১৪ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৭

খোঁড়াখুঁড়িতে ভোগান্তি রাজধানীবাসীর

রাজধানীতে বিভিন্ন সংস্থার খোঁড়াখুঁড়িতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীকে। এক দিকে সড়ক দিয়ে চলতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে, অন্য দিকে শীত মৌসুমে বায়ুদূষণের শিকার হতে হচ্ছে নগরীর বাসিন্দাদের। ফলে শাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ।

রাজধানীতে উন্নয়নের নামে সারা বছরজুড়েই চলতে থাকে খোঁড়াখুঁড়ি। বর্তমান শীত মৌসুমেও থেমে নেই রাস্তা খোঁড়া। মাটির নিচে ইন্টারনেট লাইন নেয়ার জন্য বিভিন্ন স্থানে খোঁড়া হচ্ছে। এ ছাড়া ড্রেনলাইন, বিদ্যুৎ লাইনসহ বিভিন্ন কাজে সড়ক খোঁড়া হচ্ছে। মতিঝিলে দিলকুশা, বাংলাদেশ ব্যাংক সংলগ্ন এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। মতিঝিলের জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় দু’বছর আগে এ প্রকল্প নেয়া হলেও মাঝখানে ঠিকাদার বদলের কারণে দীর্ঘদিন রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়। অনেক স্থানে বড় গর্ত করা হয়। এতে বাণিজ্যিক এলাকা দিলকুশা ও কমলাপুর এলাকার বাসিন্দাসহ ওই সড়ক ব্যবহারকারীদের দীর্ঘ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বর্তমানেও মতিঝিলে শাপলা চত্বর এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। এতে ওই সড়ক ব্যবহারকারীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

একইভাবে মালিবাগ চৌধুরীপাড়া এলাকার মূল সড়ক সম্প্রতি খোঁড়াখুঁড়ি করে রাস্তার উন্নয়ন করা হয়। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই আবার একই অবস্থায় পড়েছে। গত প্রায় এক মাস ধরে ওই সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করা হচ্ছে। এতে রাতদিন ওই সড়কে যানজট লেগেই থাকছে। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে মগবাজার নয়াটোলা ও আমবাগান এলাকায় দুর্ভোগ যেনো সীমা ছাড়িয়েছে। আরসিসি পাইপ ও স্লাব বসানোর কাজের ধীরগতিতে আট মাস ধরে বিধস্ত সেখানকার রাস্তাঘাট। খোঁড়াখুঁড়ির পর এলোপাতাড়ি ছড়িয়ে রাখা হয়েছে ইট পাথর ও মাটি। ফলে গাড়ি তো দূরে থাক, হাঁটার অবস্থাটুকু নেই। মালামাল কিংবা রোগী পারাপার দূরে থাক, দৈনন্দিন যাতায়াতেই নাভিশ্বাস উঠছে এলাকাবাসীর। কাজে ধীরগতির মাশুল দিচ্ছে পার্শ্ববর্তী আমবাগানের বাসিন্দারাও। দীর্ঘদিন ধরে এখানে গাড়ি চলতে না পারায় রোগী যাতায়াত কিংবা বাসাবদলের কাজ কঠিন ও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রাজধানীর নর্দা, মাদানী এভিনিউ, গুলশান-২ পর্যন্ত ৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। রাস্তা খুঁড়ে ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) সংযোগ তার বসানো হচ্ছে। গত বছর এ রাস্তার আরেক পাশে খুঁড়ে পয়ঃনিষ্কাশন লাইন বসিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। এভাবে এক সড়কে বারবার খোঁড়াখুঁড়িতে বাড়ছে অর্থের অপচয়, দীর্ঘায়িত হচ্ছে জনভোগান্তি, কমছে রাস্তার মেয়াদ, বাড়ছে যানজট। বছরজুড়ে খোঁড়াখুঁড়িতে ধুলোর শহরে পরিণত হয়েছে ঢাকা। এই সড়ক ছাড়াও আফতাবনগর থেকে ইউলুপ পর্যন্ত সড়কে ডেসকোর কাজের জন্য রাস্তা খোঁড়া হয়েছে। সাউথ পয়েন্ট স্কুল, ওয়াপদা রোডে ডিপিডিসির উন্নয়নকাজের জন্য সড়ক খোঁড়া হয়েছে।
দক্ষিণ সিটির খিলগাঁও, বাসাবোর অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সড়ক, বনশ্রীর বিভিন্ন সড়ক দীর্ঘদিন ধরে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে ভোগান্তিতে রয়েছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা।

এ ছাড়া মেট্রোরেল নির্মাণকাজের কারণে বায়ুদূষণের শিকার হতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ৫৬ সেবা সংস্থার সমন্বয় না থাকায় বছরজুড়ে চলতে থাকে রাজধানীতে খোঁড়াখুঁড়ি। এক সংস্থা রাস্তা খুঁড়ে যাওয়ার মাস পার না হতেই খুঁড়তে শুরু করে আরেক সংস্থা। এতে অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি বছরজুড়ে মানুষের ভোগান্তি লেগেই থাকে। এই পরিস্থিতিতে রাজধানীর উন্নয়ন ও সেবার সাথে জড়িত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয় দুই সিটি। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়ের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সরকারি ২১টি সংস্থা ও পাঁচ প্রকল্পকে গত ৫ অক্টোবর চিঠি দেয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাথে সমন্বয় না করে বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে ঢাকা শহর অপরিকল্পিত নগরীতে পরিণত হচ্ছে। জলাশয় ভরাট করে আবাসিক ভবনের অনুমতি প্রদান করায় দুর্যোগপ্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, খাল বেদখল হয়ে যাওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে, সুপেয় পানি, সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এবং উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক রাস্তা কর্তনের ফলে সর্বসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা শহরকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ডিএসসিসি এলাকায় এই অর্থবছরে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পের বিবরণ ৩১ অক্টোবর ২০২০ তারিখের মধ্যে ডিএসসিসিকে অবহিত করে মতামত গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। তবে মাত্র ছয়টি সংস্থা ও প্রকল্প ডিএসসিসির চিঠির জবাব দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর বাইরে ইন্টারনেট নিয়ে কাজ করা দু’টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডিএসসিসিকে তাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। এ দিকে গত বছর ডিসেম্বরে সব সেবা সংস্থাকে চিঠি দিয়েছিল ডিএনসিসি। কোন সংস্থা কখন, কোন রাস্তায় উন্নয়নকাজের জন্য খুঁড়তে চায় তা বছরের শুরুতে সিটি করপোরেশনকে জানাতে বলা হয় চিঠিতে। কোনো সেবা সংস্থাই চিঠির জবাব দেয়নি। অনুমতি না নিয়ে সম্প্রতি রাস্তা খোঁড়ায় উত্তরা থানায় ওয়াসার বিরুদ্ধে জিডি করে ডিএনসিসি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো: খায়রুল বাকের নয়া দিগন্তকে বলেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য কিছু জায়গায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হচ্ছে। মতিঝিলের কাজটি ঠিকাদার বদলের কারণে বেশিদিন লেগে গেছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সেবা সংস্থার কাজে খোঁড়ার অনুমতি না দিয়ে উপায় থাকে না। রাজধানীর উন্নয়নের জন্যই খোঁড়ার অনুমতি দিতে হয়।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/555672/