২৭ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১২:০৫

বিএআরসির গবেষণা

চাল পেঁয়াজ ও আলুর দাম সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে

ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বাজার নিয়ন্ত্রণ, সঠিক তথ্য ঘাটতি, মজুদে ঘাটতিসহ বিভিন্ন কারণে চাল, আলু ও পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়। এ জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায়। পাশাপাশি উৎপাদন তথ্যের গরমিল মূল্যবৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে।

রাজধানীর ফার্মগেটস্থ বিএআরসি মিলনায়তনে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন বক্তার বক্তব্যে এসব তথ্য উঠে এসেছে। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সরকারকে উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতে গুরুত্ব দেয়া উচিত। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ড. বখতিয়ারের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিসচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন বিএআরসি গবেষণা দলের সমন্বয়ক ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম।

চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণ উপস্থাপন করেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কৃষি অর্থনীতি বিভাগের এসএসও আব্দুস সালাম, আলুর মূল্যবৃদ্ধির কারণ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসায় ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক শেখ আব্দুস সবুর, পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির কারণ উপস্থাপন করেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের প্রধান আব্দুর রশীদ।

নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য চাল, আলু ও পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধির কারণ উদঘাটনের জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল-বিএআরসির নেতৃত্বে একটি গবেষণা দল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়। গত ২০ অক্টোবর কৃষি মন্ত্রণালয়ের ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিভুক্ত প্রকল্পগুলোর সেপ্টেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সময়ের বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এ সভায় বলা হয়েছিল, মাঠপর্যায়ের কৃষক, মিল মালিক, কোল্ড স্টোরেজ মালিক ও স্থানীয় ভোক্তাদের সাঙ্গে আলোচনা করে বিএআরসির নেতৃত্বে অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কৃষি অর্থনীতিবিদরা এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় গবেষণা পরিচালনা করবে এবং এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন নভেম্বর মাসেই জমা দেবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক চাল, আলু ও পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধির কারণ উদঘাটনের জন্য বিএআরসি নির্বাহী চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে গত বছরের ১২ নভেম্বর বিএআরসি কাউন্সিল এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। সে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনটি স্টাডি টিম গঠন করা হয়। গবেষণা কাজটি মূলত ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশন (এফজিডি) ও কী ইনফরমেন্ট ইন্টারভিউর (কেআইআই) মাধ্যমে প্রাথমিক ও বিভিন্ন উৎস থেকে মাধ্যমিক তথ্য উপাত্তের উপর ভিত্তি করে করা হয়েছে। ধান-চালবিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে নওগাঁ, শেরপুর, কুমিল্লা ও ঢাকা জেলা আলুর ক্ষেত্রে মুন্সীগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও ঢাকা জেলা এবং পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ফরিদপুর, পাবনা, নাটোর ও ঢাকা জেলাকে নির্বাচন করা হয়।

গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর কাউন্সিলে আয়োজিত এক কর্মশালায় স্বতন্ত্র তিনটি খসড়া প্রতিবেদন উপস্থাপিত হয়। কর্মশালার সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় সংশোধন সম্পন্ন করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত বছর বোরোর সময়ে ৩৬ টাকা দরে চাল কিনতে চেয়েছিলাম। বাজারে দাম বেশি ছিল। মূলত আগের আমনে গরিব চাষিদের কাছ থেকে ছয় লাখ টন আমন কেনা হয়েছিল। এবার এক টনও কিনতে পারিনি। ৩৬ টাকা দামে কোনো চাষি আমন দেয়নি। এবার আমাদের আমনের দাম ছিল এক হাজার ৪০ টাকা মণ। কিন্তু ময়েশ্চারের ঝামেলা এড়াতে চাষিরা ভালো দামে বাজারে চাল বিক্রি করে দিয়েছে।

মিলার ও পাইকাররা বাজার পরিস্থিতির সুযোগ নিচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকারের কাছে পর্যাপ্ত চাল না থাকায় মিলাররা সুযোগ নিয়েছে। বাজার তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। আমরা চিন্তা করছি, আগামী বোরোতে সংগ্রহ বাড়াব। সরকারের গুদামে চাল না থাকলে কোনোভাবেই দাম নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

আলু ও পেঁয়াজের সঙ্কট নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আলু উৎপাদন কম হয়েছে। চাপ পড়েছে করোনাকালে ত্রাণে আলু বিতরণ ব্যাপকভাবে করায়। তাছাড়া টিসিবির স্টোরেজেও আলু রাখার জায়গা নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ লাখ টন আলু এবার কম উৎপাদন হয়েছে। অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা পেঁয়াজের নতুন জাত উদ্ভাবন করলেও পর্যাপ্ত বীজ পাওয়া যাচ্ছে না। সামার অনিয়নের জাত এলেও পর্যাপ্ত পরিমাণ উঁচু জমি নেই।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/558568/