১৯ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:৫২

৮৫ সরকারি শিশু পরিবারে ডিজিটাল নিরাপত্তা

প্রকল্প প্রস্তাবে পাঁচ ত্রুটি

অস্বাভাবিক ব্যয়, অসম্পূর্ণ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা, একাধিক ক্রয়পদ্ধতি এবং লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্কে জিপ ও মাইক্রোবাস কেনার প্রস্তাব

দেশের ৮৫টি সরকারি শিশু পরিবারে ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য ‘সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি অ্যান্ড অ্যাপয়েন্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিসটেম ফর এইটটি ফাইভ সরকারি শিশু পরিবার’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।


এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৮ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এই ছোট প্রকল্পটির প্রস্তাবে পাঁচ ধরনের ত্রুটি চিহ্নিত করেছে পরিকল্পনা কমিশন।

এগুলো হলো-অসম্পূর্ণ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন, লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্কে জিপ ও মাইক্রোর প্রস্তাব, অস্বাভাবিক ব্যয় প্রস্তাব, একাধিক ক্রয়পদ্ধতি এবং পিআইসি ও পিএসসি কমিটি গঠনের নিয়ম না-মানা।

এসব ত্রুটি সংশোধনের জন্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি ফেরত পাঠানো হয়েছে। ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (প্রজেক্ট ইভালিউশন কমিটি-পিইসি) সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, পরিকল্পনাতেই যদি এত ত্রুটি থাকে, তাহলে বাস্তবায়ন পর্যায়ে কী হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। সাধারণভাবেই আমাদের দেশের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন পর্যায়ে বেশি ত্রুটি দেখা দেয়।

তাই প্রকল্পটি যত ছোটই হোক না কেন, এসব ত্রুটি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত যেন অনুমোদন প্রক্রিয়ায় যাওয়া না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

এতিম শিশুরা যাতে এর সুফল পেতে পারে, সেটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। পরিকল্পনা কমিশনকে কঠোরভাবে নজর রাখা উচিত।

এ প্রসঙ্গে সমাজসেবা অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মোহা. কামরুজ্জামান সোমবার যুগান্তরকে বলেন, আমি এখানে নতুন দায়িত্বে এসেছি।

তারপরও যেটুকু জানি, প্রকল্প প্রস্তাবটি প্রায় দুই বছর আগে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছিল। সেসময় অধিদফতর থেকে পাঠানো হয়নি। মন্ত্রণালয় সরাসরি পাঠিয়েছিল।

তবে এখন পরিকল্পনা কমিশন যেসব ত্রুটিবিচ্যুতি ধরে সুপারিশ দিয়েছে, সেগুলো সংশোধনের কাজ চলছে। ডিপিপিতে ব্যাপক পরিবর্তন ও পরিমার্জন করা হচ্ছে। আশা করছি, সংশোধিত ডিপিপিতে এসব ত্রুটি আর থাকবে না।

সূত্র জানায়, ‘সার্ভিলেন্স সিকিউরিটি অ্যান্ড অ্যাপয়েন্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিসটেম ফর এইটটি ফাইভ সরকারি শিশু পরিবার’ শীর্ষক প্রকল্পটি প্রক্রিয়াকরণ শেষে অনুমোদন পেলে বাস্তবায়ন করবে সমাজসেবা অধিদফতর।

চলতি বছর থেকে শুরু করে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এটি শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় সরকারি শিশু পরিবারগুলোয় অবস্থান করা এতিম ও মাতাপিতার স্নেহবঞ্চিত শিশুদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।

প্রকল্পটির মূল কার্যক্রম হচ্ছে যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়, একটি মাইক্রোবাস কেনা, সিভিল কায়ার্কস এবং আসবাবপত্র কেনাকাটা করা। এটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত আছে।

পিইসি সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) বিভিন্ন যন্ত্রপাতির মূল্য এবং সেন্ট্রাল মনিটরিং সেল ও সেল সেন্টার নির্মাণের ব্যয় অস্বাভাবিক প্রতীয়মান হয়েছে।

ফলে বিস্তারিত আলোচনার পর ব্যয় প্রাক্কলন যৌক্তিকভাবে কমানোর সুপারিশ দেওয়া হয়। এছাড়া ডিপিপিতে মাইসট্রো সলিউশন লিমিটেডের প্যাডে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়েছে।

যেটি যথাযথভাবে প্রণীত হয়নি। এ নিয়ে পিইসি সভায় বিস্তারিত আলোচনার পর অসম্পূর্ণ সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন বাদ দেওয়ার সুপারিশ দেওয়া হয়েছে।

কার্যবিবরণীতে আরও উল্লেখ করা হয়, পিইসি সভায় সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের প্রতিনিধি বলেন, ডিপিপিতে এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে যে লক্ষ্যের সঙ্গে প্রকল্পটি সংশ্লিষ্ট, সেটি উল্লেখ করতে হবে। সেই সঙ্গে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদ উল্লেখ করা প্রয়োজন।

এছাড়া পিআইসি (প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি) ও পিএসসি (প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটি) পরিপত্র অনুসরণ করে গঠন করা হয়নি।

সভায় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের প্রতিনিধি বলেন, ডিপিপি যত্নসহকারে প্রস্তুত করা হয়নি। বিভিন্ন অংশে ত্রুটিবিচ্যুতি রয়েছে।

পিইসি সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়, ডিপিপির লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্কের ইনপুট অংশে জিপ ও মাইক্রোবাস ক্রয়ের কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সভায় আলোচনা হয়।

জিপ ও মাইক্রোবাস বাদ দিয়ে লজিক্যাল ফ্রেমওয়ার্ক সংশোধনের সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ক্রয় পরিকল্পনায় একাধিক পদ্ধতি রাখা হয়েছে।

পিপিআর (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল) অনুযায়ী একাধিক ক্রয়পদ্ধতির সুযোগ না থাকায় একক পদ্ধতি উল্লেখ করে ডিপিপি পুনর্গঠন করতে বলা হয়েছে।

ডিপিপিতে কান্ট্রি অব অরিজিন এবং কোম্পানির নামসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতির স্পেসিফিকেশন প্রস্তুত করা হয়েছে।

এই দুটি বিষয় বিধিসম্মত নয় বলে সভায় মত দেওয়া হয়। ফলে কান্ট্রি অব অরিজিন এবং কোম্পানির নাম বাদ দিয়ে যন্ত্রপাতির স্পেসিফিকেশন তৈরির সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে।

আরও বলা হয়েছে, ডিপিপির সংলগ্নী-৪, ৬, ৭, ৮, ৯ ও ১১ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এক্ষেত্রে সংলগ্নী-৪ ত্রুটিপূর্ণভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে।

সংলগ্নী-৬-এর আওতায় সরবরাহ ও সেবা, সংলগ্নী-৭-এর আওতায় যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদি ক্রয়, সংলগ্নী-৮-এর আওতায় আসবাবপত্র, সংলগ্নী-৯-এর আওতায় পূর্তকাজ, সংলগ্নী-১০-এর আওতায় আসবাবপত্র (অ্যাপয়েন্টমেন্ট কক্ষ) এবং সংলগ্নী-১১-এর আওতায় মনিটরিং সেল ও সেন্টারের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।

এগুলোর কোথাও ব্যয় প্রাক্কলনের ভিত্তি উল্লেখ করা হয়নি। পিইসি সভায় আরও বলা হয়েছে, ডিপিপির অনুচ্ছেদ-২, ৬, ১৯, ২০-সহ অন্যান্য অনুচ্ছেদ ত্রুটিপূর্ণভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে।

এছাড়া প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ে ভৌত কনটিনজেন্সি এবং প্রাইস কনটিনজেন্সি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়। বিস্তারিত আলোচনার পর এ দুটি খাত বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/385325/