২৮ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ১০:৫৮

টানা শীতে চরম দুর্ভোগে মানুষ

দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে উত্তরবঙ্গে শৈত্যপ্রবাহ বৃদ্ধি এবং তাপমাত্রা কমতে থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন সেসব স্থানের লোকজন। অনেক জেলায় জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। ফসল নিয়ে আশঙ্কায় পড়েছেন চাষিরা। হাসপাতালগুলোতে ভিড় বাড়ছে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়া শিশু-বৃদ্ধসহ সব বয়সী লোকজনের। স্থানীয় আবহাওয়া অফিসগুলো বলছে, এ অবস্থা আরো কয়েক দিন থাকতে পারে।

কুড়িগ্রামে তৃতীয় দফা শৈত্যপ্রবাহে চরম দুর্ভোগ
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে চারদিক। গত চার দিন ধরে বিকেল থেকে পরদিন বেলা ২টা পর্যন্ত কুয়াশার চাঁদরে ঢাকা থাকলেও গতকাল বুধবার সারা দিনেও সুর্যের মুখ দেখা যায়নি। ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলায়ও গাড়ির হেড লাইট জ্বালিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে চালকদের। উত্তরের হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠাণ্ডার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

বিশেষ করে গরম কাপড়ের অভাবে চরম শীত কষ্টে ভুগছে জেলার দুই শতাধিক চরাঞ্চলের মানুষসহ দরিদ্র পরিবারের শিশু ও বৃদ্ধরা। কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে সময় মতো কাজে বের হতে পারছে না অনেক শ্রমিক। ফলে চলতি ইরিবোরো চারা রোপণ কার্যক্রমও থমকে গেছে। শুধু মানুষ নয়, গবাদি পশুপাখি ও প্রাণীরাও ঠাণ্ডায় কাহিল হয়ে পড়ছে।

গতকাল বুধবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালসহ উপজেলার হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন দিন ধরে ঠাণ্ডার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আবারো বৃদ্ধি পেয়েছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র সরকার জানান, বুধবার কুড়িগ্রাম জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কমপক্ষে আরো ৭২ ঘণ্টায় ঘন কুয়াশাসহ তাপমাত্রা নি¤œগামী থাকতে পারে।

দিনাজপুরে হাড়কাঁপানো শীতে অচল জীবনযাত্রা
দিনাজপুর সংবাদদাতা জানান, দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের সর্বত্রই জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। তীব্র শীতে এ অঞ্চলে জনজীবন প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে। টানা সাত দিনে শৈত্যপ্রবাহে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ ও দিন মজুররা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে বেড়েছে শীত। শৈত্যপ্রবাহে আরো কাবু হয়ে পড়েছে শীতার্ত মানুষ। কয়েক দিন ধরে সূর্যের দেখা নেই দিনাজপুরে। শেষ বিকেলে সূর্যের কিছুটা দেখা মিললেও পাওয়া যায় না রোদের উত্তাপ। সেই সাথে পূবালী হিমেল হাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে শীতের তীব্রতা। দিনাজপুরের প্রায় সবজায়গায় গাড়িগুলো চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। ঘন কুয়াশায় মহাসড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

দিনাজপুরের বিরল, হাকিমপুর, পার্বতীপুর ও বীরগঞ্জে এ পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে সাতজন। শীত থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন পাড়ামহল্লায় খড়কুট জ্বালিয়ে আগুনে শীত নিবারণ করতে দেখা গেছে। শীতে চতুর্দিকে বাড়ছে শীতজনিত নানা অসুখ-বিসুখ। বিশেষ করে এতে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন।

গতকাল বুধবার দিনাজপুরে তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তীব্র শীতে সবেচেয়ে বেশি কর্মজীবী ও খেটে খাওয়া নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে চরমে। লোকজন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে খুব একটা বের হচ্ছেন না। কৃষকেরা তাদের ফসল নিয়ে হতাশায় পড়েছেন। বিশেষ করে আলুসহ শাকসবজি আবাদ করা চাষিরা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। শীত ও কুয়াশার তীব্রতা না কমলে তাদের ফসলগুলোর ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তারা।

দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক দিনের মাঝারি শৈত্যপ্রবাহটি তীব্র শৈত্য প্রবাহে রূপ নিয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন দিন এই অবস্থা বিরাজমান থাকতে পারে বলে তিনি জানান। এরপর অবস্থার উন্নতি হতে পারে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/558812