১১ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার, ৭:৪৫

হঠাৎ গাড়িজটে নিশ্চল রাজধানী

গলি থেকে প্রধান সড়কে দিনভর জনভোগান্তি

মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ চাকরি করেন রাজধানীর বাড্ডার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। থাকেন পুরান ঢাকার আলুবাজার এলাকায়। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টায় বাসা থেকে বের হয়ে ঘড়ির কাঁটা ধরে ঠিক ঠিক পৌঁছেন অফিসে। কখনো কয়েক মিনিট এদিক-সেদিক হলেও খুব বেগ পেতে হয় না। কিন্তু গতকাল রবিবার সকালে বড় বিপদেই পড়লেন তিনি। গুলিস্তান থেকে সকাল ৮টার দিকে বাসে উঠে বাড্ডায় পৌঁছলেন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। ভিক্টর পরিবহনের একটি বাসে উঠে তাঁর মতো ওই সড়ক দিয়ে রওনা হওয়া অন্তত আরো ৪০ যাত্রী পড়ে এমন ভোগান্তিতে।

জানতে চাইলে অনেকটা বিরক্তের সুরে আহসান উল্লাহ বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে এত বড় যানজটের মুখোমুখি আর হতে হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে ভাবতেই পারিনি। প্রতিদিনের মতো সঠিক সময়ে বের হলাম। গুলিস্তান পার হওয়ার পর কাকরাইল এসে গাড়ি আর এগোয় না। মৌচাক-মালিবাগ ফ্লাইওভারে গাড়ি থেমে থেমে দুই ঘণ্টায় পার হয়। এরপর আবুল হোটেল থেকে বাড্ডা যেতে বাকি সময়।’

ঠিক একইভাবে সকাল ৯টায় পোস্তগোলা থেকে রাইদা পরিবহনের একটি বাসে বারিধারার অফিসের উদ্দেশে বের হন ওমর ফারুক। প্রতিদিন অফিসে যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগলেও ভয়াবহ যানজটে পড়ে তিনিও ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছতে পারেননি। তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অফিসে জরুরি একটি ‘ইভেন্ট’ থাকলেও অংশ নিতে না পেরে তিনি খুব বিরক্ত। আবার সকাল ৯টার দিকে রামপুরার বনশ্রীর ‘সি’ ব্লকের বাসা থেকে বের হয়েছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী জীবন রহমান। তাঁর গন্তব্য ছিল গুলশান। প্রতিদিনের মতো মোটরসাইকেলে করে হাতিরঝিল হয়ে অফিসের উদ্দেশে বের হন তিনি। তবে রামপুরাসহ আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের কারণে অফিসে যেতে তাঁর সময় লাগে আড়াই ঘণ্টা।

এভাবেই গতকাল সকালে সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ঘর থেকে অফিস ও বিভিন্ন কাজে বের হয়ে সড়ক ও গলিতে যানজটে বন্দি হয়ে পড়ে নগরবাসী। যানজটের কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ‘ম্যারাথন’ উপলক্ষে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নির্দেশনা অনুযায়ী রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী গুলশান বনানীর কয়েকটি সড়কসহ সম্পূর্ণ হাতিরঝিলে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এ কারণে গতকাল ভোর থেকেই রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, মধ্য বাড্ডা, মালিবাগ, আবুল হোটেল, মগবাজার, গুলশান, মহাখালীসহ তেজগাঁও অঞ্চলের সড়কগুলোতে যানজটের তীব্রতা বেশি দেখা যায়। ফলে সড়কগুলোর আশপাশের অলিগলিতেও যানজট ছড়িয়ে পড়ে।

সরেজমিনে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের গন্তব্যে পৌঁছানোর তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানা যায়। আবার যানজটে আটকা পড়ে অনেকে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ট্রাফিক অ্যালার্ট নামক পেজে তাদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কের যান চলাচল নিয়ে তথ্য দিয়েছে, যাতে অন্যরা যাতায়াতের ক্ষেত্রে সাবধান হয়। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও যাত্রীরা এই যানজটের মূল কারণ হিসেবে বলছে হাতিরঝিল বন্ধ রাখার বিষয়টি।

এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক উত্তর বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, মূলত হাতিরঝিল দিয়ে যেসব গাড়ি চলত, তা পথ পরিবর্তন করে অন্য সড়কে যাওয়ায় যানজট বাড়ে। তবে দুপুরের পর ফের সড়কগুলো যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে যানজটের চাপ কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

সরেজমিনে বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গুলশান নতুনবাজার থেকে রামপুরা পর্যন্ত সড়কে তীব্র যানজট ছিল। তবে রামপুরা পার হয়ে আবুল হোটেল পর্যন্ত যানবাহনের চাপ কিছুটা কমলেও মালিবাগ রেলগেট থেকে শুরু হয়ে মৌচাক, মগবাজার এলাকায় যানজটে সব বাহন থমকে ছিল। একই সময়ে বনানী থেকে মহাখালী, সাতরাস্তা, মগবাজার এলাকাতেও ছিল যানজটের তীব্রতা। ঠিক একইভাবে এসব এলাকার যানবাহনের একটা চাপ চলে যায় তেজগাঁও লিংক রোড, বেগুনবাড়ীসহ তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকার সব গলিপথে। এ অঞ্চলের প্রতিটি রাস্তায় যানজট দেখা দেয়। কাউকে কাউকে গন্তব্যে পৌঁছতে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে রওনা দিতে দেখা গেছে।

এদিকে যানজটের কারণে দীর্ঘ সময় এসব এলাকায় যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়। আবার কিছু এলাকায় যানজটের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র ছিল যে ক্ষেত্রবিশেষে পাঁচ মিনিটের রাস্তা এক ঘণ্টায়ও পার হওয়া যায়নি।

রামপুরা এলাকায় ট্রাফিকের পুলিশের এক সদস্য বলেন, ‘ম্যারাথনের কারণে হাতিরঝিলের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় গাড়িগুলো বাড্ডা দিয়ে যায়। এ কারণে এই রাস্তায় গাড়ির চাপ বাড়ে।’

https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2021/01/11/994076