১৩ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১১:৩৭

আর নয় ‘বন্দুকযুদ্ধ’

ইবনে নূরুল হুদা : ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘এনকাউন্টার’ শব্দগুলো এখন আমাদের কাছে খুবই পরিচিত। নিকটঅতীতে প্রায় প্রতিদিনই সংবাদপত্রের পাতাজুড়ে বন্দুকযুদ্ধ বা এনকাউন্টারের খবর ফলাও করে প্রচার করা হতো। আর্তনাদ-আহাজারি করতে দেখা যেত নিহতের স্বজনদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে দাবি করা হতো নিহতরা তাদের সাথে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু ভিকটিমদের স্বজনরা তাদের সে দাবি বরাবরই জোরালোভাবে অস্বীকার করে এসেছে। তবে সম্প্রতি এই ধরনের বন্দুকযুদ্ধ বা এনকাউন্টারের ঘটনা ব্যাপকভাবে কমে এসেছে। বিশেষ করে গত বছরের ৩১ জুলাই মাসে সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর পুরো পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ফলে জনমনে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।

মূলত, মেজর সিনহা হত্যার ঘটনার পর আর তেমন কোন বন্দুকযুদ্ধ লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকি গত বছরের ২ আগস্টের পর আর কোনো ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনাও ঘটেনি। ফলে সাড়ে ১১ বছর পর দৃশ্যত দেশে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বন্ধ হয়েছে। তবে আগামী দিনে কি হবে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও শালিস কেন্দ্রের দেয়া তথ্যমতে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন ১৮৪ জন, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৬৭ জন। এছাড়া ২০১৮ সালে নিহত হন ৪২১ জন, ২০১৭ সালে ১৪১ জন এবং ২০১৬ সালে ১৭৭ জন। যা অতীতের বন্দুকযুদ্ধের ভয়াবহতার কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। কিন্তু গত বছরের ২ আগস্টের পর আর কোন বন্দুকযুদ্ধ বা এনকাউন্টারের সাথে আমাদের সাক্ষাৎ মেলেনি। যা সত্যিই ইতিবাচক।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, গত ৩১ জুলাই রাতে মেজর (অব.) সিনহা হত্যার ঘটনা না ঘটলে হয়তো ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বন্ধ হতো না। যদিও এর মাত্র দুদিন পর ২ আগস্ট সিলেটে আরও একটি দুঃখজনক ‘বন্দুকযুদ্ধ’র ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার পর কক্সবাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনী প্রধান ও পুলিশের আইজিপি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘এটাই শেষ ঘটনা। আর দেশে কোনো ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটবে না’। এরপর নতুন করে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা না ঘটায় সেনাপ্রধান ও পুলিশ প্রধানের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে। এ বিষয়ে উভয় প্রধান সাধুবাদ পাওয়ারই যোগ্য।

মূলত মেজর সিনহা রাশেদ হত্যার পর পুরো পরিস্থিতিই পাল্টে গেছে। এতোদিন এসব অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা নিয়ে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ থাকলেও তা সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে দেখা যায়নি। কিন্তু মেজর সিনহা হত্যার পর সংশ্লিষ্টদের টনক নড়েছে বলেই মনে হয়েছে। এ বিষয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য হলো, ‘সিনহা মৃত্যুর ঘটনায় সেনাবাহিনী ও পুলিশ মর্মাহত। এ ঘটনার দায় ব্যক্তির, কোনো প্রতিষ্ঠানের নয়। ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর মধ্যে সম্পর্কের কোন অবনতি ঘটবে না, চিড়ও ধরবে না।’ উভয় প্রধানের বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু কথা ও কাজের মধ্যে একটি সমন্বয় থাকা জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সেনাবাহিনী এবং পুলিশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। এই ঘটনায় কেউ যেন সেনা-পুলিশের সম্পর্ক নষ্ট না করে সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। নিরপেক্ষ তদন্তে যারা দোষী হবে এর দায়দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে।’ অন্যদিকে আইজিপির বক্তব্য হচ্ছে, ‘যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’ কিন্তু মেজর রাশেদ হত্যার পর বিষয়টি সংশ্লিষ্টরা যেভাবে আমলে নিয়েছেন অতীতে আর কোন ঘটনায় তেমনটি দেখা যায়নি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, শুরু থেকেই সংশ্লিষ্টরা যদি বন্দুকযুদ্ধের লাগাম টেনে ধরতেন তাহলে মেজর সিনহা হত্যার মত বিয়োগান্তক ঘটনার অবতারণা হতো না। তাই উভয় প্রধানের বক্তব্যকে বিলম্বিত উপলব্ধি বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিষয়টি নিয়ে আইন ও শালিস কেন্দ্রের বক্তব্য বেশ চমকপ্রদ। সংস্থাটি দাবি করছে, ‘অনেক পরে হলেও সরকার তথা প্রশাসনের হুঁশ হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধের মত ঘটনা এড়িয়ে চলছে। গত সেপ্টেম্বর থেকে দেশে কোনো বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। এরপরেও তেমন কোনো অসুবিধা হয়নি। তাহলে আগে কেন বন্দুকযুদ্ধের নামে মানুষ হত্যা করা হয়েছে?’ সংস্থাটি আরও বলেছে, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড যেকোনো মূল্যে বন্ধ করা দরকার। এতে সাধারণ জনগণ ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবে। ফিরে আসবে সুশাসন।’ কিন্তু আমাদের ভাগ্য যে মোটেই সুপ্রসন্ন নয়।

অন্যদিকে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়েছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কেবল আত্মরক্ষার্থে গুলী চালিয়ে থাকে। সরকারের বক্তব্যও একই। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য হলো, ‘আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ইচ্ছা করে বন্দুকযুদ্ধ ঘটায় না। নিজের ওপর আক্রমণ হলেই কেবল গুলী চালিয়েছে। এখন আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তাই বন্দুকযুদ্ধের মতো কোনো ঘটনা ঘটছে না।’ কিন্তু মেজর সিনহা হত্যার ঘটনার পর কেন সন্ত্রাসীরা পুলিশের ওপর গুলী ছুঁড়ছে না বা কেনই বা আর নতুন করে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনা ঘটছে না সে কথার কোন সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সংশ্লিষ্ট মনে করছেন সরকার বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদিচ্ছা থাকলেই এধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা রোধ করা খুবই সম্ভব। যা ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে বন্দুকযুদ্ধ একেবারে শূণ্যের কোঠায় নেমে আসলেও তার আগের পরিস্থিতি ছিল খুবই ভয়াবহ। মেজর সিনহা হত্যার আগ পর্যন্ত মানবাধিকার সংগঠনগুলোর জোট হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) ১৮ মাসের বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১৯ জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের ২৫ জুন পর্যন্ত বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে ৫শ ৩৫ জন। নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে সম্প্রতি এক বিবৃতিতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা তথ্য তুলে ধরা হয় এ জোটের পক্ষ থেকে। এতে বলা হয়, সংঘটিত বিচারবর্হিভূত হত্যার মধ্যে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে ৪৮১ জনের, শারীরিক নির্যাতনে মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের এবং গুলী, অসুস্থ ও গুলীবিদ্ধ লাশ উদ্ধার ৩১ জনের। যা খুবই উদ্বেগজনক।

মূলত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এক শ্রেণির সদস্য অপরাধ দমনের নামেই ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারের উদাসীনতা ও আস্কারা পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসৎপ্রবণ সদস্যরা এসব অপকর্ম চালিয়ে গেছে অবলীলায়। যার জ্বলন্ত প্রমাণ মেজর সিনহা রাশেদ হত্যা মামলার অন্যতম আসামী টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ও কারারুদ্ধ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার দাস। ‘টাকা দাও না হয় বাড়িতে অগ্নিসংযোগ কিংবা গায়েবী হামলা হবে। যদি এতে কাজ না হয় তাহলে ক্রসফায়ার দেয়া হবে’ প্রকাশ্যে এমন ঘোষণা দিয়েই তিনি টেকনাফে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। স্থানীয় বিভিন্ন থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২ বছরে কক্সবাজারে কথিত ক্রসফায়ারে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ২৮৭ জনের। এর মধ্যে টেকনাফ উপজেলাতেই মারা গেছেন ১৬১ জন। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে এখন যেসব তথ্য পাওয়া গেছে তা আরও ভয়াবহ।

মূলত গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের অনুপস্থিতি এবং আইনের শাসনের অভাবেই এমন অসাংবিধানিক ও বেআইনী কর্মকান্ড চলেছে অবলীলায়। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব আসলেও তা আমলে নেয়া হয়নি। পুলিশ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী এই বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্তে স্বাধীন আলাদা তদন্ত সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করা হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে শীর্ষ পদে থাকা সব সদস্যই অবগত আছেন যে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উঠলে তার তদন্ত করবেন তাঁদেরই কোনো সহকর্মী। তাই তদন্ত প্রতিবেদন তাদের বিরুদ্ধে যাবে না ধরে নিয়েই তারা অতিউৎসাহী হয়ে অপরাধ প্রবণতা চালিয়ে গেছেন। এ ছাড়া পরোক্ষ প্রশ্রয়ের আরেকটি বহুল প্রচলিত ব্যবস্থা হচ্ছে গুরুতর অভিযোগ উঠলে সাময়িক প্রত্যাহার। সঙ্গত কারণেই এসব অসৎপ্রবণ আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা অপরাধ প্রবণতায় অপ্রতিরোধ্য ও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন। জান দিতে হয় নিরাপরাধ মানুষকে।

তবে মেজর সিনহার হত্যাকান্ড পুরো পরিস্থিতিকে পাল্টে দিয়েছে। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকেরা বিলম্বে হলেও নড়েচড়ে বসেছেন বলেই মনে হচ্ছে। অতিঅল্প সময়ের মধ্যে সত্য উদঘাটনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের বিষয়ে র‌্যাবের তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। অভিযুক্তরা সিনহা হত্যায় বন্দুকযুদ্ধের যে কল্পকাহিনী প্রচার করেছিল র‌্যাবের চার্জশিটে তার কোন সত্যতা মেলেনি বরং পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীর একজন সাবেক কর্মকতাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু অতীতের বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের এমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। সকল ক্ষেত্রে সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগ যদি একই রকম তৎপরতা বা প্রতিক্রিয়া দেখাতো তাহলে এসব ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না। দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের মত নিন্দনীয় অপরাধের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হতো। স্বস্তি ফিরে আসতো জনমনে।

সেনাপ্রধান সিনহা হত্যার ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করলেও টিআইবি বিষয়টির সাথে একমত হতে পারেনি। সংস্থাটি দাবি করেছে, এটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে বিবেচনার সুযোগ নেই বরং তা বিচারবহির্ভূত হত্যার অপসংস্কৃতিকে স্বাভাবিকতায় রূপান্তরের একটি নজির মাত্র। এই বক্তব্যের পক্ষে টিআইবি গণমাধ্যমের খবরের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ২০১৮ সালের ৪ মে থেকে সারা দেশে শুরু হওয়া মাদকবিরোধী অভিযানে গত ৩০ জুলাই পর্যন্ত শুধু কক্সবাজার জেলায় পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের সাথে শতাধিক ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৮৭ জন। দেশের সব নাগরিকের আইনি সুরক্ষা পাওয়ার যে অধিকার সংবিধান দিয়েছে, নিহতরা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। নিহতদের সবাই মাদকের ব্যবসায় জড়িত ছিলেন না। চাঁদা না দেয়ায় মানুষকে ‘ক্রসফায়ারে দেয়ার’ ঘটনাও নেহাত কম নয়। মেজর সিনহার হত্যার ঘটনা তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। এতে কোন অভিনবত্ব ছিল না।

যাহোক গত বছরের ২ আগস্ট সিলেটে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার পর দেশে নতুন করে আর কোন বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেনি। যা আপাতত বেশ স্বস্তিদায়কই মনে হচ্ছে। এমতাবস্থায় সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিদ্যমান দায়হীনতা ও বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি রোধে সরকারের পক্ষ থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সংবিধান ও মানবাধিকারের মানদন্ড এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মেনে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া জরুরি। অন্যথায় কিছু সদস্যের অপরাধ প্রবণতা ও স্বেচ্ছাচারিতা রাষ্ট্রীয়বাহিনীকে ক্রমান্বয়ে জনগণ থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। তাই বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের আর যেন কোনভাবেই পুনারাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়ে যা কিছু করণীয় সরকারকেই করতে হবে।

কারণ, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, আইনের শাসন ও মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার তৃতীয় প্যারায় বলা হয়েছে, ‘ আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা-যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে’। আর জনগণের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চয়তা দেয়ার দায়িত্ব রাষ্ট্রের তথা সরকারের। তাই এবারের স্লোগান হোক ‘আর নয় বন্দুকযুদ্ধ’। জনগণ সরকারের কাছে দায়িত্বশীল আচরণ আশা করে।

https://dailysangram.com/post/440431