২৯ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার, ১১:০৩

৬ মাসে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি ৫৫ হাজার কোটি টাকা

অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৬৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। স্থানীয় মুদ্রায় যা প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা। করোনার প্রভাবে আমদানি ব্যয় কমে গেছে। কিন্তু যে হারে আমদানি ব্যয় কমেছে তার চেয়ে বেশি হারে কমেছে রফতানি আয়। এতে প্রভাব পড়েছে পণ্য বাণিজ্যে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ডিসেম্বরে পণ্য আমদানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যেখানে আগের বছরে ছিল ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। কিন্তু বিপরীতে একই সময়ে রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক ৬ দশমিক ১১ শতাংশ। যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আলোচ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমদানি ব্যয় ধনাত্মক গতিতে চললেও রফতানি আয়ের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে ঋণাত্মক গতিতে।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব গেল বছর মার্চ থেকে শুরু হওয়ার পর আমদানি ও রফতানিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ে। পণ্য আমদানির জন্য যেসব ঋণপত্র খোলা হয়েছিল তা নিষ্পত্তি হঠাৎ থেমে যায়। একই সাথে থেমে যায় রফতানি আয়। রফতানি আয়ের বেশির ভাগ অবদান রাখা তৈরী পোশাক খাতে রফতানি আদেশ হঠাৎ স্থগিত হয়ে যায়। কোনো কোনোটি বাতিলও হয়ে যায়। ফলে রফতানি আয় ব্যাপক হারে কমে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আমদানি ব্যয় যে হারে কমে যায়, রফতানি আয় কমে যায় তার চেয়ে বেশি হারে। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে পণ্য বাণিজ্যে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য আমদানিতে ব্যয় হয়েছে দুই হাজার ৫২২ কোটি ৬০ লাখ ডলার, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল দুই হাজার ৭০৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। বিপরীতে চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে রফতানি আয় হয়েছিল এক হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার, যেখানে আগের বছরে ছিল এক হাজার ৮৮৫ কোটি ডলার। অর্থাৎ আলোচ্য সময়ে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ৬৪৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এ অর্থ স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা হিসাবে)।

ব্যাংকাররা জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী এখনো চলছে। কিন্তু শুরুতে যে হারে আমদানি ও রফতানিতে প্রভাব পড়েছিল তা অনেকটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা যে হারে বাড়ছে. ইউরোপীয় দেশগুলোতে নতুন করে করোনাভাইরাস হানা দেয়ায় বহির্বিশ্বে চাহিদা সে হারে বাড়ছে না। ফলে রফতানি আয়ে মাঝে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়লেও এখন তা আবার কমে যাচ্ছে। রফতানি আয় আবারো ঋণাত্মক ধারায় চলে এসেছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় শুরুর দিকে পণ্য আমদানিতে যে হারে ঋণাত্মক প্রভাব পড়েছিল, বর্তমানে তা অনেকটা কাটতে শুরু করেছে। এর ফলে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া পণ্য আমদানির জন্য আগে যে পরিমাণ ঋণপত্র (এলসি) স্থাপন করা হয়েছিল তা স্থগিত হলেও এখন আবার নতুন করে আমদানি শুরু করেছে। এর বাইরে বাকিতে যেসব পণ্য আমদানি করা হয়েছিল তা আবার পরিশোধ করতে হচ্ছে। এর প্রভাব সামগ্রিক আমদানি ব্যয়ে পড়ছে। সবমিলেই সামগ্রিক আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, রফতানি আয়ের চেয়ে আমদানি ব্যয় ব্যাপক বেড়ে গেলে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতি আরো বেড়ে যাবে। সামগ্রিক ঘাটতি বেড়ে গেলে চাপ বেড়ে যাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর। বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় আপাতত এর প্রভাব বৈদেশিক মুদ্রার মজুদে না পড়লেও সামনে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেলে এ চাপ বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/559051/