২০ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১১:৫৫

বিমানবন্দর সড়ক যেন মরণফাঁদ

নিষ্ক্রিয় ট্রাফিক পুলিশ স্বামী-স্ত্রীকে চাপা দেয়া বাসচালক গ্রেফতার ঘাতক বাসচালকের উপযুক্ত লাইসেন্স নেই

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে বেপরোয়া যানবাহন চালকরা। ওই সড়কে বার বার দুর্ঘটনায় সাধারণ মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও নিস্ক্রিয় ট্রাফিক পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে দ্রæত গতিতে গাড়ি চালানো এবং ট্রাফিক পুলিশের মনিটরিংয়ের অভাবে বিমানবন্দর সড়কে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। সর্বশেষ গত সোমবার সকালে বিমানবন্দর সড়কে যাত্রীবাহী বাসের চাপায় মোটরসাইকেল আরোহী স্বামী আকাশ ইকবাল (৩৩) ও স্ত্রী মায়া হাজারিকা (২৫) নিহত হন। এ ঘটনায় আজমেরী পরিবহনের চালক তসিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। গতকাল ভোরে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদিকে সাধারণত বাস ও ট্রাকচালকদের পেশাদার ও ভারি যান চালানোর লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। অথচ হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে বাস চালাচ্ছিলেন রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে স্বামী-স্ত্রীকে চাপা দেয়া বাসচালক তসিকুল ইসলাম (২৮)। এর আগে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষিতে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়। এ ঘটনায় আহত হয় আরও অন্তত ১২ জন। এ মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার পর রাজধানীতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেন। এ সময় লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো এবং ফিটনেস বিহীন যানবাহন রাজপথে চলার বিষয়টি সকলের নজড়ে আসে ব্যাপকভাবে। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীর বিক্ষোভের মুখে বেশ কিছু পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিন বিমানবন্দর সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন পরিবহনের বাস যাত্রী উঠানোর প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত সড়কের মাঝ রাস্তায় বাস থামিয়ে যাত্রী তুলছে। এ সময় অপর একটি বাস ওই বাসটির সামনে গিয়ে রাস্তা অবরোধ করে যাত্রী তুলার চেষ্টা করছে। এতে করে পেছনের যানবাহন আটকে যাচ্ছে এবং একই সাথে তৈরি হচ্ছে যানজট।

বিমানবন্দর গোলচত্বরে কথা হয় ব্যবসায়ী আমিনুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, ঢাকা শহরের অন্যান্য রাস্তার চেয়ে এই রাস্তাটি অনেক বেশি বড়। ঢাকা থেকে বের হয়ে বা উত্তরার দিক থেকে এসে গাড়ি চালকরা বেপরোয়া হয়ে যায় কে আগে যাবে সেই প্রতিযোগিতায়। একই সাথে সাধারণ যাত্রী পরিবহনকারী বাসগুলো রাস্তা দখল করে যাত্রী উঠা-নামা করে। একই সাথে কার আগে কে যাত্রী উঠাবে তা নিয়ে বাস চালকদের প্রতিযোগিতা চলে।

তিনি অভিযোগ করেন যে, ব্যস্ত এই সড়কে বাস চালকসহ অন্যান্য যানবহন চালকরা রাস্তা দখল করে গাড়ি থামালেও ট্রাফিক পুলিশের কোন উদ্যোগ নেই। বনানী থেকে বিমান বন্দর থেকে উত্তরা পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ নিস্ক্রিয় থাকেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বিমানবন্দর ট্রাফিক পুলিশের এসি এস এম আশিকুর রহমান গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, ঢাকার মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ত সড়ক এটি। ঢাকার অন্যান্য রাস্তা ২ লেন হলেও বিমানবন্দর সড়কটি ৪ লেনের। ঢাকা থেকে বের হয়ে কাকলি পার হয়ে বড় রাস্তা পেয়ে যানবাহন চালকরা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালান এ জন্য দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া যারা মোটরসাইকেল চালান তাদের হেলমেট থাকে নিম্নমানের। দুর্ঘটনার পর হেলমেট থাকলে যে সুরক্ষা পাওয়ার কথা সেটি পাওয়া যায় না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ট্টাফিক পুলিশ যানবাহন চালকের সর্তক করা এবং ব্যস্ত সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে সব সময় কাজ করে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা কমাতে হলে যানবাহন চালক ও সাধারন মানুষের সর্তক হওয়ার কোন বিকল্প নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাসচালক গ্রেফতারঃ সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) জিসানুল হক জিসান জানান, নিজস্ব গোয়েন্দাদের তথ্য, প্রথাগত ও প্রযুক্তিগত তদন্তের ভিত্তিতে অবস্থান শনাক্ত করে চালককে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চালক তসিকুল ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। তাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গতকাল ভোরে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গাড়ি চালানোর সময় সে মাদকাসক্ত ছিল কিনা তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তবে বাসের হেলপার ও কন্ডাক্টার পলাতক রয়েছেন, তাদেরকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ঘাতক বাসচালকের উপযুক্ত লাইসেন্স নেইঃ সাধারণত বাস ও ট্রাকচালকদের পেশাদার ও ভারি যান চালানোর লাইসেন্সের প্রয়োজন হয়। অথচ হালকা যানবাহন চালানোর লাইসেন্স নিয়েই দীর্ঘদিন ধরে বাস চালাচ্ছিলেন বাসচালক তসিকুল ইসলাম (২৮)। তসিকুল ইসলাম নিজেই তার উপযুক্ত লাইসেন্স না থাকার বিষয়টি গ্রেফতারের পর গতকাল সিআইডি কর্মকর্তাদের জানান। সিআইডির কর্মকর্তারা বলছেন, জিজ্ঞাসাবাদে চালক দাবি করে, মোটরসাইকেলটি হঠাৎ তার সামনে চলে আসে, কুয়াশার কারণে তিনি মোটরসাইকেলটি দেখতে না পারায় চাপা পড়ে যায়। পলাতক বাসের হেলপার ও কন্ডাক্টারকে ধরতে অভিযান চলছে।

এ বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক জানান, এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়েছে। থানা পুলিশ এই মামলার তদন্ত করছে পাশাপাশি সিআইডিও ছায়া তদন্ত করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চালক গ্রেফতার করা হয়। তার হালকা যান চালানোর লাইসেন্স আছে। ১০ বছর ধরে এই লাইসেন্স দিয়েই তিনি গাড়ি চালাচ্ছেন।

https://www.dailyinqilab.com/article/351537