১৪ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার, ৯:৩৫

সেই শিশুটির খোঁজ পাওয়া গেছে

দেশ জাতি রাষ্ট্র

ছোট বেলায় কমরেড মামার কাছে গল্পটি শুনেছিলাম। এই সে দিন গল্পটি আবার পড়লাম। তবে কবিতার ভাষায়। কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর মহাপ্রয়াণ উপলক্ষে কবিতাটি আবার আমাদের সামনে এলো। গল্পটি এরকমÑ এক দেশে এক রাজা ছিলেন। তার ইচ্ছে হলো, এমন অপূর্ব সাজপোশাক তিনি পরবেন যা অভূতপূর্ব। কেউ কোনোদিন যে কাপড়, যে সৌকর্য কোনোদিন দেখেনি। যেমন ইচ্ছা তেমন কাজ। রাজ্যময় ঢোল পিটিয়ে দেয়া হলোÑ এমন অপূর্ব পোশাক যে দর্জি বা কোম্পানি বানিয়ে দিতে পারবে রাজা তাকে অঢেল অর্থ দেবেন। এ সংবাদ রাজ্যময় প্রচার হলো তো বটে, আশপাশের রাজ্যগুলোতেও এ খবর ছড়িয়ে পড়ল। দলে দলে দর্জি, পোশাক বিশারদ কোম্পানি রাজদরবারে আসতে শুরু করল। এত লোকজন এলো যে, রাজা ও তার দরবার রীতিমতো হিমশিম খেলো তাদের সামলাতে। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, রাজার কোনো পোশাকই পছন্দ হচ্ছে না। সব কিছুতে শেষমেশ একটা-না-একটা ত্রুটি বেরিয়ে যাচ্ছে। সভাসদরা হতাশ। মন্ত্রিপরিষদ চিন্তিত। রাজা ক্ষুব্ধ। এত দিনেও কোনো সুরাহা হলো না। রাজাকে কেউ অপূর্ব পোশাক দেখাতে পারল না। এসব গল্প রটে যাওয়ার পর একজন অতি ধূর্ত দর্জি রাজাকে উচিত শিক্ষা দেয়ার ফন্দি আঁটল। সে রাজসিক এক দলবল নিয়ে রাজদরবারে এলো। সে রাজাকে বলল, রাজা মশাই! আমাদের কোম্পানি সারা বিশে^ পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে সুবিখ্যাত। আমরা আপনাকে এরকম এক অপূর্ব পোশাক প্রদর্শন করব, কিন্তু এই পোশাক দৈববর প্রাপ্ত। কেবল সুসন্তানরাই এটা দেখতে পারবে। যাদের জন্ম নিয়ে সন্দেহ আছে, এরকম ব্যক্তি কখনো এ পোশাক দেখতে পারবে না। রাজা যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা এ পোশাক প্রদর্শন শুরু করতে পারি। রাজা অনুমতি দিলেন। দর্জি পোশাক প্রদর্শনের ভঙ্গিতে সবকিছু করছে। প্রথমেই রাজাকে শরীরের নিচের অংশের পোশাক দেখানো হচ্ছে। তারপর বক্ষ এবং শিরস্ত্রাণ ইত্যাদি। অথচ কেউ কিছু দেখছে না। রাজাও দেখছেন না। রাজা মনে মনে প্রমাদ গুনছেন, আমি দেখছি না কেন? তাহলে কি আমার জন্ম নিয়ে কোনো গণ্ডগোল আছে? রাজা-বাদশাহদের ক্ষেত্রে এরকম তো হতেই পারে! অথচ রাজা লজ্জায়, ভয় ও সঙ্কোচে সত্য বলতে পারছেন না। একই অবস্থা চার দিকে। রাজা-উজির, পাত্র-মিত্র সবার মনেই একই প্রশ্ন। অথচ প্রকাশ করছেন না কেউই। অবশেষে এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণÑ যখন রাজা সে পোশাক পরে রাজ্য ঘুরতে বের হবেন... বাকি অংশ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতায় শুনতে হয়তো ভালো লাগবে।

‘সবাই দেখছে যে, রাজা উলঙ্গ, তবুও
সবাই হাততালি দিচ্ছে।
সবাই চেঁচিয়ে বলছে; শাবাশ, শাবাশ!
কারো মনে সংস্কার, কারো ভয়;
কেউ বা নিজের বুদ্ধি অন্য মানুষের কাছে বন্ধক দিয়েছে;
কেউ বা পরান্নভোজী, কেউ
কৃপাপ্রার্থী, উমেদার, প্রবঞ্চক;
কেউ ভাবছে, রাজবস্ত্র অতীব সূক্ষ্ম, চোখে
পড়ছে না যদিও, তবু আছে,
অন্তত থাকাটা কিছু অসম্ভব নয়।’
এ অবস্থায় কবি রাজাকে নামিয়ে দিয়েছেন ‘বাস্তবের প্রকাশ্য রাস্তায়’। সে রাজপথেও একই দৃশ্য; একই স্তাবকতা। একই প্রশস্তি। হাজারো মানুষের কেউই নিজেকে জন্মের ব্যাপারে সন্দিহান অথবা প্রচলিত ভাষায় ‘জারজ’ ভাবতে রাজি নয়। এদের মধ্যে ছিলেন কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক-আইনজীবী, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী এবং তুখোড় বুদ্ধিজীবী। কিন্তু কেউ ঝুঁকি নিতে নারাজ। কেউই নিজের সুখ-সুবিধা এবং পদ হারাতে চায় না। এদের সবাই অন্তত গল্পে ‘আপাদমস্তক ভীতু, ফন্দিবাজ অথবা নির্বোধ স্তাবক ছিল না। একটি শিশুও ছিল। সত্যবাদী, সরল, সাহসী একটি শিশু।’ গল্পে আছে, সেই শিশুটি রাজাকে দেখে স্বতঃস্ফূর্তভাবে চেঁচিয়ে উঠল, ‘রাজা ন্যাংটা! রাজা ন্যাংটা!’ কারণ শিশুটি যা দেখছে তা-ই সে বলছে। তার মাথায় জাগতিক বুদ্ধি তখনো গজায়নি। সে ভয়-ভীতি, আইন-কানুন ও জেল-জুলুম তখনো বোঝে না। গল্পে এরকম বলা হলেও কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এখন এই সময়ে শিশুটিকে কোথাও দেখছেন না। তার প্রশ্নÑ
‘শিশুটি কোথায় গেল?
কেউ কি কোথাও তাকে কোনো পাহাড়ের গুহায় লুকিয়ে রেখেছে?
নাকি সে পাথর-ঘাস-মাটি নিয়ে খেলতে খেলতে
ঘুমিয়ে পড়েছে
কোন দূর
নির্জন নদীর ধারে, কিংবা কোনো প্রান্তরের গাছের ছায়ায়?’

দুই
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী যে শিশুটিকে এত করে খুঁজছেন, ইদানীং তার খবর পাওয়া গেছে। সে অবুঝ শিশুর মতোই সত্য কথা বলার পণ করেছে। মুরব্বিরা বলছেন, ‘মিথ্যা বাজে বকিস নে আর খবরদার’। কিন্তু সে তার কথা বলেই যাচ্ছে। সরকারের ভীতি, বড় ভাইয়ের রাগ, মুরব্বির উপদেশÑ কোনো কিছুই তাকে সত্য বলা থেকে বিরত করছে না। কখনো কখনো সে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিচ্ছে। রাষ্ট্রের শাসন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হয়তো বা নিজের অগোচরেই নেতার প্রশংসা ও প্রশস্তি গাইছে। কিন্তু সে আবার গোড়ায় ফিরে আসছে। সত্য কথা বলার বাতিকে পেয়েছে তাকে। এখন যখন বাংলাদেশে ভীতির রাজত্ব কায়েম হয়েছে, সবাই যখন সেই গল্পের মতো রাজাকে ন্যাংটা দেখছে না, আর সে দিব্যি সত্য কথা বলে যাচ্ছে, তখন তাকে নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে সারা দেশে। কেউ বলছে শাবাশ! শাবাশ। আবার কেউ বলছে, বোকা বেহদ্দ কোথাকার!

আমাদের সেই সত্য বলার ছেলেটি আর কেউ নয়, মন্ত্রীপ্রবর ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা। গত ৪ জানুয়ারি সংবাদপত্রে আলোড়ন তোলে তার বক্তব্য। তার প্রকাশিত বক্তব্য এরকমÑ ‘বৃহত্তর নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগের কিছু কিছুু চামচা নেতা আছেন যারা বলেন, অমুক নেতা তমুক নেতার নেতৃত্বে বিএনপির দুর্গ ভেঙেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বৃহত্তর নোয়াখালীতে তিন-চারটি আসন ছাড়া আমাদের এমপিরা দরজা খুঁজে পাবে না পালানোর জন্য। এটাই হলো সত্য কথা। সত্য কথা বলতে হবে। আমি সাহস করে সত্যি কথা বলছি।’ তার সাম্প্রতিক এ বক্তব্য ভিডিও, ফেসবুক ও ইউটিউবে ভাইরাল হয়েছে। তার কারণ, তিনি শাসকদলের দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তির ছোট ভাই। নোয়াখালীর আঞ্চলিক দলীয় কিছু নেতাকে ইঙ্গিত করে আবদুল কাদের মির্জাকে বলতে শোনা যায়Ñ ‘নোয়াখালীর মানুষজন বলে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। এটা সত্য। কিন্তু আপনাদের জনপ্রিয়তা বাড়েনি। আপনারা প্রতিদিন ভোট কমান। টাকা দিয়ে বড় জনসভা করা, মিছিল করা কোনো ব্যাপার নয়। টাকা দিলে, গাড়ি দিলে আমিও লোক জড়ো করতে পারব। না হয় নির্বাচন থেকে বিদায় নেবো। উল্লেখ্য, আগামী ১৬ জানুয়ারি দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার মেয়র পদে মির্জা নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। গত ৩১ ডিসেম্বর সকালে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের উপজেলা সদর বসুরহাট পৌরভবন চত্বরে ইশতেহার ঘোষণাকালে ওই বক্তব্য দেন তিনি। তিনি নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সহসভাপতি। এ নিয়ে টানা তৃতীয়বার বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেলেন। আবদুল কাদের মির্জা তার বক্তৃতায় বলেন, ‘নোয়াখালীর রাজনীতি অতি কষ্টের। এই বৃহত্তর নোয়াখালীতে আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের, মওদুদ সাহেব (বিএনপির শীর্ষ নেতা) এবং আবু নাসের (জামায়াতের নেতা)- এই তিনজন ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ তাদের সমমর্যাদার কেউ নেই। কোনো নেতা সৃষ্টি হয়নি। এখন তো ওবায়দুল কাদের, মওদুদ আহমদের নাম বিক্রি করি। তারা তিনজন তো অসুস্থ, তারা মারা গেলে কার নাম বিক্রি করবে, কেউ নাই।’ কারো নাম উল্লেখ না করে আবদুল কাদের বলেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেন যারা, তারা হচ্ছেন নেতা। টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেন যারা, তারা হচ্ছেন নেতা। পুলিশের, প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি দিয়ে যারা পাঁচ লাখ টাকা নেন, তারা হচ্ছেন নেতা। গরিব পিয়নের চাকরি দিয়ে তিন লাখ টাকা যারা নেন, তারা হচ্ছেন নেতা।’ জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সমালোচনা করেন আবদুল কাদের, সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদের ছোট ভাই জাবেদ (মিনহাজ আহমেদ জাবেদ)। তার সাথে যোগাযোগ করে কোন কোন নেতা তখন ওয়ান-ইলেভেনের সময়কালে নিজেদের রক্ষা করেছেন। এখন সেই জাবেদ এবং হাওয়া ভবনের মানিক (আতাউর রহমান ভূঁইয়া ওরফে মানিক) আজ জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। অথচ কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাবুদ্দিনের মতো ত্যাগী ও নির্যাতিত ব্যক্তিকে করা হয়েছে উপদেষ্টা। এটি হচ্ছে আমাদের কমিটি। তার এই আকস্মিক সত্যতার কারণ সম্পর্কে বলেছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি খিজির হায়াত খান। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগে আবদুল কাদের মির্জা চিকিৎসার জন্য আমেরিকায় গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি শপথ করেছেন, দেশে ফিরে সত্য কথা বলবেন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। সে শপথের অংশ হিসেবে তিনি এসব বলছেন। আবদুল কাদের মির্জার এই বক্তব্যের প্রতি আমরা একমত রয়েছি।’ আবদুল কাদের মির্জা আরো বলেন, ‘দলের প্রয়াত সাবেক তিন নেতা আবদুল মালেক উকিল, শহীদ উদ্দিন ইস্কান্দার ও নুরুল হক সাহেবের নোয়াখালীতে আওয়ামী লীগে অপরাজনীতি চলছে। এই অপরাজনীতি চলতে পারে না। তাই তিনি অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি কাদের মির্জার বক্তব্যের জবাবে বলেন, ‘আবদুল কাদের মির্জা যেসব কথা বলছেন, অভিযোগ করেছেন, তার কোনোটিই মিথ্যা নয়। এসব নিয়ে শিগগিরই দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। আবদুল কাদের মির্জা দলের জন্য অপরিহার্য। উল্লেখ্য, বেশ কয়েকদিন চুপ থাকার পর মির্জার বড় ভাই ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘শেখ হাসিনা ব্যতীত অন্য কেউ দলের জন্য অপরিহার্য নয়।’ পরে মির্জা আওয়ামী লীগের জন্য আরো বিব্রতকর কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন, কিন্তু ভোটের অধিকার এখনো প্রতিষ্ঠা হয়নি। দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি বন্ধ হয়নি।’ তাই ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিশ্চয়তা না পাওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচিতে অনড় থাকবেন। তার পাশে কেউ না থাকলে প্রয়োজনে তিনি ‘একা লড়ে যাবেন’ বলেও উল্লেখ করেন।

ওবায়দুল কাদেরের ভাই এসব সত্য কথা বলায় শাসকদল তার ওপর মহাক্ষিপ্ত। জনাব মির্জা বলেন, ‘আমি বললে অপরাধ। ধমকায়-গুলি করবে, ঝাঁঝরা করে দেবে, কিন্তু আমি এসবকে ভয় পাই না। আমি ওবায়দুল কাদেরকেও ভয় পাই না। দল থেকে বহিষ্কার করে দেয়া হলেও আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছেড়ে যাবো না।’ অপর দিকে, বিরোধী রাজনৈতিক মহল তার বক্তব্য লুফে নিয়েছে। আওয়ামী লীগের দুর্নীতি ও দুঃশাসনের উদাহরণ হিসেবে উল্লেøখ করছেন বিরোধী নেতারা। সত্যবচন শুনতে প্রতিদিনই মির্জার পথসভাগুলোতে ভিড় করছে মানুষ। বক্তৃতায় মাঝে মধ্যেই হইচই করে ওঠা মানুষের সম্মতি কথার তেজ যেন আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘রাজনৈতিক নেতাদের দুর্নীতির বিচার হয়, প্রশাসকদের বিচার হয় না।’ কাদের মির্জার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে ওই পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে তিনি যেসব কথা বলছেন, তা আমরা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছি। কারণ উনি (কাদের মির্জা) বলেছেন, সুষ্ঠু ভোট হলে ফলাফল যাই হোক তিনি মেনে নেবেন। আমরাও তার কথার ওপর আশাবাদী। এ কারণে আমরা ভোট করছি, না হয় ভোট করতাম না।’ মির্জার এসব সত্যকথনে উল্লসিত হয়েছেন একসময়ের বৃহত্তর নোয়াখালীর বিতর্কিত নেতা জয়নাল হাজারী। আবদুল কাদের মির্জার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য বলেন, ‘মির্জার ডিমোশন নয়, প্রমোশন হবে। মির্জাও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চলে আসতে পারেন। শেখ হাসিনা সাহসী লোককে পছন্দ করেন।’ তিনি কাদের মির্জাকে ‘বীরপুরুষ’ বলে অভিহিত করেন। জনাব হাজারীর এ মন্তব্যও মিশ্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। কেউ বলেন, তার সুমতি হয়েছে। আবার কেউ বা বলেন, ভূতের মুখে রাম নাম!

বিরোধীদলীয় নেতারা যেমন রেফারেন্স হিসেবে মির্জার উল্লেøখ করছেন, অপর দিকে আওয়ামী লীগের নেতারা মির্জার সমালোচনা করছেন। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ মির্জার ‘দায়িত্বশীলতার অভাব’ আছে বলে মন্তব্য করেছেন। তার উত্তরে মির্জা বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা হইছে। আপনি দায়িত্বশীল লোক? এগুলো বন্ধ করেন। কী করবেন, জেলে নেবেন? বহিষ্কার করবেন? মেরে ফেলবেন? আমি বলব। আমি বলেছিÑ নোয়াখালী, ফেনীর অপরাজনীতির কথা। আপনারা কেন নিজেদের গায়ের ওপর নিচ্ছেন?’ অবশেষে মির্জা দুঃখ করে বলেন, ‘আমি সত্য কথা বলায় আমার সাথে কেউ নেই। সাধারণ কর্মীরা থাকলে আমি ভোট করব। না হয় বাড়ি গিয়ে শুয়ে থাকব।’ কেন্দ্রীয় কিছু নেতার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বেঈমানের চেহারা দেখব না। তাদের ওপর আল্লাহর গজব পড়বে। কেন্দ্র থেকে যারা এসব করছে। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। তোরা বেঈমান, তোরা মুনাফিক, তোরা মানুষের সাথে কথা বলে ওয়াদা রাখিস না।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমি এ কথাগুলো বলছি যাতে নেত্রী এখন থেকে সজাগ হন। এখনো তিন বছর সময় আছে। এদের লুটপাটের ইতিহাস, এদের অনিয়মের ইতিহাস আমাকে বলতে হবে। আমি বলেছি, ফেয়ার ইলেকশন হলে এরা পালানোর জন্য দরজা খুঁজে পাবে না। যদি এটার ব্যতিক্রম হয় তাহলে জিহ্বা কেটে ফেলব। বাংলাদেশ থেকে চলে যাবো।’

আবারো সেই গল্পের পটভূমিতে আসা যাক। কবির আহ্বান ছিলÑ ‘সে এসে একবার এই উলঙ্গ রাজার সামনে/নির্ভয়ে দাঁড়াক।/সে এসে একবার এই হাততালির ঊর্ধ্বে গলা তুলে/জিজ্ঞাসা করুক:/রাজা, তোর কাপড় কোথায়?’ আগেই বলা হয়েছে, কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী সেই সত্যবাদী, সরল, সাহসী শিশুকে খুঁজে পাচ্ছেন না। আমরা বাংলাদেশের বর্তমান পটভূমিতে প্রতীকী অর্থে নাগরিকদের প্রতিভূ সেই শিশুকে খুঁজছি। হয়তো বা আবদুল কাদের মির্জা সেই শিশুটি অথবা সহজ সরল ব্যক্তিটি। কারণ গুঁড়ো আর বুড়ো নাকি অপ্রিয় সত্য কথা বলে।

লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com

https://www.dailynayadiganta.com/post-editorial/555759/