১০ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার, ১:০৫

নতুন বছরে পুরোনো চ্যালেঞ্জেই থাকছে স্বাস্থ্য খাত ॥ আছে নতুন চ্যালেঞ্জ

ইবরাহীম খলিল : নতুন বছরে পুরানো চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ যোগ হবে স্বাস্থ্যখাতে। নতুন কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হবে। স্বাস্থ্য খাতকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে এই খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন ২০২১ সালে কার্যকরভাবে করোনা মোকাবেলা করতে স্বাস্থ্যখাত পরিচালনা, বাজেট, ব্যয় এবং স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের সঙ্গে জড়িত স্বাস্থ্যকর্মী যেমন- চিকিৎসক, নার্স, বিশেষজ্ঞ ও টেকনিক্যাল কর্মীদের মূল্যায়ন-পরিকল্পনা ও পরিবর্তন প্রয়োজন।

এজন্য শুরুতেই সামগ্রিক বিবেচনায় জনগণের জন্য কম খরচে এবং নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য অবকাঠামোতে সামগ্রিক পরিকল্পনা ও পরিবর্তন প্রয়োজন। সর্বপ্রথম এবং আবশ্যিকভাবে একটি শক্তিশালী স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। বাহ্যিক অবকাঠামো বিচারে দেশের বেশিরভাগ মানুষের জন্য কার্যকর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জরুরি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা ও প্রশিক্ষিত দক্ষ জনবল তৈরির পাশাপাশি শুধুমাত্র ভবন নির্মাণ আর সরঞ্জামের দিকে নয়;চিকিৎসকদের কর্ম এলাকায় রাখতে সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের অঙ্গীকার ও দায়িত্বশীলতা ধরে রাখা প্রয়োজন।

এজন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৩ হাজার ৫০০টি কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিক, উপজেলা পর্যায়ে ৪২১টি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা পর্যায়ে ৬৪টি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতাল, বিভাগীয় সদরে ৩৫টি বিশেষায়িত হাসপাতালসহ বড় বড় হাসপাতাল রয়েছে। এর সঙ্গে আরও রয়েছে পাঁচ হাজার ৩২১টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক, নয় হাজার ৫২৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ১০৬টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (সরকারি ৩৬টি এবং বেসরকারি ৭০টি)। ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে এগুলো হয়তো পর্যাপ্ত না। কিন্তু দেশের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা তৈরির জন্য এগুলো বেশ শক্তিশালী ভিত। এই ভিতগুলোকে কার্যকর করে গড়ে তুলতে হবে।

সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের মূল দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। একইসাথে সংকট সামাল দিতে গিয়ে দুর্নীতি ও অপচয়ের অনেক নজির তৈরি হয়েছে। নতুন বছরে যথাযথভাবে সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করা হবে। সরকারের উচিত অতীত অভিজ্ঞতা থেকে দুর্নীতি, অপচয়, অপব্যবহার এবং অব্যবস্থাপনার প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

বিশেষ করে বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস মহামারীর শুরুর ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা লেগেছে এই খাতে। নতুন বছর শুরুই হচ্ছে করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবেলার চ্যালেঞ্জ দিয়ে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে এ ভাইরাসে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৫ লাখ ২০ হাজার ৬৯০ জন। ওই দিন ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ে ভাইরাসটি আরো শনাক্ত হয়েছে আরো ৭৮৫ জনের শরীরে। এ নিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৭ হাজার ৭৩৪ জনে। এবং বিশ্বব্যাপী এখন একাধিক ভ্যাকসিন অনুমোদন পাওয়ায় সবার জন্য ভ্যাকসিন নিশ্চিত করা এবং জনস্বাস্থ্য সমস্যাকে মোকাবেলা একটা বড় কাজ হবে সরকারের।

নতুন বছরকে সামনে রেখে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মাহফুজা রিফাত বলেন, "আমরা একটা ভাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা দেখতে চাই। আরেকটি বিষয় হলো স্বাস্থ্যের যে নির্নায়কগুলোতে আমরা এগিয়ে গিয়েছিলাম, খুব ভাল করছিলাম সেগুলো করোনার কারণে পিছিয়ে পড়ার একটা সম্ভাবনা থেকেই যায়। সেই জায়গাগুলো আমরা কীভাবে আবার যেতে পারবো, ২০২১ সালে আমরা আবার সেগুলো সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি সেজন্য আমাদের একসাথে কাজ করে যেতে হবে।

যেহেতু বিশ্বে একাধিক ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়ে গেছে আর অনেক দেশে গণহারে টিকা কর্মসূচীও শুরু হয়েছে, তাই বাংলাদেশে টিকা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও কিছু চ্যালেঞ্জ থাকবে বলে মনে করেন মিজ রিফাত। আমাদের জনসংখ্যার অনুপাতে সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা এবং দ্বিতীয়ত অগ্রাধিকারের প্রশ্নে চ্যালেঞ্জ রয়েছে তিনি আরও বলেছেন, "বলা হচ্ছে যে পর্যায়ক্রমে সবাইকে দেয়া হবে কিন্তু সেখানেও একটা স্বচ্ছতার বিষয় থাকতে হবে যে কাকে দেয়া হবে । এই পরিকল্পনাটা এখানে জরুরি এবং যেটা সামনের দিনে আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।

https://dailysangram.com/post/440122