২৬ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:৫৫

পাঁচ প্রতিষ্ঠানের ৩৫০ কোটি টাকা লুটপাট

পি কে হালদারের বিরুদ্ধে ৫ মামলা

পাঁচ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লোপাট ও পাচারের ঘটনায় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) তার ৩৩ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় চার প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৩৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

এরমধ্যে আনান কেমিক্যাল লিমিটেডের নামে ৭০.৮২ কোটি টাকা, সুখাদা প্রোপার্টিজ লিমিটেডের নামে ৬৯.৮০ কোটি টাকা, মেসার্স বর্ণের নামে ৬৬.৯ কোটি টাকা, মুন এন্টারপ্রাইজের নামে ৮৩.৮৪ কোটি টাকা, রহমান কেমিক্যালসর নামে ৫৪.৫৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে মামলার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন দুদকের সচিব ড. মুহা: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। তিনি জানান, দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার বাদি হয়ে রোববার চারটি এবং গতকাল সোমবার আরেকটি মামলা দায়ের করেন।

মামলায় পি কে হালদার ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অথ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সাবেক চেয়ারম্যান এম এ হাশেম, সাবেক এমডি মো: রাশেদুল হক, ৯ জন বোর্ড মেম্বার, পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পি কে হালদারের আত্মীয়-স্বজনসহ ৩৩ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে জানান দুদক সচিব। এ ছাড়া পি কে হালদারের সহযোগীদের অর্থ লোপাটের বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অথ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬২ জনের হিসাবে এক হাজার ৫৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা ফ্রিজ অবস্থায় আছে। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অথ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের এমডি, সিএফওসহ ১০ জনের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে ইমিগ্রেশন বিভাগে চিঠি দিয়েছে দুদক।

এ ছাড়া মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেনÑ রাহমান কেমিক্যাল লি:-এর পাঁচ পরিচালক যথাক্রমেÑ অমিতাভ অধিকারী, রাজিব সোম, স্বপন কুমার মিস্ত্রি, কাজী মমরেজ মাহমুদ, শঙ্খ ব্যাপারি (মালিক, মুন এন্টারপ্রাইজ)। আনান কেমিক্যাল লি:-এর পরিচালক যথাক্রমেÑ প্রিতিশ কুমার হালদার, পূর্ণিমা রানী হালদার, রতন কুমার বিশ্বাস, ওমর শরীফ, অভিজিত অধিকারী, (ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সুখাদা প্রোপার্টিজ লিঃ), অনঙ্গ মোহন রায়, (মালিক, মেসার্স বর্ণ)। ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস-এর ১০ পরিচালক যথাক্রমেÑ পাপিয়া ব্যানার্জী, মো: নুরুল আলম, নাসিম আনোয়ার, মো: নুরুজ্জামান, মোহাম্মদ আবুল হাসেম, জহিরুল আলম, মো: আনোয়ারুল কবীর, মো: নওশেরুল ইসলাম, বাসুদেব ব্যানার্জি, মিজানুর রহমান, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের সাবেক এমডি রাশেদুল হক, সাবেক ভারপ্রাপ্ত এমডি সৈয়দ আবেদ হাসান, ভিপি নাহিদা রুনাই, এভিপি আল মামুন সোহাগ, সিনিয়র ম্যানেজার রাফসান রিয়াদ চৌধুরী, মর্জিনা বেগম (পিতা: মো: আবুল বাশার ভূঁইয়া, স্বামী: মো: নাজমুল ইসলাম) ও রফিকুল ইসলাম খান (কোম্পানি সেক্রেটারি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস)।

দুদক সচিব জানান, মামলায় উল্লিখিত আসামিরা দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৪০৯, ৪২০, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ ধারা, ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২), (৩) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করেছে দুদক।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অথ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস লিমিটেডের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং বোর্ডের সদস্যরা ভুয়া ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে টাকা আত্মসাৎ ও মানিলন্ডারিং করেছে, এমন সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে দুদক অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করে।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তারা ভুয়া কাগজ তৈরি করে অর্থ আত্মসাৎ করেছে, সেগুলো হলোÑ আনান কেমিক্যাল লিমিটেড, সুখাদা প্রপার্টিজ লিমিটেড, মেসার্স বর্ণ, রাহমান কেমিক্যালস লিমিটেড এবং মুন এন্টারপ্রাইজ। এই পাঁচটি ঋণ জালিয়াতি ঘটনায় মোট ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং হয়েছে।

আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে বিভিন্ন লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে ওই অর্থ বিভিন্ন কোম্পানি ও ব্যক্তির হিসাবে স্থানান্তর এবং রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে পাচার করেন।

প্রসঙ্গত, বহুল আলোচিত পি কে হালদার পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএলএফএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে বছরের শুরুতেই পি কে হালদার বিদেশে পালিয়ে যান। গত বছর ৮ জানুয়ারি ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ ৫৫ হাজার ২৫৫ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে দুদক মামলা দায়ের করে।

পি কে হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। দুদকের নজরে আসার পর তিনি বিদেশে পালিয়ে যান। মাঝে একবার টাকা ফেরতের শর্তে দেশে ফিরতে চাইলেও দেশে ফিরলে গ্রেফতার হতে হবে হাইকোর্টের এমন আদেশের পর অসুস্থতার কথা বলে আর ফেরেননি তিনি। জানা গেছে, কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি করে রাজকীয় জীবনযাপন করছেন তিনি। গত ৩ ডিসেম্বর পি কে হালদারের কানাডার হোল্ডিংয়ের ঠিকানা বাংলাদেশ সরকারকে জানায় কানাডা সরকার। এরপর তার বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করে ইন্টারপোল।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/558354/