২০ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১১:৩৮

হঠাৎ আইসিইউতে বেড়েছে রোগী

হঠাৎ করে বেড়ে গেছে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর আইসিইউতে রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বাইরে দেশের অন্যান্য হাসপাতালে গত কয়েক দিন রোগী বেড়েছে কয়েকগুণ। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আইসিইউতে হঠাৎ রোগী বাড়ার কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া গতকাল মানবজমিনকে বলেন, যারা কোমরবিডিটি (আগে থেকে একাধিক জটিল রোগে) ভুগছেন এবং করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তারাই বেশি আইসিইউতে ভর্তি হচ্ছেন। বয়স্করা আসছেন বেশি। এ ছাড়া এখন একটু শীত বাড়ছে, এটাও কারণ। ফলে রোগীরা বাসায় না থেকে আসছেন হাসপাতালে। অর্থাৎ সবমিলে আগের চেয়ে রোগী আইসিইউতে বেশি ভর্তি হচ্ছেন।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তির তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর বাইরে দেশের অন্যান্য কোভিড হাসপাতালে ২৪৩টি আইসিইউ’র মধ্যে ভর্তি আছেন ৯০ জন।

আগের দিন রোগী ভর্তি ছিল ১৫৮ জন। তার আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৫৫ জন। ১৬ই জানুয়ারি ছিল ৫০ জন। দীর্ঘদিন ধরে এসব আইসিইউতে ৫০-এর কাছাকাছি রোগী ভর্তি ছিল। এদিন ঢাকা মহানগরীর কোভিড হাসপাতালগুলোতে ৩১০টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ভর্তি আছেন ১৪৪ জন। আগের দিন ছিল ১৪৯ জন। তার আগের দিন ভর্তি ছিল ১৩৭ জন। চট্টগ্রাম মহানগর হাসপাতালগুলোর ৪৫টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ভর্তি আছেন ২৩ জন। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ২১ জন। মঙ্গলবার সারা দেশের কোভিড হাসপাতালগুলোর সাধারণ বেডে রোগীর সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে ৩৩ জন। অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, সারা দেশে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ১০ হাজার ৩৮১টি সাধারণ বেডের মধ্যে রোগী ভর্তি আছেন ১ হাজার ৮৮০টিতে। ৫৯৮টি আইসিইউ’র মধ্যে ভর্তি আছেন ২৫৭ জন।

দেশে খ্যাতিমান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এবং ইউজিসি অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, এর মূল কারণটা হলো অনেক রোগী সময় মতো হাসপাতালে আসে না। বেশির ভাগই ঘরে বসে চিকিৎসা নেয়। বেশি বেশি পর্যবেক্ষণ করে। ফলে প্রায়ই দেখা যায় রোগী খুব সিরিয়াস হয়ে হাসপাতালে আসছে। এরকম কিছু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আইসিইউতে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে এটা ঠিক। যদিও সংখ্যাটা ওঠানামা করছে। যারা একটু বয়স্ক। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার, কিডনি আক্রান্ত, অ্যাজমা ও স্ট্রোকের রোগীসহ অন্যান্য রোগে যারা ভোগেন তাদের সমস্যাটা বেশি হচ্ছে। এ জন্য যারা এই ধরনের রোগে বিশেষ করে পুরনো রোগে ভুগেন তাদেরকে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে আগে থেকেই যোগাযোগ করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই ভালো। অন্যথায়, যখন রোগীর অবস্থা গুরুতর হয় তখন রোগীকে আইসিইউতে নেয়া ছাড়া উপায় থাকে না। এ জন্য এই সমস্যাটা দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের রোগী আগের থেকে হাসপাতালে ভর্তি হলে তাহলে তাদের আইসিইউতে যাওয়া লাগে না। দ্রুত চিকিৎসা হলে ভালো হয়ে যাবে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরামর্শক এবং সংস্থাটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এটা যদি ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকে তাহলে হয়তো বলা যাবে সংক্রমণটা বাড়ছে। বা সংক্রমিত যারা হচ্ছে তাদের মধ্যে সিরিয়াস রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, কোনো রকম উপসর্গ ছাড়াই তারা ফুসফুস আক্রান্ত হচ্ছে। অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে যাচ্ছে। এখন যারাই ভর্তি হচ্ছেন তারা অধিকাংশই আইসিইউতে চলে যাচ্ছেন এই কারণে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ালো ৭ হাজার ৯৪২ জনে। নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ৭০২ জন। এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন ৫ লাখ ২৯ হাজার ৩১ জন। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ হাজার ৫৭৪টি। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৫ হাজার ৯৭টি। এ পর্যন্ত মোট ৩৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৫৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৬৮২ জন, এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫৫ জন। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত ১৫ দশমিক ১৮ শতাংশ শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং মারা গেছেন ১ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারী ২০ জনের মধ্যে ১৪ জন পুরুষ এবং ৬ জন নারী। এ পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ১৮ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৯২৪ জন নারী মৃত্যুবরণ করেছেন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬০ বছরের উপরে ১৫ জন এবং ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রামে ৬ জন, রাজশাহীতে ২ জন ও খুলনায় ১ জন মারা গেছেন। ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৮ জন এবং ২ জন বাসায়।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=259390&cat=2