১৯ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:৫০

করোনার টিকা ক্রয়ের প্রস্তাব

অপ্রয়োজনীয় ব্যয় ২২৬ কোটি টাকা চিহ্নিত

কাটছাঁট করে ৭১৯ কোটি টাকা ছাড় অর্থ বিভাগের

করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে ২২৬ কোটি টাকার অপ্রয়োজনীয় ব্যয় চিহ্নিত হয়েছে। টিকা কিনতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এই প্রস্তাব পাঠানো হয়।


পরে স্বাস্থ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় পৃথকভাবে পর্যালোচনা করে মোটা অঙ্কের এই অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।

যেসব খাতে অযৌক্তিক ব্যয় চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-টিকার জন্য প্রচার ও জরিপ কার্যক্রম, আপ্যায়ন বিল, চিকিৎসকদের সম্মানী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ ও ডাটাবেজ তৈরি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টিকা কিনতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে ১৫৮৯ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেখানে ১২৭২ কোটি টাকা টিকা ক্রয়ে এবং বাকি ৩১৭ কোটি টাকা অন্য ১৫টি আনুষঙ্গিক খাতে ব্যয় দেখানো হয়।

কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আনুষঙ্গিক ব্যয়ের প্রস্তাব থেকে ১৩৫ কোটি টাকা কাটছাঁট করে ১৮২ কোটি টাকা নির্ধারণ করে। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এই প্রস্তাব পুনরায় অর্থ মন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করে ৯১ কোটি টাকা বাদ দেয়।

অর্থাৎ সব মিলিয়ে টিকা কিনতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া প্রস্তাব থেকে ২২৬ কোটি টাকা বাদ দেওয়া হয়।

আর আনুষঙ্গিক খাত ছাড়া শুধু টিকা কেনা বাবদ ১২৭২ কোটি টাকার প্রস্তাব সংশোধন করে ৬২৮ কোটি টাকা নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেটি অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় করে দেয়। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে এই অর্থ আরও ছাড় করা হবে।

পাশাপাশি আনুষঙ্গিক ১৫টি খাতের মধ্যে ৮টি খাতের অর্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনে নিজস্ব বাজেট থেকে নিজ দায়িত্বে ব্যয় করতে বলা হয়েছে বলে জানায় অর্থ বিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র।

জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, টিকা কেনাকাটায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাবে যে অযৌক্তিক ব্যয়ে অর্থ বিভাগ বরাদ্দ দেয়নি, এটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এটি প্রত্যাশিত।

তবে এ ধরনের কাজের বা প্রস্তাব তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি। কারণ এখানে দুর্নীতি হয়নি। তবে অনিয়মের একটি অংশ ধরা পড়েছে। আমি মনে করি ভবিষতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।

সরকার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় টিকা কেনার সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে। এই টিকা বিনা মূল্যে বিতরণ করা হবে।

এ লক্ষ্যে সরকারিভাবে টিকা কিনতে চলতি বাজেটের অপ্রত্যাশিত খাতের যে তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ আছে, সেখান থেকে তা মেটানোর সিদ্ধান্ত হয়।

অপ্রয়োজনীয় খাতে বরাদ্দের প্রস্তাব : জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রস্তাবে যেসব অপ্রয়োজনীয় খাত চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে অ্যাপায়ন খাতে ৯০ কোটি টাকা এবং প্রচার ও বিজ্ঞাপন বাবদ প্রায় ১৫ কোটি টাকা ছিল।

তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অ্যাপায়ন ব্যয় কমিয়ে ৬৩ কোটি টাকা এবং প্রচার ও বিজ্ঞাপনে পুরো অর্থ বরাদ্দ চায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে। কিন্তু অর্থ বিভাগ উভয় খাতে কোনো বরাদ্দ দেয়নি।

টিকা ক্রয়ের প্রস্তাবে দেখা গেছে সম্মানী ও পারিতোষিক/সম্মানীর জন্য ১০ কোটি টাকা চায় অধিদপ্তর। পরে সেটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কাটছাঁট করে ৮ কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে। কিন্তু সেটি নাকচ হয়ে যায়।

এছাড়া জরিপ কার্যক্রম চালানোর জন্য ৯৫ লাখ টাকার বরাদ্দের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেটিও নাকচ হয়।

টিকার ডাটাবেজ তৈরি করতে অধিদপ্তরের ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকার প্রস্তাবে কাটছাঁট করে এক কোটি ৭০ লাখ টাকা চূড়ান্ত করে অর্থে পাঠায়। এটি অপ্রয়োজনীয় ব্যয় চিহ্নিত করে নাকচ করা হয়।

একইভাবে টিকা ব্যবস্থাপনা খাতে এক কোটি টাকা ব্যয় ধরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অর্থ বিভাগে পাঠালে এই খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।

আরও যেসব খাতে অতিরিক্ত ব্যয় চিহ্নিত করে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি সেগুলো হচ্ছে-হায়ারিং চার্জ বাবদ ৬ লাখ ৮০ হাজার টাকা, মুদ্রণ ও বাঁধাই বাবদ ৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা।

সূত্র জানায়, বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় ৪টি শর্ত দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে-১. টিকা কিনতে অর্থ ব্যয়ের জন্য সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অনুমোদন নেওয়া।

২. যদি কোনো কারণে অগ্রিম অর্থ দিতে হয়, সেক্ষেত্রে সমপরিমাণের অর্থের ব্যাংক গ্যারান্টি নেওয়া। ৩. এই অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারে ক্রয় নীতিমালাসহ সংশ্লিষ্ট আর্থিক বিধিবিধান পালন করা।

৪. টিকা ক্রয় ও কোল্ড চেইন ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড সিস্টেম সেফটি বক্স কেনার জন্য ব্যয় করা অর্থের হিসাব এক মাসের মধ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষের প্রত্যয়নসহ বিল ভাউচার ও ব্যয় প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠানো।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/385319