২৪ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার, ১১:৩৪

আতঙ্কে যুক্তরাজ্য প্রবাসীরা আবারও দেশে ফিরছেন

মুহাম্মদ নূরে আলম : গত কয়েক সপ্তাহে ইউরোপীয় দেশগুলোতে আবারও ভয়াবহ আকারে বেড়েছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। এটিকে ওই অঞ্চলে মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কড়া সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। সরকার নির্ধারিত হোটেলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো যাত্রী সংখ্যা সাতশ ছাড়িয়েছে। ২২ জানুয়ারি সকাল ৮টা থেকে ২৩ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২৯টি ফ্লাইটে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সর্বমোট চার হাজার ৮৬৪ জন যাত্রী দেশে ফেরেন। তাদের মধ্যে ৩৮ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। ৩৮ জনের মধ্যে ৩৫ জন যুক্তরাজ্য ফেরত ও অপর তিনজন মেয়াদোত্তীর্ণ করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে আসায় কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। এ নিয়ে গতকাল শনিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত যুক্তরাজ্যফেরত কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো যাত্রী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭১৪ জনে। নতুন ধরনের করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে যুক্তরাজ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করলেও বাংলাদেশের সঙ্গে তা অব্যাহত রয়েছে। প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে দুই সপ্তাহে পাঁচ শতাধিক যুক্তরাজ্য প্রবাসী এসেছেন-যাদের সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য বিভাগের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এদিকে যুক্তরাজ্য ফেরত যাত্রীদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য সিলেট নগরীতে কয়েকটি হোটেল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে যুক্তরাজ্য ফেরত যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতি শীত মৌসুমে যুক্তরাজ্য থেকে বিশেষ করে সিলেট প্রবাসীরা দেশে এসে থাকেন সপরিবারে। এবার শীতে যুক্তরাজ্যে নতুন ধরণের করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে অধিক সংখ্যক যাত্রী দেশে ফিরার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় এবং লন্ডন- সিলেট ফা¬ইট চালু থাকায় সিলেট অঞ্চলের মানুষের মধ্যে নতুন ঐ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় লন্ডন-সিলেট ফ্লাইট বন্ধের দাবি উঠে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাজ্য থেকে ফেরা যাত্রীদের নিজ খরচে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

ওসমানী বিমানবন্দর সূত্রে জানা যায়, সপ্তাহের প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমানের ফ্লাইট আসে। সর্বশেষ গত ২৪ ডিসেম্বর ২০২ জন, ২৮ ডিসেম্বর ২০২ জন এবং ৩১ ডিসেম্বর ২৩৭ যাত্রী নিয়ে বিমানের ৩টি ফ্লাইট ওসমানীতে আসে। এই তিনদিনে ৬৪১ দেশে এসেছেন। গত ডিসেম্বরে সর্বমোট লন্ডন থেকে আটটি ফ্লাইটে এক হাজার ২২৬ যাত্রী সিলেট এসেছেন। সরকারি এই নির্দেশনা ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হয়েছে। ১ লা জানুয়ারির আগে যারা এসেছেন তাদের বেলায় হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-ডব্লিউএইচও আঞ্চলিক পরিচালক হান্স ক্লুজ বলেছেন, ইউরোপে গত মার্চে মহামারি যখন প্রথমবার চূড়ায় উঠেছিল, বর্তমানে সাপ্তাহিক সংক্রমণের ঘটনা সেই সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে। গত সপ্তাহে অঞ্চলটিতে সাপ্তাহিক রোগীর সংখ্যা তিন লাখ ছাড়িয়েছে।

হ্যান্স ক্লুজ বলেন, এই মহামারি আমাদের কাছ থেকে অনেক কিছু কেড়ে নিয়েছে। ইউরোপে করোনায় এ পর্যন্ত প্রায় ৪৯ লাখ মানুষ আক্রান্ত এবং ২ লাখ ২৬ হাজারের বেশি প্রাণহানি হয়েছে। এ বিষয়ে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এটা শুধু গল্পের একটা অংশ মাত্র। আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, জীবিকা ও সমাজের ওপর এর প্রভাব স্মরণীয়।

শাহজালাল বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাদ গণমাধ্যমকে বলেন, নতুন নিয়মে সরকার নির্ধারিত হোটেলে চারদিন কোয়ারেন্টাইনে থাকার পর ইউকে ফেরত যাত্রীদের প্রত্যেকের নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। নেগেটিভ হলে ১০ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে। পজিটিভ হলে সরকারি কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। যাত্রীকে নিজ খরচে চিকিৎসা করাতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, নেগেটিভ পরীক্ষা করে অনেকেই হোম কোয়ারেন্টাইনে যাচ্ছেন। আবার স্বল্প সংখ্যক পজিটিভ হয়ে হসেপাতালে যাচ্ছেন। তবে মোট কত সংখ্যক বাড়ি বা হাসপাতালে গেছেন তার সঠিক সংখ্যা তার জানানেই বলে তিনি জানান।

সিলেট জেলা প্রশাসক এম. কাজী এমদাদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, যুক্তরাজ্য থেকে সিলেট আসা যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টানের জন্য নগরীর হোটেল স্টার প্যাসিফিক ও হোটেল হলি গেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। আরো কয়েকটি হোটেল শিগগিরই চূড়ান্ত করা হবে। তিনি জানান, সব মিলিয়ে ৬০০ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার মতো ব্যবস্থা করা হবে। যুক্তরাজ্য থেকে আসা প্রবাসীরা এসব হোটেলে নিজ খরচে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন।

সূত্র মতে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর যাত্রীদের কোয়ারেন্টিনে রাখার বিষয়ে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগত যাত্রীদের মধ্যে যারা নিজ ব্যয়ে হোটেলে থাকা অপারগ মনে করেন তাদেরকে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন শাহপরাণ মাজার এলাকায় বি আরডিটিআই ক্যাম্পে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে রাখা হবে।

এদিকে সূত্র জানায়, সিলেট বিমানবন্দর থেকে বিটিআরসির বাসে করে যাত্রীদের হোটেলে আনা হবে। যাত্রীরা যাতে হোটেলের বাইরে না আসেন এবং হোটেলে যাতে তাদের স্বজনরা প্রবেশ করতে না করেন, এ জন্য হোটেলগুলোর সামনে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকবে। লন্ডন থেকে প্রতি সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার সরাসরি বিমানের দুটি ফ্লাইট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসে লন্ডন থেকে। এই হিসাবে আগামী সোমবার যেসব যাত্রী লন্ডন থেকে ওসমানীতে আসবেন, তাদের নির্ধারিত হোটেলে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।

সিলেট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (কোভিড-১৯ ও মিডিয়া সেল) শাম্মা লাবিবা অর্ণব গণমাধ্যমকে বলেন, নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনার পর যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের অনেকেই দেশে আসায় ভাটা পড়েছে। আগামী সোমবারের ফ্লাইটে সিলেটের ৬৯ জন যাত্রী রয়েছেন বলে তারা জানতে পেরেছেন। পরবর্তী ফ্লাইটগুলো যাত্রী আরও কমতে পারে বলেও কর্মকর্তারা ধরানা করছেন।

করোনা ভাইরাসের নতুন ধরনের (স্ট্রেইন) সংক্রমণের কারণে যুক্তরাজ্যের সাথে বিমান যোগাযোগ নিয়ে ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। ঝুঁকি কমাতে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে আসা যাত্রীদের নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকার বিষয়ে গত ২৮ ডিসেম্বর মন্ত্রীপরিষদের বৈঠকে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যাত্রী সংখ্যা বাড়লে হোটেলের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে জানান শাম্মা লাবিবা অর্ণব।

https://dailysangram.com/post/441546