৩০ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ১১:৩১

পানি সম্মেলনে ভারতীয় বিশেষজ্ঞ

তিস্তার উজানে বড় বাঁধে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

তিস্তা নদীর উজানে ভারতীয় অংশে বড় বাঁধ নির্মাণের ফলে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভারতের একজন বিশেষজ্ঞ। ঢাকায় অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলনে ভারতের কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চ স্কলার আদিল কাইয়ুম মোল্লাহ ‘বাংলাদেশ রিভার রাইটস : কনটেস্টিং দ্য তিস্তা ওয়াটার’ শীর্ষক উপস্থাপনা তুলে ধরেন। সেখানে তিনি বলেন, আন্তর্দেশীয় পানি ব্যবস্থাপনা দক্ষিণ এশিয়ার একটি উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। এই যে পানি নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, তা দুই দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের ওপর নির্ভর করে।

বাংলাদেশ ও ভারতের তিস্তা নদী ইস্যুতে ড. আদিল বলেন, তিস্তা এই দুই দেশের মধ্যে চতুর্থ বৃহৎ আন্তর্দেশীয় নদী। ভৌগোলিকভাবে ওপরে অবস্থিত ভারত এই নদীতে বড় বাঁধ নির্মাণের কারণে নিচের দিকে অবস্থিত বাংলাদেশে পানিপ্রবাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড আয়োজিত তিন দিনের ওই সম্মেলন গতকাল শুক্রবার শেষ হয়েছে। ভার্চুয়াল এই সম্মেলনে বক্তারা নদীর ও নদী উপকূলে বসবাসকারী মানুষের অধিকারের ওপর জোর দিয়েছেন।

পানি সম্মেলনে নদীর অধিকার শীর্ষক সেশনে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট রিসার্চের প্রফেসর ইমেরিটাস ড. আইনুন নিশাত বলেন, নদী অধিকার বলতে মূলত নদীর উপকূলে বসবাসকারী মানুষের অধিকারকে বোঝায়। তাই নদীরও রয়েছে তার নিজ ধারা বহমান রাখার অধিকার। তিনি বলেন, নদীর স্বাভাবিক গতিধারাকে ব্যাহত না করে নদীর প্রবাহ ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা এবং কৌশল নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নদীর বার্ষিক গতিপ্রবাহকে আমলে না নিয়ে মাসিক গতিপ্রবাহকে বিবেচনায় নিতে হবে। বৃহৎ বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে সামাজিক এবং বাস্তুসংস্থান সংক্রান্ত বিষয়গুলোও বিবেচনায় আনতে হবে।

তিস্তা নদী সম্পর্কে আইনুন নিশাত বলেন, তিস্তা নদীর গতিপ্রবাহ শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। এই সমস্যা সমাধানে বর্ষা মৌসুমে পানি সংরক্ষণ করে শুষ্ক মৌসুমে ব্যবহারের জন্য ব্যবস্থা করতে হবে।

জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব এশিয়ান অ্যান্ড আফ্রিকান এরিয়া স্টাডিজের সহযোগী অধ্যাপক ড. রোহান ডি’ সুজা বলেন, ১৯৩০ সাল থেকে দেশ গঠন এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাঁধ নির্মাণকে একটি অন্যতম নির্দেশক হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু এখন এই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, কারণ এই বাঁধকেন্দ্রিক উন্নয়ন নদীর প্রতি মানুষের চিরন্তন অধিকারকে অবজ্ঞা অথবা অস্বীকার করে। যদিও বলা হয়, বড় বাঁধগুলো হলো নবায়নযোগ্য জ্বালানির একটি অন্যতম ভালো উৎস। এর ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের সুবিধা জাতীয় পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়লেও স্থানীয় লোকজন বঞ্চিত হচ্ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির জেনারেল অ্যাসেম্বলি মেম্বার অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন, অপরিকল্পিত স্লুইস গেট ও বাঁধ নির্মাণ, পেপার মিল এবং আবাসিক এলাকার বর্জ্য ফেলার কারণে হালদা নদীর পরিবেশগত ভারসাম্য মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে।

ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ওয়াটার রিসোর্স ম্যানেজমেন্টের পাকিস্তানি বিশেষজ্ঞ হিনা লটিয়া বলেন, কভিড-১৯ মহামারির কারণে সর্বত্র অসমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে জেন্ডার অসমতা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। নারী ও শিশুরা বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজের পরিচালক ও অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরিন বলেন, কভিড-১৯ মহামারিতে বারবার হাত ধোয়ার জন্য পানি সংগ্রহের ওপর আরো চাপ বেড়ে গেছে। এতে নারীদের বাড়তি কাজের বোঝা নিতে হচ্ছে।

অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির চেয়ারপারসন ব্যারিস্টার মনজুর হাসান ওবিই বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নদীর পানিপ্রবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। আমাদের নদীর অধিকার নিয়ে কথা বলা উচিত, যেমনটা বলা উচিত ব্যক্তির অধিকার নিয়ে। তিনি আরো বলেন, নদীর যত্রতত্র অপব্যবহারের ফলে বিশ্বব্যাপী উপকূলবাসীদের জীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/01/30/1000054