২১ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৩:৩৫

করোনার টিকা বণ্টনে বৈষম্য অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির শঙ্কা

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : মহামারির বৈশ্বিক সংকটের শুরু থেকেই বহুল আকাক্সিক্ষত করোনা ভ্যাকসিনকে ঘিরে বিশ্ববাসীর আগ্রহের কমতি নেই। গোটা বিশ্ব যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মুহ্যমান, তখন স্বাভাবিকভাবেই ভ্যাকসিনকেন্দ্রিক উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। এ থেকে বাদ যায়নি বাংলাদেশও। বিশেষজ্ঞদের দাবি, করোনার ঢেউয়ে মৃত্যুর মিছিল থামাতে বিকল্প নেই ভ্যাকসিনের। করোনা ঝুঁকিতে থাকা জনবহুল বাংলাদেশের পক্ষে মহামারির ধাক্কা মোকাবিলায় ভ্যাকসিন হাতে পাওয়াই শেষ কথা নয়। অব্যবস্থাপনা বা দুর্নীতির কবলে পড়ে বাংলাদেশ হাতে পেয়েও বঞ্চিত হতে পারে ভ্যাকসিনের সুফল থেকে, বিফলে যেতে পারে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ। তাই ভ্যাকসিনকে ঘিরে আশার পাশাপাশি উদ্বেগও কম নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনায় সব সময় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণহীন দুর্নীতি-লুটপাট। তার জেরেই জনসাধারণের মধ্যে দানা বেঁধেছে করোনার টিকা বণ্টনে বৈষম্য বা দুর্নীতিজনিত অব্যবস্থাপনার শঙ্কা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আমদানিতে সরকার ‘মধ্যস্বত্বভোগী’ নিয়োগ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, ভ্যাকসিনটা হচ্ছে জীবন রক্ষা করার একট বিষয়। এটা একটা অগ্রাধিকার। সেই ভ্যাকসিন নিয়েও তারা দুর্নীতি করছে যেটা আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখছি। মির্জা ফখরুল বলেন, ভ্যাকসিন সরকার সরাসরি না কিনে মধ্যস্বত্বভোগী নিয়োগ দিয়েছে দুর্নীতির জন্যে। এর মাধ্যমে জনগণের অর্থ নয়-ছয় করে দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারি সুবিধাভোগী পদবীধারী মধ্য স্বত্বভোগী নিয়োগ নিয়ে নীতিগতভাবেই শুধু নয়, আইনগতভাবেও অপরাধমূলক একটা কাজ হয়েছে। সরকারের লাভজনক পদে নিয়োগকৃত কোন ব্যক্তি যিনি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তা তার এই (ভ্যাকসিন ক্রয়) সম্পৃক্ততা বে আইনি ও অপরাধমূলক। মির্জা ফখরুল আরো বলেন, মানুষের জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিন আমদানি প্রক্রিয়ায় অস্পষ্টতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির ফলে জনগনের এই টীকা প্রাপ্তি অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। ভ্যাকসিন করে আসবে- এটা নিয়ে গোটা জাতির সঙ্গে আমরাও চরমভাবে উদ্বিগ্ন। এখন পর্যন্ত তারা (সরকার) কোনো সুনির্দিষ্ট সময়ও নির্ধারণ করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত ভারত থেকে যে করা হবে তারও কোনো নিশ্চয়তা এখন পর্যন্ত আমরা পাইনি। কারণ ভারতের হাই কমিশনার বলেছেন, ভারতের চাহিদা মেটানো হবে তারপরে তারা নির্ধারণ করবেন। তাদের পররাষ্ট্র সচিবও একই কথা বলছেন।

এদিকে করোনার ভুয়া ভ্যাকসিন নিয়েও আলোচনা চলছে। বিশ্বের অনেক দেশেই কোভিড ভ্যাকসিন বাজারে এসে গেছে। তারই সঙ্গে বেড়েছে আশঙ্কা, ভুয়া ভ্যাকসিন চক্র কোভিডের ভ্যাকসিন জাল করছে না তো! আমেরিকা এবং ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে করোনার টিকাকরণ শুরু হয়েছে। এই সুযোগই ব্যবহার করে মানুষের ক্ষতি করতে পারে অপরাধীরা। সতর্ক করল ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্রাইম এজেন্সি ইউরোপোল। তারা জানিয়েছে, ভুয়া ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়তে পারে অপরাধীরা। সম্প্রতি তারা একটি অনলাইন বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, অনলাইনে চোরাই ভ্যাকসিন বিক্রি করার চেষ্টা হতে পারে। সকলে যেন সতর্ক থাকেন। ইউরোপোলের মুখপাত্র জ্যান ওপ জেন উর্থ ডিডাব্লিউকে বলেছেন, যত দিন যাবে, বাজারে ভ্যাকসিনের চাহিদা তত বাড়বে। আর তারই সুযোগ নেবে চোরাকারবারিরা। কালো-বাজারে তো বটেই, সাধারণ বাজারেও চোরাই ভ্যাকসিন চলে আসার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। ওই ভ্যাকসিন ভুল ভাবে তৈরি। ব্যবহারের যোগ্য নয়। চোরাকারবারিরা সেই ভ্যাকসিনই বেচার চেষ্টা করবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা পারনেট বউরডিলোন ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ভুয়া ওষুধ বিক্রির একটা চক্র তৈরি হয়েছে। অসংখ্য ওয়েবসাইটে এ সব ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এই ওষুধগুলি কোনোরকম কাজ করে না। তবে কখনো কখনো এগুলি বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। ভুয়া ওষুধ খেয়ে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রশান্ত যাদব ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, খারাপ ভ্যাকসিন অথবা ভুয়া ভ্যাকসিন যে কোনো সময় সাপ্লাই চেনে ঢুকে পড়তে পারে। ভ্যাকসিন যখন এক দেশ থেকে অন্য দেশে ফ্লাইটে অথবা জাহাজে পাঠানো হচ্ছে তখন থেকে তার মধ্যে ভুয়া ভ্যাকসিন মিশিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেই ভ্যাকসিন যখন অন্য দেশে পৌঁছায় এবং দিকে দিকে বিলি করা হয়, এমনকী, ভ্যাকসিন ক্লিনিকে পৌঁছানোর পরেও ভুয়া ভ্যাকসিন তার মধ্যে মিশিয়া দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে ভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্যাকসিন পাঠানো হয়, তাতে এ কাজ করা খুব কঠিন কিছু নয়। কোভিড ভ্যাকসিনের চাহিদা যেহেতু বেশি, সেখানে ভুয়া ভ্যাকসিন মিশিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। যত বেশি জায়গায় ভ্যাকসিন স্টোর করা হবে, ভুয়া ভ্যাকসিন মিশে যাওয়ার সম্ভাবনাও তত বাড়বে বলে মনে করেন যাদব। যাদবের মতে, ভুয়া ভ্যাকসিন মিশিয়ে দিলে তা ধরা পড়াও খুব কঠিন। যাদবের মতে, বিভিন্ন মানুষের উপর ভ্যাকসিন সরবরাহের দায়িত্ব থাকে। ফলে সহজেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়াও সম্ভব। যিনি ভ্যাকসিন ফ্লাইটে তুললেন আর যিনি নামালেন তাঁরা দুজনেই মধ্যবর্তী সময়ে ভ্যাকসিনের বাক্সে ভুয়া ভ্যাকসিন মিশিয়ে দেওয়ার দায় এড়িয়ে যেতে পারেন। সাধারণত, যে সংস্থা ভ্যাকসিন বানাচ্ছে, দায় তাদের। সরকারের হাতে ভ্যাকসিন পৌঁছানো পর্যন্ত দায়িত্ব সংস্থার থাকে। ডেলিভারি হয়ে গেলে দায়িত্ব সরকারের। ফলে মধ্যবর্তী সময়ে ভুয়া ভ্যাকসিন মিশিয়ে দিলেও কারো কিছু বলার থাকে না।

সূত্র মতে, দ্বিতীয় দফায় শুরু হওয়া করোনা তাণ্ডবে কিছুটা আশা জাগিয়েছে এ ভ্যাকসিনের খবর। স্বতন্ত্র গবেষণায় টিকা তৈরির সক্ষমতা না থাকায় উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে ভ্যাকসিন চুক্তি প্রণয়নে বেশ দৌড়ঝাঁপ করতে হয়েছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে। সে দৌড়ে বাংলাদেশের অগ্রগামিতায় স্বস্তি মিলেছে জনমনে। ভ্যাকসিন উদ্ভাবনের পরই তা দ্রুততার সঙ্গে হাতে পাওয়ার প্রতিযোগিতায় বেশ তৎপরতা দেখিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। ব্রিটেনে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের অনুমোদন মেলার পর থেকে বাংলাদেশের টিকা পাওয়ার আশা জোরদার হলেও কিঞ্চিৎ অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি হওয়া এ ভ্যাকসিনের ওপর বাণিজ্যিক রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার জেরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ভারতের এ নয়া শর্তের জটিলতায় ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার অপেক্ষা আরও দীর্ঘ হতে পারে। যদিও স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, চলতি মাসের ২৫ অথবা ২৬ তারিখের মধ্যে ভ্যাকসিন দেশে আসবে। এর আগে কিছু উপহার হিসেবেও আসতে পারে। ভারতের ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৫০ লাখ করে ছয় ধাপে মোট ৩ কোটি ভ্যাকসিন পাওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। চুক্তিমাফিক বাংলাদেশকে গুনতে হয়েছে অগ্রিম ৬০০ কোটিরও বেশি টাকা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা ঝুঁকিতে থাকা জনবহুল বাংলাদেশের পক্ষে মহামারির ধাক্কা মোকাবিলায় ভ্যাকসিন হাতে পাওয়াই শেষ কথা নয়। অব্যবস্থাপনা বা দুর্নীতির কবলে পড়ে বাংলাদেশ হাতে পেয়েও বঞ্চিত হতে পারে ভ্যাকসিনের সুফল থেকে, বিফলে যেতে পারে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ। তাই ভ্যাকসিনকে ঘিরে আশার পাশাপাশি উদ্বেগও কম নয়। দেশের স্বাস্থ্য খাতের অব্যবস্থাপনায় সব সময় মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিয়ন্ত্রণহীন দুর্নীতি। তার জেরেই জনসাধারণের মধ্যে দানা বেঁধেছে করোনার টিকা বণ্টনে বৈষম্য বা দুর্নীতিজনিত অব্যবস্থাপনার শঙ্কা। অভিজ্ঞতার আলোকে এ শঙ্কা নাকচ করতে নারাজ অভিজ্ঞমহল। খোদ যুক্তরাষ্ট্রের মতো তথাকথিত সভ্য দেশই যেখানে করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ এড়াতে পারেনি সেখানে পাকাপোক্তভাবে দুর্নীতিগ্রস্তদের তালিকাভুক্ত বাংলাদেশে ‘ভ্যাকসিন-দুর্নীতি’ কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়াতে পারে, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার চেয়ে এর সুষ্ঠু বণ্টন ও টিকাদান কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্নকরণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের জন্য। তারা বলছেন, নয়া এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মাধ্যমে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম ফলপ্রসূ করতে প্রয়োজন সরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ, দরকার নিয়মতান্ত্রিক নীতিমালাও।
সংশ্লিষ্টরা বরছেন, ভ্যাকসিন বণ্টনের ক্ষেত্রে টিকা প্রাপ্তির অগ্রাধিকার ও অগ্রগণ্যতার ভিত্তিতে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডভিত্তিক তালিকা প্রণয়ন করা সম্ভব হলে তা টিকার সুষ্ঠুু বণ্টন অনেকাংশে ত্বরান্বিত করবে। কঠোর নজরদারি নিশ্চিতের মাধ্যমে বণ্টনে স্বচ্ছতা আনয়ন করা যেতে পারে। এতে সর্বসাধারণের অধিকার নিশ্চিত হবে, দূর হবে বৈষম্য। ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে টিকা প্রাপ্তির প্রবণতা দূরীকরণে প্রশাসনকে তৎপর ভূমিকা পালন করতে হবে। সব স্তরে ক্ষমতার অপব্যবহার রুখতে পারলেই তবেই মসৃণ হবে বৈষম্যহীন ভ্যাকসিন বণ্টনের পথ। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে প্রস্তুতকৃত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন বাংলাদেশিদের হাতে পাওয়ার কথা রয়েছে দেশের ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস-এর মাধ্যমে। কোনো কারণে যাতে ভ্যাকসিনের সহজলভ্যতা বিঘ্নিত না হয়, সে লক্ষ্যে নিবিড় পর্যবেক্ষণ জোরদার করা সময়ের দাবি। অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক নকল করোনা টিকা বাজারজাতকরণের আশঙ্কা দেখছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকে, যা দেশব্যাপী ভয়াবহ রকম স্বাস্থ্য সংকটের জন্ম দিতে পারে। এহেন অনাকাক্সিক্ষত যে কোনো ঘটনা শক্তহাতে দমন করা বাঞ্ছনীয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, করোনার ভ্যাকসিন ক্রয়ে যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির কথা বলা হয়েছে, তাতে বেক্সিমকো কী করে ঢুকে পড়ল? যদি কোনো ওষুধ কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, আর অন্য কোনো ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানির সঙ্গে সরকার আলোচনা করেছিল কি না। এসব ছাড়াও আরও যে প্রশ্ন জনগণকে ভাবিয়ে তুলেছে তা হলো, ২ ডলারের টিকার জন্য আমাদের সেটা সোয়া ৫ ডলারে কিনতে হবে। ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্যের মাঝে যে ব্যবধান তা কার বা কাদের হাতে যাচ্ছে? দেশবাসীকে পরিষ্কারভাবে হিসাব-নিকাশটা খুলে বলা কি উচিত নয়?

এদিকে ভারত থেকে কবে করোনার টিকা আসছে তা নিয়ে এক ধরনের ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। টিকা আসার তারিখ নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের দুই ধরনের বক্তব্যে এই ধন্দের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরে মন্ত্রী ও ডিজি দুই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। সকালে স্বাস্থ্যের ডিজি অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের জানান, বৈশ্বিক মহামারীতে প্রতিবেশী দেশের প্রতি চিকিৎসা সহায়তা হিসেবে ভারত করোনাভাইরাসের যে ২০ লাখ ডোজ টিকা পাঠাচ্ছে, তা বুধবারই বাংলাদেশে পৌঁছাবে। দুপুরে স্বাস্থ্য অধিদফতরেই সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ফ্লাইট শিডিউল অনুযায়ী ভারত থেকে বাংলাদেশে টিকা আসবে। সেটি আগামীকালও হতে পারে, পরের দিনও হতে পারে। ফ্লাইট শিডিউল এখনও জানা যায়নি।

বিশেষজ্ঞদের মতে কেবল ভ্যাকসিন কিনতে পারলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না। এর পরের ধাপ, অর্থাৎ ভ্যাকসিনেশনটাও সম্পন্ন করতে হবে সুচারুভাবে। একটি ভ্যাকসিন নেওয়ার নির্দিষ্ট সময় পর নিতে হবে আরও একটি ডোজ। দ্বিতীয় ডোজটি সবাই ঠিকঠাক মত নিতে পারবে কি-না, কিংবা নেওয়ার পরিবেশ ও সুযোগ সে পাবে কি-না, সেসবও দেখতে হবে। তারপর রয়েছে ভ্যাকসিনের মেয়াদ সংক্রান্ত প্রশ্ন। কতদিন থাকবে এর মেয়াদ, অর্থাৎ শরীরে প্রবেশের পর কতদিন এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সক্ষম থাকবে- এ বিষয়েও নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। তবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে আলোচিত বেশিরভাগ ভ্যাকসিনের মেয়াদ হবে ছয় মাস। সেক্ষেত্রে একবার ভ্যাকসিনেট করার ছয়মাস পর কি আবার সেই প্রথম ধাপের ব্যক্তিদেরকেই ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, নাকি নতুন কিছু মানুষকে দেওয়া হবে? নতুনদেরকে দেওয়া হলে পুরানোরা আবার কি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে না? এ জটিলতা থেকে আমাদের তখনই কেবল মুক্তি পাওয়া সম্ভব হবে, যখন আমরা একবারে দেশের আশি শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনেট করতে পারব। ফলে আমাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে সবচেয়ে জরুরি প্রশ্ন এখন- দেশের আশি শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে আমাদের কত বছর সময় লাগবে? অথবা আদৌ কি সেটা সম্ভব হবে আমাদের সরকারের পক্ষে?

https://dailysangram.com/post/441206