১৮ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার, ১২:২৩

এমসি’র ছাত্রাবাসে গণধর্ষণ

অভিযুক্ত ৮ ছাত্রলীগ কর্মীর বিচার শুরু

সিলেটের এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে দল বেঁধে ধর্ষণের ঘটনার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। গতকাল সকালে সিলেটের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মুহিতুল হক চার্জ গঠনের মধ্য দিয়ে আলোচিত এ মামলার বিচারিক পর্ব শুরু করলেন। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ৮ আসামি উপস্থিত ছিল। আদালতে ২ জন জামিন ও তিনজন মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন জানালে নাকোচ করা হয়। আগামী ২৪শে জানুয়ারি থেকে শুরু হবে সাক্ষ্যগ্রহণ। আইনজীবীরা জানিয়েছেন- সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব দ্রুত সমাপ্ত হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলার রায় পর্যন্ত পৌঁছা সম্ভব হবে। গত ২৫শে সেপ্টেম্বর সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ঘটেছিল দেশজুড়ে আলোচিত এ ধর্ষণের ঘটনা। ওইদিন নগরীর দক্ষিণ সুরমার এক দম্পতি নিজেদের প্রাইভেটকার নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন এমসি কলেজের ক্যাম্পাসে।

সেখান থেকে সন্ধ্যায় ফেরার পথে এমসি কলেজের প্রধান ফটক থেকে প্রাইভেটকারসহ অপহরণ করে ওই দম্পতিকে নিয়ে আসা হয় ছাত্রাবাসে। সেখানে স্বামীকে বেঁধে গাড়িতেই ধর্ষণ করা হয় ওই গৃহবধূকে। পরে গাড়ি রেখে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। এ ঘটনায় গোটা দেশজুড়ে ক্ষোভ দেখা দেয়। এদিকে, ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষিতার স্বামী বাদী হয়ে শাহপরান (রহ.) থানায় ৬ ছাত্রলীগকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা করেন। অজ্ঞাত আসামি করেন আরো দুইজনকে। ঘটনার তিন মাসের মাথায় ৩রা ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হওয়া বহিষ্কৃত ছাত্রলীগকর্মী সাইফুর রহমানসহ ৮ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এর মধ্যে সাইফুর রহমান, শাহ মাহবুবুর রহমান ওরফে রনি, তারেকুল ইসলাম ওরফে তারেক, অর্জুন লস্কর, আইনুদ্দিন ওরফে আইনুল ও মিসবাউল ইসলাম ওরফে রাজনকে দল বেঁধে ধর্ষণের জন্য অভিযুক্ত করা হয়। আসামি রবিউল ইসলাম ও মাহফুজুর রহমান ওরফে মাসুমকে ধর্ষণে সহায়তা করার জন্য অভিযুক্ত করা হয়। তার আগে ঘটনার পর অভিযান চালিয়ে পুলিশ ও র‌্যাব ৮ আসামিকে গ্রেপ্তার করে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। এদিকে, সিলেটের আদালতে চার্জশিটের ওপর আপত্তি-অনাপত্তি নিয়ে দু’দফা শুনানি শেষে গতকাল চার্জগঠন করা হয়েছে।

চার্জগঠন উপলক্ষে সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। আইনজীবীরা জানিয়েছেন- আদালতে আলোচিত এই ধর্ষণ মামলায় গণধর্ষণ, অপহরণ ও গণধর্ষণের সহযোগিতায় অভিযোগপত্র গঠন করা হয়। সেইসঙ্গে ৩ আসামির দাখিলকৃত ডিসচার্জ পিটিশনও আদালত নামঞ্জুর করেছেন। ধর্ষণ মামলার আসামি সাইফুর রহমান, মাহবুবুর রহমান রনি ও রবিউল হাসান ইসলামের পক্ষে অভিযোগপত্রের ওপর ডিসচার্জ পিটিশন দাখিল করলে আদালত শুনানি শেষে তা নামঞ্জুর করেন। এ সময় অর্জুন লস্কর ও মাহবুবুর রহমান রনির আইনজীবীরা জামিন চাইলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন। মামলার শুনানি শেষে বেরিয়ে এসে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এডভোকেট রাশেদা খানম জানিয়েছেন- আসামিদের উপস্থিতিতে বিচারক মামলার চার্জগঠন করেছেন। আগামী তারিখ থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু করা হবে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন- সাক্ষীদের সহযোগিতা পাওয়া গেলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মামলাটি রায়ে যাবে।

সরকার পক্ষ ন্যায়বিচারের স্বার্থে বাদীপক্ষকে সব ধরনের সহযোগিতা দিচ্ছেন, দেবেনও। বাদী পক্ষের আইনজীবী এডভোকেট শহীদুজ্জামান জানিয়েছেন- ‘এই মামলাটি আলোচিত। ফলে ন্যায়বিচারের জন্য আদালতে লড়াই চলছে। মামলায় অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, অপহরণ ও ধর্ষণের সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। এইসব অভিযোগের ভিত্তিতে মামলার বিচার শুরু হয়েছে। আদালতে আসামি পক্ষের কিছু আবেদন করা হয়েছিল। এমনকি জামিনও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিচারক আবেদন নাকচ করে দিয়ে মামলাটিকে বিচারে নিয়ে গেছেন।’ আদালতে উপস্থিত ছিলেন আসামি রবিউলের আইনজীবী এডভোকেট মো. হাসান আহমদ। তিনি জানান- ‘আদালতে যে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে সেটি খুবই ভালো হয়েছে। এখন আমরা আদালতে সাক্ষীদের জেরা করবো। জেরার মধ্য দিয়ে তার আসামি রবিউল মুক্তি পাবে। তাকে ধর্ষণের সহযোগিতাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।’

https://mzamin.com/article.php?mzamin=259134&cat=3