২৩ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ২:৪৭

বিদেশগামী ৮৪৩৮ জনের করোনা শনাক্ত

বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ার আগেই কুয়েত থেকে ছুটিতে এসেছিলেন প্রবাসী সারিজ মিয়া (৪৪)। ছুটি শেষ হলেও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়াসহ আরো কিছু সমস্যায় তিনি আর কুয়েত যেতে পারেননি। ৮ই ডিসেম্বর তিনি কুয়েত যাওয়ার উদ্দেশ্যে নেগেটিভ সনদ নিতে করোনা পরীক্ষা করান ঢাকার মহাখালীর ডিএনসিসি মার্কেটে। কিন্তু শারীরিক কোনো সমস্যা না থাকা সত্ত্বেও সারিজ মিয়ার করোনা পজেটিভ ফল আসে। শুধু সারিজ মিয়া নন ইতালি যাবার উদ্দেশ্যে সিলেটে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের অধীনে অক্টোবর মাসে করোনা পরীক্ষা করান মারুফ আহমেদ নামের আরেক প্রবাসী। সুস্থ মারুফ আহমেদেরও করোনা পজেটিভ ফল আসে।

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মহামারি আকারে ধারণ করলে ২১শে মার্চ থেকে গোটা দুনিয়ার সঙ্গে সব ধরনের ফ্লাইট বন্ধ করে দেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আড়াই মাস পরে ১৫ই জুন থেকে সীমিত পরিসরে যুক্তরাজ্য, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতারসহ বেশকিছু দেশের সঙ্গে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চালুর অনুমতি দেয় বেবিচক।

কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যাওয়া জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও চীনগামী যাত্রীদের করোনা শনাক্ত ও জাল সনদ থাকায় নিষেধাজ্ঞা দেয় সংশ্লিষ্ট দেশগুলো। পরে ২৩শে জুলাই থেকে বাধ্যতামূলক করা হয়- বিদেশগামী যাত্রীদের অবশ্যই করোনা নেগেটিভ সনদ সঙ্গে থাকতে হবে। না হলে ফ্লাইটে ওঠার অনুমতি মিলবে না। এরপর থেকেই বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা শুরু হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৮ই জুলাই বেবিচকের এক নির্দেশনায় বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা সনদ বাধ্যতামূলক করার পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ১৬টি কেন্দ্র নির্ধারণ করে দেয়। এরপর থেকে পরবর্তী ৬ মাসে সারা দেশে ৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮৩ জন যাত্রী করোনা পরীক্ষা করিয়েছেন। এরমধ্যে এ পর্যন্ত করোনা পজেটিভ হয়েছেন ৮ হাজার ৪৩৮ জন যাত্রী। যা শতকরা হিসাবে ১.৪৩ শতাংশ। বিদেশগামী যাত্রীরা কোনোরকম উপসর্গ ছাড়াই পরীক্ষা করিয়েছিলেন। অথচ তাদেরও পজেটিভ রেজাল্ট এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা বিদেশগামী যাত্রী তারা সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পরীক্ষা করাচ্ছেন অথচ তাদের পজেটিভ ফল আসছে। এবং এই সংখ্যাটা নেহায়ত কম নয়।

বাংলাদেশের করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির পূর্বাভাস বিষয়ক বিশেষজ্ঞ দলের প্রতিনিধি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ড. শাফিউন শিমুল মানবজমিনকে বলেন, বিদেশগামী যাত্রীদের ক্ষেত্রে যদি এই হিসাবটা আসে তবে কিছুটা ভয়ের কারণ হতে পারে। এটা অ্যালার্মিং। কারণ তারা সুস্থ অবস্থায় কোনোরকম উপসর্গ ছাড়া পরীক্ষা করাচ্ছেন। হিসাবটা যাই হোক, প্রতিদিন কতজন পরীক্ষা করাচ্ছেন আর পজেটিভ ফল আসছে সেটি জানা যেতো তাহলে বাস্তব পরিস্থিতি উঠে আসতো। তবে বিষয়টা সহজভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। কারণ বিদেশগামী যাত্রীদের বাইরে আরো অনেক মানুষ আছেন যাদেরকে পরীক্ষা করালে পজেটিভ ফল আসবে। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিদিনের পরীক্ষা ও শনাক্তের হিসাব থেকে বাস্তবতা বোঝা যাচ্ছে না- প্রকৃতপক্ষে কত মানুষ আক্রান্ত। পরীক্ষা বাড়ালে শনাক্তও বাড়বে। কিন্তু মানুষ খুব সিরিয়াস পর্যায়ে না গেলে বর্তমানে পরীক্ষা করায় না। আমি নিজে অনেক করোনা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা জানিয়েছেন রোগীরা এখন কম আসে।

এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সরকারিভাবে দেশের ১৫টি সিভিল সার্জন অফিসের অধীনে বিদেশগামী যাত্রীদের করোনা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, কুষ্টিয়া, ময়মনসিংহ, বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট ও নোয়াখালী সিভিল সার্জন অফিস। এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে প্রতিদিন সাড়ে তিন হাজার করে নমুনা সংগ্রহ করছে। তারমধ্যে ২১শে জানুয়ারি সংগ্রহ করা হয়েছে ৩ হাজার ৭৯২ জনের। ২০শে জানুয়ারি ৪ হাজার ২৮৫, ১৯শে জানুয়ারি ৩ হাজার ৩৪৫, ১৮ই জানুয়ারি ৩ হাজার ৪৪৮, ১৭ই জুলাই ৩ হাজার ৬২১, ১৬ই জানুয়ারি ৩ হাজার ৬৩৩, ১৫ই জানুয়ারি ২ হাজার ৮০৭ জনের। এর বাইরে বেসরকারিভাবে আরো ৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে নুমনা গ্রহণ ও সনদ প্রদানের অনুমতি দেয়া হয়েছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বেনজীর আহমেদ মানবজমিনকে বলেন, কমবয়সী ও অন্যান্য জটিল রোগ নেই এমন ব্যক্তিদের মধ্যে উপসর্গহীন পজেটিভ কেইস পাওয়া যায়। ৫ লাখে ৮ হাজার পজেটিভ ফল আসা অস্বাভাবিক কিছু না। কারণ আমাদের কোনো কোনো স্টাডিতে আছে শতকরা ২৬ জন উপসর্গহীন ব্যক্তি শনাক্ত হতে পারেন। এটা অনেক দেশেই আছে। তিনি বলেন, উপসর্গহীন ব্যক্তিরা শনাক্ত হওয়াটা একটা সমস্যা। কারণ তাদের মাধ্যমে অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়ায়। যদিও এ হার একটু কম। যাদের উপসর্গ থাকে তারা বেশি ছড়ায় আর না থাকলে কম ছড়ায়। যেহেতু তাদের উপসর্গ নেই সেজন্য তারা স্বাভাবিক জীবনযাপন করবে, বাজার হাটে যাবে এবং মানুষের সংস্পর্শে আসবে। এতে করে অন্যরা আক্রান্ত হবেন।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=259863&cat=2