২০ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১১:৩০

ব্রিটেন ফেরতদের মাধ্যমে করোনার নতুন স্ট্রেইন ছড়ানোর আশঙ্কা

ব্রিটেনফেরত বিমানযাত্রীদের মাধ্যমে করোনার নতুন স্ট্রেইন বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কোভিড-১৯ জাতীয় পরামর্শ কমিটির সদস্যরা অন্তত তাই মনে করেন। ব্রিটেন থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনার নতুন স্ট্রেইনকে থামাতে হলে সে দেশ থেকে আসা বিমান যাত্রীদের শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই পুনরায় ১৪ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখার পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। গত সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত পরামর্শক কমিটির সভায় ব্রিটেন থেকে আসা যাত্রীদের কোয়ারেন্টিন চার দিনের পরিবর্তে ১৪ দিন করার পরামর্শ দিয়েছে এ কমিটি। সভায় সভাপতিত্ব করেন এ কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা: মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। পরামর্শক কমিটি স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: এ বি এম খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: মহিবুর রহমান, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রটোকল অফিসার আমানুল হকের সাথে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এতে বলা হয়, যুক্তরাজ্য থেকে বিমানে আসা যাত্রীদের ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন রাখায় সরকারি ব্যবস্থাপনা একটি ভালো সিদ্ধান্ত ছিল কিন্তু পরবর্তীতে চার দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার পর কোভিড-১৯ টেস্ট করে নেগেটিভ হলে বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে প্রেরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়াটাকে সঠিক মনে করছেন না পরামর্শক কমিটি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯’র সুপ্তিকাল ১৪ দিন। এ সময়ের মধ্যে সংক্রমিত হওয়ার এবং তাদের মাধ্যমে নতুন স্ট্রেইনের ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জাতীয় পরামশর্ক কমিটি কোয়ারেন্টিন চার দিনের কোয়ারেন্টিন করার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করে। জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভা থেকে যুক্তরাজ্যসহ অন্য সব দেশ থেকে আসা যাত্রীদেরও ১৪ দিন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন করার সুপারিশ করা হয়।

সোমবার রাতের সভায় জাতীয় পরামর্শক কমিটি করোনা পরীক্ষার ফি তুলে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। যুক্তি হিসেবে তারা বলছেন, কোভিড-১৯’র সংক্রমণের হারে নিম্নগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই অবস্থায় নমুনা পরীক্ষা বাড়ানো প্রয়োজন। বিশেষ করে লক্ষণবিহীন সংক্রমণ নির্ণয়ের লক্ষ্যে সংক্রমণ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে পরীক্ষার আওতায় আনা প্রয়োজন। কোভিড পরীক্ষা করার জন্য জনসাধারণকে আগ্রহী করার জন্য করোনা পরীক্ষার ১০০ টাকা ফি রহিত করে বিনামূল্যে করার সুপারিশ দেয়া হয়।

‘নতুন পদোন্নতিপ্রাপ্ত জুনিয়র কনসালট্যান্টদের পদায়ন করা হলে এবং তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেলে কোভিড-১৯ রোগীদের যেসব হাসপাতাল তারা চিকিৎসা দিচ্ছেন সেখানে শূন্যতা দেখা দিতে পারে এবং চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে’ বলে মনে করেন জাতীয় পরামর্শ কমিটি। প্রশিক্ষিত জনবল প্রস্তুত না করা পর্যন্ত তাদের পদোন্নতি দিয়ে বর্তমান হাসপাতালগুলোতে রাখার সুপারিশ করেন তারা।
এ ছাড়া কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ঘোষিত আর্থিক সহায়তা এখনো পাননি। এ জন্য চলমান প্রশাসনিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

জাতীয় পরামর্শক কমিটি ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও বড় বড় নগরীতে করোনার টিকা প্রদান কিছুটা চ্যালেঞ্জিং মনে করেন বিধায় এসব এলাকায় টিকা ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু করতে সিটি করপোরেশনসহ সব সংস্থার সাথে সমন্বয় করার পরামর্শ দেন। টিকা কার্যকরী হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকা দরকার বলে মনে করেন জাতীয় পরামর্শক কমিটির সদস্যরা। তারা বলছেন, যথাযথ স্যাম্পলিংয়ের মাধ্যমে দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়ার পর অ্যান্টিবডি টেস্ট করে দেখা দরকার বলে মনে করেন তারা। ফার্মাকোভিজিল্যান্সের জন্য প্রস্তাব অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ ও অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া দরকার বলেও জানিয়েছে কমিটি।

করোনা সংক্রমণ নেমেছে ৫ শতাংশের নিচে কিন্তু মৃত্যু কমেনি : করোনা সংক্রমণ নেমেছে পাঁচ শতাংশের নিচে। ধীরে ধীরে কমছে সংক্রমণের হার। সংক্রমণের হার বাড়লেও মৃত্যুর হার কমেনি।

বৃহত্তর জনগোষ্ঠীতে কী পরিমাণ মানুষ করোনা সংক্রমণের শিকার তা খুঁজে বের করতে আরো বেশি করে নমুনা পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। এ লক্ষ্যে পরামর্শক কমিটি করোনার নমুনা পরীক্ষার ফি তুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। পরামর্শক কমিটির সভায় বলা হয়, নমুনা পরীক্ষার ফি তুলে দিলে আরো বেশিসংখ্যক মানুষ পরীক্ষা করতে নমুনা দিতে যাবেন।
গত ১২ জানুয়ারি থেকে গতকাল মঙ্গলবার এই আট দিনের মধ্যে ছয় দিনই করোনা সংক্রমণ ছিল পাঁচ অথবা পাঁচ শতাংশের নিচে। অবশিষ্ট দুই দিন সংক্রমণ ছিল সাড়ে পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি। করোনা সংক্রমণ ধীরে ধীরে কমে যাওয়ায় জাতীয় পরামর্শক কমিটির গত ১৮ জানুয়ারির সভায় সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।

গত ১২ জানুয়ারি থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত করোনায় সবচেয়ে কম সংক্রমণের হার ছিল ১৭ জানুয়ারি চার দশমিক ২৩ শতাংশ। গতকাল মঙ্গলবার ছিল চার দশমিক ৬৫ শতাংশ, ১৬ জানুয়ারি সংক্রমণের হার ছিল চার দশমিক ৭৩ শতাংশ, ১৪ জানুয়ারি ছিল চার দশমিক ৪.৯০ শতাংশ এবং ১২ জানুয়ারি সারা দেশে করোনা সংক্রমণ ছিল পাঁচ শতাংশ।

গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশে মোট ৭০২ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন, ১৮ জানুয়ারি ছিল ৬৯৭ জন, ১৭ জানুয়ারি ৫৬৯ জন, ১৬ জানুয়ারি সংক্রমিত পাওয়া গেছে ৫৭৮ জনকে, ১৫ জানুয়ারি ৭৬২ জন, ১৪ জানুয়ারি ৮১৩ জন, ১৩ জানুয়ারি ৮৯০ জন এবং ১২ জানুয়ারি ৭১৮ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন।

নতুন সংক্রমণের হার কমলেও সারা দেশে করোনায় মোট মৃত্যুর পরিমাণ কমেনি। গতকাল মঙ্গলবার মারা গেছেন ২০ জন, ১৮ জানুয়ারি মৃত্যুর হার ছিল ১৬, ১৭ জানুয়ারি মারা গেছেন ২৩ জন, ১৬ জানুয়ারি মারা গেছেন ২১ জন, ১৫ জানুয়ারি মারা গেছেন ১৩ জন। অপর দিকে ১৪ জানুয়ারি সারা দেশে মৃত্যুবরণ করেছেন ১৬ জন, ১৩ জানুয়ারি মারা গেছেন ১৩ জন।

করোনায় মৃত্যু কমেনি কেন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মৃত্যু আগের চেয়ে অনেক কমেছে। তবে আরো মৃত্যু কমে যাওয়া উচিত। সরকার চায় না করোনায় একজনেরও মৃত্যু হোক; কিন্তু যারা মারা যাচ্ছেন তাদের মধ্যে রয়েছে কো-মরবিডিটি অর্থাৎ করোনা ছাড়া বয়সজনিত কারণে আরো কিছু রোগ যাদের মধ্যে থাকে তারাই বেশি মারা যাচ্ছেন। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ বেশি মারা যাচ্ছেন। বাংলাদেশে ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে করোনায় মৃত্যুর পরিমাণ বেশি।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/556994