২৬ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:৫৬

কোভিডের ক্ষতি পোষানো

অতি ধনীদের লাগবে ৯ মাস গরিবদের ১০ বছর

অক্সফামের প্রতিবেদন

করোনা মহামারীর অভিঘাত কাটিয়ে ওঠতে অতি-ধনীদের ৯ মাস সময় লাগলেও দরিদ্রদের অন্তত এক দশক বা ১০ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে বলে উল্লেখ করেছে আন্তর্জাতিক এনজিও অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল।

অক্সফামের প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাবের প্রথম কয়েক মাসে পুঁজিবাজারে ধস নামলেও, সেই অবস্থান পাল্টে বাজারমূল্যায়নের স্ফীতি বেড়েছে নানা দেশে সরকারের দেয়া প্রণোদনার সহায়তায়। ফলে সমাজের সবচেয়ে দুর্বলেরা নন, সঙ্কটকালে আর্থিক সহায়তার বেশির ভাগ গেছে ধনকুবেরদের পকেটে।

মহামারীর প্রথমদিকে বিশ্বজুড়ে দেখা দেয় ব্যবসা-বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা। ফলে অতি-ধনীদের সম্পদও কিছুটা হ্রাস পায়। কিন্তু সে অভিঘাত পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে তাদের সময় লেগেছে মাত্র ৯ মাস। অন্তত, বিশ্বের শীর্ষ এক হাজার বিলিয়নিয়ারের ভাগ্যে অনুকূল এ পরিবর্তন আসে।

কিন্তু দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিতদের ন্যূনতম এক দশক বা তার বেশি সময় লাগবে বলে জানিয়েছে অক্সফাম ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক ‘অসাম্য প্রতিবেদনে এই চিত্র তুলে ধরা হয়।

গত রোববার ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ভার্চুয়াল বৈঠকে বিশ্বের রাজনৈতিক ও আর্থিক খাতের নেতৃত্বের মিলিত হওয়ার আগেই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে উঠে আসে পৃথিবীজুড়ে মহামারী সৃষ্ট চরম দুর্দশা। অক্সফাম বলছে, মহামারী একইসাথে প্রতিটি দেশে চরম মাত্রায় বৈষম্য বাড়িয়ে তুলবে, আর সেটা রেকর্ডকালীন সময়ে নজিরবিহীন ও প্রথম ঘটনা। এ বিষয়ে অক্সফামের নির্বাহী পরিচালক গ্যাব্রিয়েলা বুচার বলেন, ‘রেকর্ড সময়ের পর থেকে বৈষম্যের এমন উত্থান আমরা আর লক্ষ্য করিনি। ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ক্রমেই বেড়ে চলা পার্থক্য প্রাণঘাতী জীবাণুর মতোই মারাত্মক’। তার ভাষায়, ‘অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ত্রুটি সম্পদের রাশি ধনীদের হাতে তুলে দিচ্ছে, মহামারীতেও তারা আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন। অন্য দিকে যারা সম্মুখভাগে জীবন বাঁচাতে লড়ছেন, যারা জীবিকার তাগিদে হলেও সম্মুখভাগের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন এমন; দোকান কর্মচারী, স্বাস্থ্যকর্মী বা বাজারের নিত্যপণ্য বিক্রেতারা দুমুঠো খাবার এবং অন্যান্য খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন।’ করোনায় বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১০ কোটি মানুষ, আর প্রাণ ঝরেছে ২১ লাখের বেশি। এ কারণে, আর্থিক ব্যবস্থার অসাম্যও নতুন করে আলোচনার পাদপ্রদীপে চলে আসে। দেখা যাচ্ছে, জাতি, বর্ণ এবং আয় অনুসারে অভিঘাত কাটিয়ে ওঠার ভিন্নতা। অর্থাৎ প্রকট হয়েছে বৈষম্য।

উদাহরণস্বরূপ, শ্বেতাঙ্গদের মতো মৃত্যুহার থাকলেও ডিসেম্বর নাগাদ বেঁচে থাকতেন ২২ হাজার কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক মার্কিন নাগরিক। লিঙ্গভেদেও আছে প্রকট বৈষম্য। লিঙ্গ সমতার ভিত্তিতে বিশ্ব অর্থনীতির সব খাতে নারী ও পুরুষের প্রতিনিধিত্ব থাকলে; ১১ কোটি ২০ লাখ নারীকে চাকরি বা আয়ের সুযোগ হারাতে হতো না। অক্সফামের নিজস্ব হিসাব অনুসারে, বিশ্বব্যাপী বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ মধ্য মার্চ থেকে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদে তিন লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার বেড়েছে। অথচ, জাতিসঙ্ঘ বিশ্ববিদ্যালয়- ওয়ার্ল্ড ইনস্টিটিউট ফর ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্সের একটি গবেষণায় বলা হচ্ছে, গত বছর বিশ্বে ৫০ কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্র্যের কবলে পড়েছেন। অক্সফাম গবেষণাটির চুম্বক অংশ তাদের নিবন্ধে উল্লেখ করে।

শুধু জাতিসঙ্ঘ নয়, অন্যান্য সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে আসে মহামারীর কারণে দরিদ্রদের সীমাহীন দুর্ভোগ। গেল বছরের অক্টোবরে করা এক গবেষণা সূত্রে বিশ্বব্যাংক জানায়, মহামারীর কারণে ছয় কোটি মানুষ অতি-দারিদ্র্যে পড়তে চলেছেন। অক্সফাম নির্বাহী বুচার বলেন, ক্রমেই বেড়ে চলা এই অসাম্য দূর করতে সরকারগুলোকে সব নাগরিকের টিকাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। থাকতে হবে বেকার হয়ে পড়াদের জন্য প্রকৃত আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ। তার মতে, নাগরিক সেবায় দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করার এটাই সবচেয়ে সঠিক সময়। পাশাপাশি কার্বন নির্গমন কম হয় এমন খাতগুলোতে অর্থ লগ্নির উদ্যোগ থাকলে, লাখ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক নিরাপত্তাসেবা নিশ্চিত করাও সম্ভব হবে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/558344/