৩০ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ১১:৩১

সরব হতে প্রস্তুত বন্ধ হওয়া কিন্ডারগার্টেনও

রাজধানীর মাটিকাটায় ১৫ বছরের পুরনো কিন্ডারগার্টেন আইডিয়াল পাবলিক স্কুল। গত বছরের শুরুতে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল প্রায় ৩০০। শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা ২৫। তবে গত জুন মাসে স্কুলটি বিক্রির জন্য নোটিশ টাঙানো হয়েছিল। কিন্তু সাড়া না পাওয়ায় স্কুলটিই বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন আবার নতুন করে স্কুলটি শুরু হচ্ছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক নারগিস আক্তার বলেন, ‘আমরা আগের চেয়ে একটি ছোট বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। যদি শিক্ষার্থীরা আবার ফিরে আসে, তাহলে আবারও বড় জায়গায় ফিরে যাব। ১৫ বছর ধরে স্কুলটি চালাচ্ছি। শত কষ্টেও ছেড়ে দিতে পারিনি।’

জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে কিন্ডারগার্টেনগুলোও। এরই মধ্যে তারা পুরো স্কুল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে শুরু করেছে। তিন ফুট দূরত্বে শিক্ষার্থীদের বসিয়ে ক্লাস পরিচালনারও পরিকল্পনা গ্রহণ করছে। সে অনুযায়ী চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চ ঠিক করছে। ক্লাসগুলো ধোয়া-মোছারও কাজ চলছে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তারাও পুরোপুরি প্রস্তুত থাকবে বলে জানিয়েছে।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল আগে পাঁচ রুমের একটি বাড়ি নিয়ে চালালেও করোনাকালে স্কুলটি ছেড়ে দেওয়া হয়। সম্প্রতি দুই রুমের আরেকটি বাসা নিয়ে ওই কিন্ডারগার্টেনটি খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে কিছু স্কুল এখনো সিদ্ধান্তহীনতায় আছে। রাজধানীর খিলক্ষেতের নিউ প্রত্যাশা হাই স্কুল, মাটিকাটা এলাকার ঢাকা মডেল স্কুল, সাভারের সৃজন স্কুল বন্ধ হলেও এখনো খোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

দেশে প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে। এসব স্কুলে পড়ালেখা করে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটি রয়েছে। এরই মধ্যে সরকার স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছে। দেশের কিন্ডারগার্টেনে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী পড়ালেখা করলেও কোনো নির্দেশনায়ই তাদের কথা উল্লেখ করা হয়নি। এর পরও তারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে মিল রেখে তাদের স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো যেহেতু অনুমোদিত নয়, তাই আমরা তাদের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেইনি। তবে আমরা স্কুল খোলার প্রস্তুতি নিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে যে নির্দেশনা ও গাইডলাইন দিয়েছি, সেটা উন্মুক্ত। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোও সেটা অনুসরণ করতে পারে।’

জানা যায়, টিউশন ফির টাকায় কিন্ডারগার্টেনের বাড়িভাড়া, নানা ধরনের বিল ও শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের সন্তানরা পড়ালেখা করায় তাঁরা বেতন দিতে পারেননি। ফলে শিক্ষকদের অনেকেই বেতন না পেয়ে ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন। অনেকে কিন্ডারগার্টেন বিক্রির নোটিশ দিয়েও সাড়া পাননি। আবার কেউ কেউ কয়েক মাস বাড়িভাড়াসহ নানা ধরনের বিল দিতে না পেরে বন্ধই করে দিয়েছেন। আবার কেউ বড় জায়গা থেকে ছোট জায়গায় এসে কোনো রকমে স্কুল টিকিয়ে রেখেছেন।

বাংলাদেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমরা। আমাদের শিক্ষকরা যে দুর্দশায় ছিলেন, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তবে স্কুল খোলার খবরে সবাই ফের জেগে উঠছে। বিপুল উৎসাহে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ধোয়া-মোছার কাজ চলছে। এমনকি যেসব স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোও নতুন করে খুলতে শুরু করেছে। আমাদের স্কুলগুলোতে প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করলেও কেউ আমাদের দায়ভার নিতে রাজি নয়। এতে আমরা খুবই মর্মাহত।’

জানা যায়, রাজধানীসহ সারা দেশের নামি-দামি স্কুলগুলো সাধারণত প্রথম শ্রেণি থেকে। আর বেশির ভাগ সরকারি মাধ্যমিকই শুরু হয় তৃতীয় বা চতুর্থ শ্রেণি থেকে। অভিভাবকরা সাধারণত বাড়ির কাছাকাছি ভালো কিন্ডারগার্টেনে তাদের সন্তানদের ভর্তি করান। সাড়ে তিন থেকে চার বছর বয়স হলেই প্লে শ্রেণিতে দিয়ে দেন। এরপর নার্সারি ও কেজি শ্রেণিতে পড়ার পর নামি-দামি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযুদ্ধে নামেন। ফলে কিন্ডারগার্টেনগুলোর ওপরের শ্রেণিতে শিক্ষার্থী কম থাকলেও প্রথম শ্রেণির আগের তিনটি শ্রেণিতে ভরপুর শিক্ষার্থী থাকে। এমনকি অনেক কিন্ডারগার্টেনে সিটও পাওয়া যায় না। কিন্তু এবার ভর্তি মৌসুমে তারা শিক্ষার্থী পায়নি। এমনকি টিউশন ফি দেওয়ার ভয়ে যোগাযোগ রাখছে না আগের শিক্ষার্থীরাও।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অনেক অভিভাবকই মনে করেছেন, জানুয়ারিতে তাঁর বাচ্চাকে ভর্তি করালে ওই মাসের বেতনও দিতে হবে। তাই যখন স্কুল খুলবে তখনই তারা তাদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করাবেন।

রাজধানীর মাটিকাটায় স্কাইলার্ক মডেল স্কুলের প্রধান মো. সাফায়েত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছি। প্রস্তুতিতে আমাদের কোনো ঘাটতি থাকবে না। তবে আমাদের কিছু শিক্ষক অন্য পেশায় চলে গেলেও তাঁরা আবার যোগাযোগ করছেন। স্কুল খুললে তাঁরাও ফিরে আসবেন। তবে অনেক শিক্ষার্থীর পরিবার গ্রামে চলে গেছে। কেউ বাসা পরিবর্তন করেছে। ফলে স্কুল খুললে কী পরিমাণ শিক্ষার্থী পাব, সেটা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2021/01/30/1000046