১৬ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ১১:৩৭

পৌর নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার অবনতি

নাছির উদ্দিন শোয়েব : দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতায় কাউন্সিলর প্রার্থীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে চট্টগ্রামে দুইজন ও ঝিনাইদহে দুইজন। আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকরাই মাঠে সক্রিয়। এরপরও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচনি সহিংসতায় একজন হত্যার ঘটনায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আবদুল কাদেরসহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এদিকে গতকাল শুক্রবার বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে প্রচারণার সময় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর কর্মী দেলোয়ার হোসেনকে বাসায় ডেকে কুপিয়ে জখম করার অভিযোগ উঠেছে এক নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই নারী কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম নাসরিন নাহার সুমি।

জানা গেছে, গত মঙ্গলবার চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে গোলাগুলিতে আজগর আলী বাবুল সরদার (৫৫) নামে একজন নিহত হন। একই দিনে নারায়ণঞ্জের তারাব পৌরসভা নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে দুই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে দুপক্ষই তাদের ১৫/২০ জন আহত হয়েছে বলে দাবি করে। সংঘর্ষ চলাকালে দুপক্ষের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর আগের দিন গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হামলা পাল্টাহামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় শ্রীপুর থানায় দুটি মামলা হয়েছে। পাল্টাপাল্টি মামলা দুটিতে শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং শ্রীপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতিসহ ১৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০০ জনকে আসামী করা হয়েছে। উভয় মামলাতেই বাদীরা হত্যাচেষ্টার অভিযোগ করেছেন। গত ১ জানুয়ারি পাবনার সাঁথিয়া পৌর নির্বাচনে পোস্টার লাগানো নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে অন্তত ১৫ জন আহত হন।

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ কর্মীসহ নিহত ২: নগরের দেওয়ানবাজারে নির্বাচনী প্রচারণার সময় ছুরিকাঘাতে আহত আশিকুর রহমান রোহিত (২২) নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার ভোর পাঁচটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি। নিহত রোহিত নগরের ওমরগণি এমইএস কলেজের ছাত্র বলে জানা গেছে। তিনি বাকলিয়া থানাধীন ডিসি রোডের বাসিন্দা। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর দিন ৮ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরীর প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সময় ছুরিকাঘাতে আহত হন তিনি। এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারি রোহিতের ভাই জাহিদুর রহমান বাদি হয়ে বাকলিয়া থানায় তিনজনকে এজাহারনামীয় আসামী করে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করেন। আসামীরা হলেন- মহিউদ্দিন, বাবু এবং সাবু। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন মহিউদ্দিন, বাবু এবং সাবু। তবে তাদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বাকলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. ইয়াসির আরাফাত।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল ১১টার দিকে আশিকুর রহমান রোহিতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চকবাজার গুলজার মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। তারা অভিযুক্ত আসামীদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া যুবলীগ নেতা সাকিবুর রহমান বলেন, আশিকুর রহমান রোহিতকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরআগে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচনি সহিংসতায় একজন হত্যার ঘটনায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থী আবদুল কাদেরসহ ১৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফিউদ্দিন আহমদের আদালত এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে নগরীর ডবলমুরিং থানায় হত্যাকাণ্ডের শিকার আজগর আলী বাবুল সর্দারের ছেলে সেজান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় সদ্য সাবেক কাউন্সিলর আবদুল কাদেরকে প্রধান আসামী করে ১৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত পরিচয় আরো শতাধিক লোককে আসামী করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল কাদেরসহ ২৬ জনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে মামলায় যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদেরই শুধু রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ ও আইনজীবী।

ঘটনা ও মামলার ব্যাপারে ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘সিটি করপোরেশন নির্বাচনে পাঠানটুলি ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুর এবং বিদ্রোহী আবদুল কাদেরের সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই পক্ষই গোলাগুলিতে অংশ নেয়। গুলিবিদ্ধ হয়ে আজগর আলী বাবুল সর্দার নামে একজন মারা যান এবং মাহবুব নামে একজন গুলিবিদ্ধ হন। একই সময়ে আরো ছয় থেকে সাতজন লোক আহত হয়। গুলিবিদ্ধ দুজনই নজরুল ইসলাম বাহাদুরের অনুসারী। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ঝিনাইদহে প্রার্থীসহ নিহত ২: ঝিনাইদহের শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার সাঈদ জানান, ঝিনাইদহ পৌর এলাকা থেকে বৃহস্পতিবার রাতে বাপ্পী নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেন তারা। গত বুধবার রাতে শহরের কবিরপুর এলাকায় নির্বাচনী সহিংতায় প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত হয় কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত আলীর ছোট ভাই লিয়াকত আলী বল্টু (৫০)। এ ঘটনার পাঁচ ঘণ্টা পর প্রতিপক্ষ কাউন্সিলর প্রার্থী আলমগীর খান বাবুর লাশ কুমার নদ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গণমাধ্যমকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে নিহতের ভাই কাউন্সিলর প্রার্থী শওকত আলী বাদি হয়ে ২০ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামী করে শৈলকুপা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর অভিযান চালিয়ে মামলার মূল আসামীকে বাপ্পীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৮ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে ২৪ পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২৬ ডিসেম্বর ঢাকার ধামরাইয়ে প্রচারের সময় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে কাউন্সিলর প্রার্থীসহ আহত হন অন্তত ১০ জন। এর পরদিন কুষ্টিয়ায় ১৩ নম্বর বারখাদা ওয়ার্ডের দুই কাউন্সিলর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে সোহেল সরকার (৫০) নামের একজনের মৃত্যু হয়। আহত হন পাঁচজন। দেশে পৌরসভা রয়েছে ৩২৯টি। শনিবার দ্বিতীয় ধাপের ৬০ পৌরসভায় ভোট হচ্ছে। তৃতীয় ধাপে ৬৪টিতে ভোট হবে ৩০ জানুয়ারি। ১৪ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ ধাপে ৫৬টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ হবে।

https://dailysangram.com/post/440732