১৫ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার, ৭:২৫

বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি তালিকায় ছেলের নাম

সারা দেশে সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রমের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে সোমবার। লটারি পদ্ধতিতে অনলাইনে এ ফলাফল ঘোষণা হয়। ফল প্রকাশের পরই অনেকেই এ পদ্ধতির সমালোচনা করেন এবং লটারিতে বাছাই পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। লটারিতে বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি তালিকায় ছেলেদের নাম আর বালক বিদ্যালয়ে এসেছে মেয়েদের নাম। একাধিক ছাত্রের কয়েকবার নাম থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়েছে। তৃতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে সুযোগ পেয়েছে প্রথম ও চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র। দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণিতে না পড়া এসব শিক্ষার্থীর ছাড়পত্র সংগ্রহে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অভিভাবকরা। প্রধান শিক্ষকরা বলছেন, অভিভাবকদের ভুলেই এ কাণ্ড ঘটেছে। নানা জটিলতায় ভালো স্কুলে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছে সেরা শিক্ষার্থীরা। আর অভিভাবকরা বলছেন অনলাইনে সুযোগ থাকায় এবং সফটওয়্যারে ত্রুটি থাকায় এ সমস্যা হয়েছে। এর সঠিক সমাধান না হলে আদালতে যাবেন বলে জানান অভিভাবকরা। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-


ময়মনসিংহ : শহরে বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি তালিকায় মো. জোবায়েরুল হাসান খান নামে একজন ছেলের নাম থাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। তালিকা প্রকাশের পর ফেসবুকে লটারির স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকেই। তাহসান রহমান নামে এক ব্যক্তি বলেন, লটারিতে মেধাবীদের মূল্যায়ন হয় না, ভাগ্যের কারণে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বাদ পড়ে। আবুল মনসুর এবং আলী ইউসুফ নামে দুই সাংস্কৃতিক কর্মী ফলাফলের বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করে সুষ্ঠুভাবে ফল প্রকাশের দাবি জানান। বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নাছিমা আক্তার জানান, এ বছর ভর্তি প্রক্রিয়া সফটওয়্যারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এখানে কারও হাতের কোনো স্পর্শ ছিল না। একজন অভিভাবক বিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদনের সময় তার সন্তানের জন্য নিয়ম অনুযায়ী পাঁচটি বিদ্যালয় বাছাই করতে গিয়ে ভুলবশত এ ধরনের ভুল করে থাকতে পারেন। যার জন্য ছেলের নাম বালিকা বিদ্যালয়ে চলে আসতে পারে। এ শিক্ষার্থীর ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা পরে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।

টাঙ্গাইল : বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে লটারিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নামের তালিকায় এক ছাত্রের নাম একাধিকবার প্রকাশ করা হয়েছে। অপর দিকে বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির লটারিতে হিমেল নামের এক ছাত্রের নাম প্রকাশ পেয়েছে। তবে বিষয়টি পরিষ্কার করতে পারেননি বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা। এ নিয়ে ভর্তির সুযোগ না পাওয়া শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্যে আলোচনা ও সমালোচনা ঝড় বইছে। বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য লটারির ফলাফলের বিজয়ী তালিকায় একাধিক ছাত্রের নাম কয়েকবার রয়েছে। ফলাফল তালিকায় দেখা যায়, নাহিয়ান হক স্বাধীন পাঁচবার, আব্দুল্লাহ আল নোমান, সাইদুর রহমান সোহান, আতিকুর রহমান নাবিল, সামিউল ইসলাম, মাজহারুল ইসলামের নাম দুবার করে রয়েছে। একজন ছাত্রের নাম একবারই আসার কথা। একাধিক ছাত্রের কয়েকবার করে নাম থাকায় অনেক শিক্ষার্থী বঞ্চিত হয়েছে। এ লটারির ফলাফল বাতিল করে পুনরায় স্বচ্ছতার সঙ্গে লটারি করার জন্য দাবি জানান অভিভাবকরা। এ ব্যাপারে সঠিক সমাধান না হলে আদালতের আশ্রয় নেওয়া হবে বলেও জানান অভিভাবকরা। বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল করিম বলেন, ‘সফটওয়্যার ত্রুটিজনিত কারণে এ সমস্যা হয়েছে। তবে ভর্তির ক্ষেত্রে এক ছাত্রকে একবারই ভর্তি করা হবে। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে একাধিকবার আসা নামগুলোর স্থান পূরণ করা হবে বলেও জানান তিনি। বিন্দুবাসিনী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা তাহমিনা বেগম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে পরবর্তীতে জানাতে পারবে বলে জানান।

ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ের সরকারি বালক বিদ্যালয়ে ভর্তির ‘সুযোগ’ পেয়েছে এক মেয়ে। বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে ‘ভর্তির সুযোগ’ পাওয়া মেয়েটি হলো-ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সনগাঁওয়ের ওয়াসিমা আক্তার লুবনা। লুবনার ঠাকুরগাঁও বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে ডে শিফটের ভর্তি তালিকায় নাম এসেছে। এ বিষয়ে বালক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পিজুস কান্ত রায় বলেন, ওই ছাত্রী শিক্ষার্থীকে অন্য কোথাও ভর্তি নেয়া হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। তৃতীয় শ্রেণিতে এক বালকের নাম ভর্তির তালিকায় উঠেছে। এই বিদ্যালয়ে ফাবিহা লামিয়া দিহার মর্নিং শিফটে দুবার লটারিতে নাম উঠেছে। এ বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ইকবাল হোসেন। জেলা প্রশাসক কেএম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নয়। তা বাতিল হয়ে যাবে।

ভোলা : জেলার সেরা দুটিসহ ছয়টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে লটারির ভর্তির সুযোগ পায়নি বেশির ভাগ স্কুলের সেরা শিক্ষার্থীরা। আবার সুযোগ পাওয়াদের মধ্যে রয়েছে প্রথম ও চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও। দ্বিতীয় ও পঞ্চম শ্রেণিতে না পড়া এসব শিক্ষার্থীদের ছাড়পত্র সংগ্রহে দৌড়ঝাঁপ করছেন অভিভাবকরা। টাকার বিনিময়ে ছাড়পত্র সংগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। করোনাকালীন পিইসি পরীক্ষা না হলেও ওইসব শিক্ষার্থীর তালিকা শিক্ষা দপ্তরে রয়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওই তালিকার শিক্ষার্থীরাই ভর্তির সুযোগ পাবে বলে জানান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। যারা চতুর্থ শ্রেণি থেকে এবার পঞ্চম শ্রেণিতে অটোপ্রমেশন পেয়েছে তারা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু লটারির সুযোগ থাকায়, কিছু অভিভাবক অনৈতিকভাবে শিশু শিক্ষার্থীর তৃতীয় ও ষষ্ঠ শ্রেণির ভর্তির জন্য আবেদন করান। এদের অনেকেই ভর্তির জন্য তালিকাভুক্ত হয়েছে। আবার একই শিক্ষার্থী বিভিন্ন নামে আবেদন করেছে। এ ছাড়া একই শিক্ষার্থী বিভিন্ন স্কুলের নাম উল্লেখ করে আবেদন করায় বিভিন্ন স্কুলে ভর্তির সুযোগও পেয়েছে। এত সব জটিলতা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/384010