২৪ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৫২

ব্যাংক কেলেঙ্কারির নায়করা ধরাছোঁয়ার বাইরে

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অনিয়মের দায় পড়ছে জনগণের ওপর। ঋণের নামে লুটপাট করা অর্থের জোগান দিতে হচ্ছে সরকারকেই। এতে নষ্ট হচ্ছে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা। পরিস্থিতি এমন যে, বছরের পর বছর ধরেই এসব ব্যাংকের মূলধন জোগান দিচ্ছে সরকার। অথচ কেলেঙ্কারি, অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, সার্বিক আর্থিক খাতেই শৃঙ্খলার অভাব রয়েছে। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা দুরূহ হয়ে পড়েছে। উপরন্তু, সরকার মূলধন জোগান দিয়েই যাচ্ছে। এবারেও প্রায় পনের হাজার কোটি টাকার মূলধন জোগান দেওয়া হচ্ছে।

ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা আনতে সরকার নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোতে কিছু সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। এসব ব্যাংককে কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে। বলা হয়, তাতে ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি মজবুত হবে এবং ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়বে। সংস্কারের আওতায় ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা কর্তৃপক্ষ পৃথক করে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনও জারি করা হয়। কিন্তু পুরো বিষয়টিই কোনো সুফল দেয়নি। বরং ঋণ জালিয়াতির ঘটনা বেড়েছে। বেড়েছে মূলধন ঘাটতির পরিমাণও। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এই দুর্বলতার কথা স্বীকার করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও। তিনি বলেছেন, আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রত্যেকটি ব্যাংকই দুর্বল ব্যাংক। তাই প্রত্যেকেরই কিছু কিছু ঘাটতি রয়েছে।

সূত্রমতে, সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি নিয়ে সম্প্রতি বৈঠকও হয়েছে। যদিও এসব ব্যাংকের মূলধন জোগানের বিষয়টি নতুন নয়। এর আগেও আট হাজার কোটি টাকা এদেরকে আর্থিক প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাংকে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপও ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়েছে। প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক বেশি। যদিও প্রকৃত উদ্যোক্তারা ঋণের জন্য ঘুরতে ঘুরতে হয়রান হয়ে যান। কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের ঋণ দিতেও ব্যাংক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সাহসের অভাব হয় না। সাম্প্রতিক সময়ে বেসিক ব্যাংক ও সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা ছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে ঋণ প্রদান অনিয়মের নানা বিষয় উদঘাটিত হয়েছে। জনতায় বিসমিল্লাহ গ্রুপ, রূপালী ব্যাংকে ঋণ প্রদান নিয়ে অনিয়মের তথ্য নতুন নয়। বেসিক ব্যাংক এমন পর্যায়ে গিয়েছে যে, এটিকে পৃথক হিসাবে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ব্যাংকের এত সমস্যা যে, আলোচনা শুরু করলে অন্য ব্যাংকের আলোচনা করা যায় না বলে জানিয়েছেন খোদ অর্থমন্ত্রীও। অথচ কেলেঙ্কারির মূল নায়করা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জনগণের করের অর্থ দিয়ে এসব ব্যাংককে মূলধন জোগান দিয়েই যাচ্ছে সরকার। যা আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা নষ্ট করছে। ফিনান্সিয়াল ইকনোমিস্ট ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী বলেন, ব্যাংকগুলোতে সুশাসন জরুরি। ঋণ প্রদানে অনিয়ম—দুর্নীতি রোধ করা, উদ্যোক্তা নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রয়োজন। কারণ, অনিয়মের মাধ্যমে যে ঋণ দেওয়া হয়, তা প্রকারান্তরে খেলাপি হয়ে যায়।

এদিকে, মূলধন সংকট, ঋণ প্রদানে অনিয়মের পরও আদায়ে কিন্তু ব্যাংকগুলোর ভূমিকা গৌণ বলে মন্তব্য করছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। তাদের মতে, প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের ঋণ অবলোপন করা হচ্ছে। পুনর্গঠনের নামে কিছু লোককে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। যা নৈতিকতা পরিপন্থী।

 

http://www.ittefaq.com.bd/print-edition/first-page/2017/03/24/184453.html