১৯ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১০:৩৪

নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে সহ্যই করছে না ক্ষমতাসীন আ’লীগ

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : কোনো পর্যায়ের নির্বাচনেই বিরোধীদের সহ্য করছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এমনকি নিজেদের দলের বিদ্রোহীদেরকেও। এই অভিযোগ রাজনীতিবিদসহ নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের। শুধু নির্বাচনে প্রার্থী হলেই সরকার বিরোধী প্রার্থীদের উপর নেমে আসছে নির্মম নির্যাতনের খড়গ। জাতীয় নির্বাচনে একতরফা ভোট ডাকাতির পর অনুষ্ঠিত সব কটি স্থানীয় নির্বাচনেই এমন চিত্র দেখা গেছে। নির্বাচনে হত্যা, সন্ত্রাস, ভোট ডাকাতি, ভয়ভীতি প্রদর্শন এগুলো কোন বিষয়টা। ক্ষমতাসীনদের টার্গেটে থাকে জয়টাই। যেকোনভাবে জয়ী হতেই হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা যেভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে তাতে আগামী নির্বাচনে বিরোধীদের প্রার্থী হওয়াটাও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। সম্প্রতি সিরাজগঞ্জে সরকার বিরোধী বিজয়ী কাউন্সিলরকে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় সবার মাঝেই অজানা আতংক কাজ করছে। গতকাল রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌরসভায় এক নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রচারণায় বাধা ও তাকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি ৪,৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী। তার বাড়ি পৌর এলাকার সাদিপুর মহল্লায়। নাম বিলকিস বেগম (৪৫)। জবাফুল মার্কা নিয়ে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। অভিযুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মুন্ডুমালা উত্তরপাড়া মহল্লার বাসিন্দা। তিনি আফসার মিয়ার স্ত্রী। নাম রাফিয়া বেগম। তিনি একই এলাকায় আনারস প্রতীক নিয়ে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ঘটনায় রাফিয়া বেগম ও তার ৩ ছেলেসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে ১৮ জানুয়ারি দুপুরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, অভিযোগ ব্যাপারে অবগত নন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভা নির্বাচনে সহিংস ঘটনা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। এ ধাপে একজন বিজয়ী কাউন্সিলরকে প্রকাশ্যে হত্যা ছাড়াও অন্তত ৯টি পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ভোটকেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণ ও প্রার্থীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া ভোটগ্রহণ চলাকালে নির্বাচনে অনিয়ম, এজেন্টদের বের করে দেওয়া, জাল ভোট, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) একজনের ভোট আরেকজন দিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে কমপক্ষে ৮টি পৌরসভায় বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীরা নির্বাচন বর্জন করেছেন। ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও সংঘর্ষের ঘটনায় অনেক স্থানে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের কারণে এবার চার ধাপে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভায় নির্বাচন হয়েছে। গত শনিবার দ্বিতীয় ধাপে নির্বাচন হয়েছে ৬০টি পৌরসভায়। দুই ধাপ মিলিয়ে ৬৪ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী জিতেছেন আটজন। বিএনপির ঝুলিতে পড়েছে আটটি মেয়র পদ। এর মধ্যে দুজন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীও আছেন।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা ও ভোট প্রদান নির্বিঘ্ন করার দায়িত্ব মূলত নির্বাচন কমিশনের। এ জন্য যা যা করা প্রয়োজন, নির্বাচন কমিশনের তাই করা উচিত। অতীতে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচন দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার বিধান না থাকলেও নির্বাচনে প্রার্থী বাছাই ও মনোনয়নের ক্ষেত্রে অলিখিতভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা মুখ্য হয়ে উঠতে দেখা গেছে এবং শেষ পর্যন্ত তা রাজনৈতিক দলগুলোর মর্যাদার লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে। এবার দলীয় পরিচয়ে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় এক্ষেত্রে কোনো রাখঢাক থাকছে না। ফলে পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীরা নানারকম অনিয়ম ও হীনপন্থা অবলম্বন করছে। তাই পৌরসভা নির্বাচনের প্রতি বাড়তি মনোযোগ দেয়া নির্বাচন কমিশনের জন্য জরুরি ছিল। নির্বাচন কমিশন আন্তরিক হলে ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতামুক্ত করা মোটেই অসম্ভব ছিল না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যে কোনো পর্যায়ের হোক-প্রতিটি নির্বাচনকে সংবেদনশীল, স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে জনগণের ভোটাধিকারের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার বিকল্প নেই। কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে সহিংসতা, ভোট দেওয়ার অধিকার খর্ব ও হত্যার ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশের সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মানুষ মরে যাচ্ছে, গুলি করছে, ব্যালট ছিনতাই হওয়ার পরও কমিশনের কোনো বিকার নেই। নির্বাচন কমিশন যে অকার্যকর, এই ভোটে তা ফের প্রতীয়মান হয়েছে।

এ নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে কিছু বলতে এখন বিব্রতবোধ করি। চোখের সামনে নির্বাচন কমিশনের মতো একটা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস হতে দেখলাম। এমনিতে আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠান শক্তভাবে দাঁড়ায়নি। নির্বাচন কমিশন যতটু নড়বড়ে ছিল, তা এখন ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। মানুষ মরে যাচ্ছে, গুলি করতেছে, মেরে ফেলতেছে অথচ নির্বাচন কমিশনের কোনো বিকার নেই। তারা মনে করছে, আমি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছি এখন মারামারি কর, পিটাপিটি কর যা খুশি তাই কর। নির্বাচন শেষ হলেই তাদের দায়িত্ব শেষ। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে যদি কিছু বলি তাহলে বলব, বাংলাদেশে নির্বাচন শব্দটা হয়ে গেছে টাকা পয়সা, ধনদৌলত উপার্জনের একটা মেশিন। নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ হয়ে গেছে ‘থ্রি এম’-মানি, মাসল আর মেনিপুলেশন। নির্বাচন কমিশনের কাজ হলো পোস্ট অফিসের মতো সিল মেরে দেওয়া। অনেকটা আক্ষেপ করে সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, একজন কাউন্সিলরকে মেরে ফেলছে, আরেকজনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে কিন্তু সেখানে নির্বাচন বন্ধ হয়নি বা কারও প্রার্থিতা বাতিল হয়নি। তাহলে আইন থেকে লাভ কি, যদি তার ব্যবহার না হয়।

বিশিষ্ট আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেন, এখন অনিয়মগুলো আমাদের সহনীয় হয়ে গেছে। এগুলো আমরা মেনে নিই। ফলে এখন আর অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ বা আপত্তি আগের মতো হয় না। অনিয়ম হয়েছে, এটাকে আমরা খুব খারাপ চোখে দেখি না। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো অবাধ ও সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু এ দায়িত্ব এই নির্বাচন কমিশন, কোনো নির্বাচনেই সুচারুভাবে পালন করেছে-এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। শাহদীন মালিক বলেন, আগামী নির্বাচনেও এর চেয়ে ভালো কিছু আশা করা যায় না। বিগত নির্বাচনে সহিংসতা বেশি হয়েছে। এমনকি আওয়ামী লীগের একচেটিয়া বিজয় হয়েছে। অবস্থা এমন যে, সরকারি দল বিরোধী কোনো প্রার্থীকেই সহ্য করতে পারছেনা।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পৌর নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে পারেনি। বেশ কিছু এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। একজন নির্বাচিত কাউন্সিলরকে হত্যা করা হয়েছে, আরেকজন কাউন্সিলর প্রার্থীর মরদেহ পাওয়া গেল। নির্বাচনি বিধি লঙ্ঘনের যেসব ঘটনা ঘটেছে সে ক্ষেত্রে ইসি তাদের ভূমিকা পালন করতে পারেনি। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে মানুষের মনে যে ধারণাটা বদ্ধমূল-এটা একটি অকার্যকর প্রতিষ্ঠান সেটা পুনরায় প্রতীয়মান হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র বলছে, এখন কোনো নির্বাচনে অনিয়ম, সন্ত্রাস, হত্যা এসব কোনো বড় খবর নয়। জয়টা কীভাবে এল, সেটাই বড় খবর হয়ে উঠছে। পৌরসভা নির্বাচনের দেখভাল করছেন, আওয়ামী লীগের এমন একাধিক নেতা জানান, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামে। কিন্তু স্থানীয় সরকারের নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে তেমন কৌশল নেই। তবে প্রার্থীদর বলে দেয়া আছে, যেকোনভাবে জয় হাতছাড়া করা যাবেনা। ফলে সংঘাত, কেন্দ্র দখল ও প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করার বিষয়গুলো দলীয় নেতা-কর্মীরাই নিয়ন্ত্রণ করছেন। তিনি বলেন, প্রতিপক্ষ কে, সেটা দেখার প্রয়োজন নেই। আমাদের টার্গেট থাকে বিজয়ী হওয়া। সেটা যেভাবেই হোক না কেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচন একটা লড়াই। জেতার জন্য প্রার্থীরা অনেক কিছুই বলেন, করেন। কিন্তু দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কর্মকাণ্ড সহ্য করা হবে না। এ বিষয়ে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা খুবই কঠোর অবস্থানে। তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এলাকার নানা জটিল বিষয় থাকে। অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সংঘাত-সহিংসতার নজির আছে। তবে আওয়ামী লীগ এ বদনামের ভাগীদার হতে চায় না।

সূত্র মতে, এই সরকারের অধীনে য সুষ্ঠু নির্ভাচন হবেনা সেটি আওয়ামী লীগের নেতারাই বলেছেন। নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভায় সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে ৩ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবদুল কাদের মির্জা সড়ক অবরোধ করেন। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই। পরিবার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নিয়ে তিনি কড়া সমালোচনা করেন। সড়ক অবরোধের পর আবদুল কাদের মির্জা বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, কিন্তু ভোটের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি। দলের স্থানীয় সাংসদদের ইঙ্গিত করে তাকে বলতে শোনা গেছে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন-চারটা আসন ছাড়া বাকি আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদেরা পালানোর দরজা খুঁজে পাবেন না। এসব বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ এখন মানুষের মুঠোফোনে ঘুরছে।

অনেকেই বলছেন, মির্জা কাদের সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে যেসব আশঙ্কা করেছিলেন, তা বসুরহাটের নির্বাচনের দিনই দেখা যায়নি। কারণ আসলেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে তিনি মনে করেছিলেন। এ জন্য প্রশাসন ও দলের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চেয়েছেন আবদুল কাদের মির্জা।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন মিলে নির্বাচন ব্যবস্থাটাকেই ভেঙে দিয়েছে। এখন ভালো কিংবা খারাপ, দুটোই করার ক্ষমতা আছে আওয়ামী লীগের। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে এ ধারণা তৈরি হয়েছে যে শক্তি থাকলে যেকোনো কিছুই করা সম্ভব। বিরোধীরা যেহেতু মাঠে নেই। তাই এখন সেই শক্তি প্রয়োগ হচ্ছে নিজেদের ওপর। এর মাধ্যমে দল ও নির্বাচনব্যবস্থা যে আরও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে, সেটা মনে হয় কারও ভাবনায় নেই।

আসলেই কি এ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়েছে? নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার এ প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, এ নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যায় না। পৌরসভার নির্বাচনে সহিংসতা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। সহিংসতা ও নির্বাচন একসাথে চলতে পারে না। একতরফা নির্বাচনের ফলাফলও এক তরফা হয়েছে। অনেক স্থানে বিএনপির এজেন্টই ছিলনা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনে যেমন, তেমনি স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনেও এটা লক্ষ করা যাচ্ছে। গত জাতীয় নির্বাচন কেমন হয়েছে তা বিশদ উল্লেখের অপেক্ষা রাখে না। সবাই জানে, রাতের ভোটে কীভাবে সরকারি দলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। পরবর্তীতে আর যেসব নির্বাচন ও উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার একটিও গণআস্থা লাভ করতে পারেনি। বার বার প্রতারিত হওয়া মানুষের মধ্যে নির্বাচন, এমনকি রাজনীতির প্রতি একরকম বিমুখতা দেখা দিয়েছে। এটা গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য মোটেই শুভ নয়। এই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করা আদৌ সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনে যারা আছেন তারা নিরপেক্ষ নন। তাদের পক্ষপাতপুষ্ঠতা নির্বাচনব্যবস্থাকে অকার্যকর করে দিয়েছে। সরকারি দল বা সরকার এ নির্বাচন কমিশনের প্রতি সন্তুষ্ট ও আস্থাশীল এজন্য যে, তার অধীনে যে কোনো নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীদের বিজয় সুনিশ্চিত। সরকারের এই মনোভাব এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি তার সমর্থন নির্বাচন কমিশনকে রীতিমত বেপরোয়া করে তুলেছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, বর্তমানে যে নির্বাচনগুলো হচ্ছে সেগুলো আইওয়াশের নির্বাচন। নির্বাচনের নামে তামাশা করা হচ্ছে। নির্বাচনের ফলাফল শেখ হাসিনার বাসায় আগেই ঠিক করা থাকে, যা নির্বাচনের দিন প্রচার করেন। সিরাজগঞ্জ পৌর নির্বাচনে বিএনপির নির্বাচিত কাউন্সিলর হত্যার শিকার হয়েছেন উল্লেখ করে রিজভী বলেন, বিরোধী দলের রক্তের ঘ্রাণ ও স্বাদ শেখ হাসিনার সবচেয়ে প্রিয়। বর্তমানে মাটি চাপা দিয়ে গণতন্ত্রকে কবর দেয়া হয়েছে। গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে হবে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে হঠাতে হবে।

নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকারের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, আজকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে একটি রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে। সমস্ত দেশে লুটপাটের রাজনীতি তৈরি করেছে। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন এদেশের সবচেয়ে ঘৃণিত একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা বারবার নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ চেয়েছি, সরিয়ে দিতে বলেছি। কিন্তু শুধু আমরা রাজনীতিবিদরা নই, দেশের যারা বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী আছেন, দেশের যে এনজিও আছে এমনকি বিদেশের সংস্থাগুলো বলছে, এই নির্বাচন কমিশনকে না সরালে দেশে কখনোই একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। এই নির্বাচন কমিশন কখনোই সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে না।

জাতীয় পার্টি (জাপা) মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু স্থানীয় নির্বাচনে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধে সরকারের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, নির্বাচনে সন্ত্রাস হচ্ছে, হত্যাকাণ্ড ঘটছে। নির্বাচনে হত্যাযজ্ঞ গণতান্ত্রিক পরিবেশে মেনে নেয়া যায় না।

https://dailysangram.com/post/441045