়ে এ মুনাফা লক্ষ্য করা গেছে। গবেষণায় জানানো হয়, প্রতি বছর ধানের প্রকৃত মূল্য কমছে। ফলে সার্বিকভাবে কৃষকদেরই লোকসান হচ্ছে। ১৯৭২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ধানের বাজার মূল্য ৪ থেকে ৫ শতাংশ হারে বাড়লেও এর প্রকৃত মূল্য প্রতি বছর হ্রাস পেয়েছে তিন শতাংশ হারে। এদিকে, ২০০৯ থেকে ২০২০ সময়কালে কেজি প্রতি ধান চাষের ব্যয় তিন শতাংশ হারে বেড়েছে। সবমিলে কৃষকের নিট মুনাফা কমেছে আট শতাংশ হারে।
বিএআরসি বলছে, গত বছর দেশে তিন কোটি ৮৭ লাখ ২২ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে ধান উৎপাদনের বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৪ শতাংশের থেকে বেশি। ফলে প্রতি বছর ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। তারপরও এ বছর চালের অস্বভাবিক দামের কারণ মজুদ প্রবণতা। করোনায় খাদ্য ঘাটতির শঙ্কায় ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা প্রচুর চাল মজুদ করেছিলেন। এ বিষয়ে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

গবেষণায় আরও বলা হয়, সরকার চাল সংগ্রহ ও যথাসময়ে চাল আমদানি করতে পারেনি। পাশাপাশি যথাযথ হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এসবের সুযোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চালে মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে মিলার, আরতদার এবং পাইকাররা অতি মুনাফা করেন। এছাড়াও মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের আধিপত্য এবং অসম প্রতিযোগিতা, আমনের উৎপাদন ঘাটতি, চাল আমদানি বন্ধ, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কারণে বেশি পরিমাণে দাম বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে গবেষণায়। এ গবেষণায় দাম নিয়ন্ত্রণে সর্বদা সরকারকে কমপক্ষে সাড়ে ১২ লাখ টন চাল মজুদ ও সর্বনিম্ন প্রতি বছর ২৫ লাখ টন চাল বাজার থেকে সংগ্রহ করার সুপারিশ করা হয়।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গত মাসে জানিয়েছিলেন, আমনের ভরা মৌসুমে আড়তদার-মিলাররা ‘কারসাজি করে’ চালের দাম বাড়াচ্ছে। এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ঘাটতি মেটানোর জন্য সরকার ৫ থেকে ৬ লাখ টন চাল বিদেশ থেকে আমদানি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরফলে চলতি মাসের ১২ তারিখে আমদানি করা চাল বন্ধরে এসে পৌঁছায়। আমদানিকৃত এসব চাল দেশের বাজারে প্রবেশ করলে চালের দাম কমে আসবে বলে জানিয়েছিলেন আমদানিকারকরা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে উৎপাদিত হয়েছে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ ধান। অথচ এ বছরই চালের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারি নজরদারির অভাব, দুষ্টচক্রের মজুতদারি, আড়তদার, চালকল মালিকদের সঙ্গে আঁতাত করে পাইকারদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়ানোর কারসাজিতে ধুলায় লুটাতে বসেছে চাল উৎপাদনে সরকারের সব অর্জন। মোটা চালের দামও উঠেছে ৫৫ টাকা কেজিতে। ফলে বাধ্য হয়ে ভরা গোলা নিয়েও চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশি কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় দেড় বছর আগে চাল আমদানির শুল্ক হার বাড়ানো হলেও তা ৬২.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে চাল আমদানির নীতিগত সিদ্ধান্ত দেয় সরকার।

মন্ত্রী জানান, সরকারি গুদামে চাল কমে গেছে। ২০১৯ সালে প্রায় ১৩ লাখ টনের মত খাদ্য ছিল, ২০২০ সালে সেটা কমে ৭ লাখ টনে নেমে আসে। এই যে ৫ থেকে ৬ লাখ ঘাতটি যদি না মেটাতে পারি...বাংলাদেশের মিলাররা, আড়তদাররা, জোতদাররা, যারা বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে, তারা চালের দাম বাড়ায় এবং এবারও তারা সেই কাজ করছে। মৌসুমের সময় তারা এখনও ধান কিনছে এবং ধান ও চালের দাম দুটোই বাড়িয়ে দিয়েছে। এবারের আমনের ভরা মৌসুম চললেও ধান ও চাল-দুটোরই দাম আগের বছরের তুলনায় বেশি ছিল।

সব সময় চাল আমদানির বিরোধিতা করে মিলাররা। তারা বলেন, চাল আদানি করলে কৃষক ক্ষতির মুখে পড়বে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, কৃষক অসন্তুষ্ট হবে, দাম পাবে না- এটার কোনো কারণ নেই। ধান ৯০০ টাকার বিক্রি করলেও লাভ হবে। এবার আমন উৎপাদন কম হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, বন্যায় এক লাখ ৫ হাজার হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে। এ হিসাবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টন ধান কম হয়েছে। এসব কারণে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী।

এদিকে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা চাল যথাযথভাবে বাজারজাত করা হচ্ছে কিনা তা তদারকির জন্য ৮ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি), পুলিশ সুপার (এসপি) ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গত বুধবার এই নির্দেশনা দিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণসহ বাজারমূল্য স্থিতিশীল রাখার স্বার্থে সরকারিভাবে চাল আমদানির পাশাপাশি বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য ৩২০টি প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে সুনির্দিষ্ট শর্তে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এরইমধ্যে আমদানিকারকরা বরাদ্দপ্রাপ্ত চাল ভারত থেকে বেনাপোল, ভোমরা, হিলি, বুড়িমারী, সোনাহাট, চিলাহাটি, বাংলাবান্ধা, বিবিরবাজার এবং বিরল স্থলবন্দরের মাধ্যমে আমদানি শুরু করেছেন। এই অবস্থায় আমদানিকারকদের আমদানি করা চাল যাতে যথাযথভাবে বাজারজাত হয় সেই বিষয়টি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মনিটরিং করতে হবে। যশোর, দিনাজপুর, সাতক্ষীরা, কুমিল্লা, পঞ্চগড়, লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রামের ডিসি, এসপি ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকদের বাজারজাতকরণ বিষয়ে তদারকির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে চিঠিতে। এবার আমন মৌসুমে মোটা চালের দাম ৫০ টাকা ছুঁয়েছে। চালের দাম দুর্ভোগে ফেলেছে সাধারণ মানুষকে।

বিএআরসির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যবসায়ীরা মনে করে সরকারের মজুদ সংক্রান্ত তথ্যে সবসময় ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে বলা হয়। এর মধ্যে বোরোর ভালো ফলন হলেও আমন চালের উৎপাদন ১৫ লাখ টন কম হয়েছে। ধান, চাল সংগ্রহ করতে না পেরে সরকারের মজুদ কমে যায়। এ সুযোগেই ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ধানের বাজারে মূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসাবে বলা হচ্ছে, বড় মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের আধিপত্য ও অসম প্রতিযোগিতা। আমন মৌসুমে ধান উৎপাদনে ঘাটতির আশঙ্কা। ধান চাষের ব্যয় ও প্রক্রিয়াজাতকরণের খরচ বৃদ্ধি। ক্রমবর্ধমান মৌসুমী ব্যবসায়ী বৃদ্ধি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উৎপাদন হ্রাস। ধান-চাল নিয়ে সুপারিশে বলা হয়, ধান-চাল সংগ্রহ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করা, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরিভাবে ধান সংগ্রহ করা ও মিলারদের মাধ্যমে তা চালে পরিণত করা। চিকন ও মোটা দানার চালের জন্য সরকারের পৃথক ন্যূনতম সহায়তা মূল্য (এসএমপি) ঘোষণা করা। ন্যূনতম ২৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ করা এবং মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ সংগ্রহ করার সক্ষমতা অর্জন করা যাতে করে সরকার বাজারে কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে। বাফার স্টক হিসেবে সরকার কর্তৃক প্রতি মাসে কমপক্ষে ১২ দশমিক ৫০ লাখ টন চাল মজুদ নিশ্চিৎ করা। উৎপাদন ব্যয়ের উপর কমপক্ষে ২০ শতাংশ মুনাফা বিবেচনা করে

কৃষিমন্ত্রী বলেন, সরকারের কাছে মজুত না থাকায় চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। চালের বাজার বাড়ার একমাত্র কারণ সরকারের গুদামে চাল না থাকা। যে সুযোগটা মিলার ও ব্যবসায়ীরা নিয়েছে। তারা একচেটিয়া সিন্ডিকেট করে বাজারে দাম বাড়িয়েছে। কৃষিমন্ত্রী বলেন, মিলাররা যেভাবে বাজারে সিন্ডিকেট করছে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ কাজটা কার্যত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। পাশাপাশি খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রণালয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
এদিকে, এ বছরও চাল মজুত বাড়ানো সম্ভব হয়নি বলে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আমরা চাল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছি। বাজারে দাম বেশি থাকায় আমন ও আউশের ধান মিলাররা সরকারকে দেয়নি। আমরা এক টনও সংগ্রহ করতে পারিনি। কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সরকারিভাবে ধান চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া ও সরকারি খাদ্য গুদামে পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় মিলের মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তার সুযোগ নিয়ে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এমনটা না হয় সেজন্য আগামী বোরো মৌসুমে ধান চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, প্রতি বছর ২০ থেকে ২৪ লাখ নতুন মুখ আসছে। কিন্তু জমির পরিমাণ কমছে ক্রমশ। সব ফসলই তো ধানি জমিতে জায়গা করে নিচ্ছে। এর মধ্যে ধানের উৎপাদন বাড়াতে হবে। চেষ্টা করছি উৎপাদন বাড়াতে। বর্তমানে ব্রি-২৭ ধানের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। বিনা-১৬ ভালো একটা ভ্যারাইটি। বিনা-১৬ ধানটিকে ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে দ্রুত মাঠে নিয়ে যেতে হবে।
আড়ত ও মোকাম মালিকরা অস্বীকার করলেও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মিল মালিক ও আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছে। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, তারা শুধু মিনিকেট চালের ব্যাপারে মনিটর করছে।

কারওয়ান বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ীরা জানান, মিলগুলো মোটা চাল দিতে পারছে না, এতে সরবরাহ কমে যাওয়ায় আড়তগুলোতে সংকট তৈরি হয়েছে। প্রায় সব ধরনের চাল কিনতে এক আড়ত থেকে আরেক আড়ত ঘুরতে হচ্ছে এতে পরিবহন খরচ বাড়ছে। সংকটের কারণে আড়তগুলোও নানা অজুহাতে দাম বেশি রাখছে চালের বস্তা প্রতি। আবার কোথাও কোথাও রয়েছে অদৃশ্য সিন্ডিকেট। চাল মজুদ রেখে সংকট তৈরি করেছে। যদি সিন্ডিকেট থেকেই থাকে সেটা ভাঙা তো সরকারের জন্য খুব সহজ কাজ। আজ সরকার ঘোষণা দিক আগামী সপ্তাহের মধ্যে এতো পরিমাণ চাল দেশে আমদানি করা হবে তাহলেই তো মজুদ রাখা চালগুলো ব্যবসায়ীরা বাহির করবে। এতে আর সংকট থাকবে না চালের দামও বাড়বে না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি হলে, অভ্যন্তরীণ উৎপাদন পর্যাপ্ত হলে, সরকারি গুদামে চালের যথেষ্ট মজুদ থাকলে অর্থনীতির স্বাভাবিক ধারায় চালের দাম বৃদ্ধির কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে না। কিন্তু তারপরও দাম বাড়ছে। বারবার হুটহাট করে চালের দাম বৃদ্ধি চাল ব্যবসায়ী, চালকল মালিক ও সিন্ডিকেটের সংঘবদ্ধ কারসাজি। তারা বলছেন, সরকারি গুদামের বাইরে দেশে ব্যক্তিমালিকানায় কী পরিমাণ ধান-চাল মজুদ আছে সে বিষয়ে সরকারের কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য না থাকায় বাজারে চাল ব্যবসায়ী, চালকল মালিক ও সিন্ডিকেটের কারসাজি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়ে উঠছে না। ফলে চালের বাজারে অস্থিতিশীলতা লেগেই আছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দায়িত্বশীল মহলকে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে। সরকারি গুদামের বাইরে ব্যক্তিমালিকানায় কে কী পরিমাণ ধান-চাল মজুদ রাখছে, সে বিষয়ে তদারকি করতে হবে।

কোনো পণ্যের কেবল উৎপাদন কম হলেই খাদ্যসংকট সৃষ্টি হয় না; ওই পণ্য জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে গেলেও তা খাদ্যাভাবের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। করোনা এমনিতেই মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এ সময় যদি চালের মতো প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়, তাহলে স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্ভোগ-কষ্টের কোনো সীমা থাকবে না। নিত্যপণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করার জন্য যারা দায়ী, তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে জনদুর্ভোগ নিরসন করতে হবে।

https://dailysangram.com/post/442307