১০ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার, ১:০২

করোনার টিকা পাওয়া নিয়ে ধূম্রজাল

ভ্যাকসিন নিয়ে সরকার তেলেসমাতি খেলা শুরু করেছে। এমন অভিযোগ দেশের অধিকাংশ রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্টজনদের। তারা বলছেন, সরকার করোনার টিকা নিয়ে তেলেসমাতি শুরু করেছে। একদিকে স্বাস্থ্য সচিব বলছেন, করোনা টিকার বিষয়ে এটা জি টু জি (গর্ভমেন্ট টু গর্ভমেন্ট) চুক্তি হয়েছে ভারতের সাথে, সরকারের সাথে সরকারের চুক্তি হয়েছে। অন্যদিকে বেক্সিমকো বলছে যে, না এটা একটি বাণিজ্যিক চুক্তি হয়েছে। তাহলে জনগণ কোনটা বিশ্বাস করবে? সরকারের মন্ত্রীরাও একেকজন একেক কথা বলছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর মধ্য দিয়েই বুঝা যাচ্ছে যে, একটা শুভঙ্করের ফাঁকি এবং যেটাকে একেবারে রুঢ়ভাষায় বলা যায় যে, টাকা কামানোর জন্য, অর্থ কামানোর জন্য একটা ফাঁক রাখা হয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশ সরকারের কোনো চুক্তি হয়েছে বলে মনে হয়না। আসলেই বেক্সিমকো ভ্যাকসিনের এই চুক্তিটা করেছে। এই টাকাটা অনেক জায়গা যাবে, এই টাকাটা কর্তা ব্যক্তিরাসহ সব জায়গায় যাবে। এই কারণে উপরে একটা প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে স্বাস্থ্য সচিবকে দিয়ে। এখানে জনগনের কোনো স্বার্থ নেই, এখানে করোনা মোকাবিলার জন্য অথবা করোনা আক্রান্ত মানুষের সেবা দেয়ার জন্য যে টিকা দেয়া দরকার-এটার কোনো কিছুই থাকবে না। এখানে থাকবে টাকা চুরি একটা ভয়ংকর ষড়যন্ত্র। অন্যদিকে সরকারের মিথ্যা রাজনীতি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা টিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের মাস্টার প্লান জনগনের কাছে পানির মতো পরিস্কার। সরকারের নানা লোকের মুখ থেকে নানা রকম গালগল্পই এর প্রমাণ। এখন এটা জনগনের কাছে পরিস্কার হয়ে গেছে যে এটা একটা টালবাহানা। প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বলেছেন, করোনা টিকার ব্যবস্থা হয়ে গেছে। ভারতই নাকি টিকা রপ্তানি করবে। কিন্তু বৃহস্পতিবার ভারতীয় হাইকমিশনার বলেছেন, বাংলাদেশে কবে টিকা আসবে তা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। তাহলে কী দাঁড়াল? টিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের স্বনির্মিত মিথ্যাচারই প্রমাণিত হয়েছে। যা বলেছে, যা কমিটমেন্ট করছে, যা ওয়াদা করছে তা মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়।

ভ্যাকসিন নিয়ে অনিশ্চিয়তা সৃষ্টির পেছনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অদূরদর্শিতাকেই দায়ী করছেন অনেকেই। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্য মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের অদূরদর্শিতা ও লুটপাটনীতির কারণেই ভ্যাকসিন নিয়ে আজ অনিশ্চিয়তা দেখা দিয়েছে। যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে তার থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে অনতিবিলম্বে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, মূল্য, সংরক্ষণ এবং বিতরণ ব্যবস্থা সম্পর্কে সুস্পষ্ট বক্তব্য জনগনের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। ভ্যাকসিন কোন দেশ থেকে আনার কথা বলছেন প্রশ্ন করা হলে ড. খন্দকার মোশাররফ বলেন, ফাইজার ও মর্ডানের ভ্যাকসিন সম্পর্কে সবাই ওয়াকিবহাল যে, এটা সংরক্ষনে একটা ৭০ ডিগ্রি মাইনাস এবং আরেকটা ২০ ডিগ্রি মাইনাস তাপমাত্রা লাগে। এসব আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য না এবং আমাদের দেশে এসব আনাও সম্ভব হবে না। এছাড়া অন্যান্য দেশ যেমন রাশিয়া স্পুটনিক টাস্ক, চীন সিনো ফার্মা অনুমোদন দিয়ে তারা ইতিমধ্যে টিকা দিচ্ছে। অতত্রব ৩ বা ৪টি টিকাই এভেলেবল হবে তা নয়। বর্তমানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েকটি ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে তবে তাদের কাছে ৫০টি টিকার ব্যাপারে এমপ্লাই করা আছে। তারা ওইসব বিভিন্ন জায়গায় পরীক্ষা শেষ হলে অনুমোদন দিচ্ছে। তাই বিকল্প বলতে আমরা যেসব টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থা কর্তৃক স্বীকৃত আমাদের দেশের তাপমাত্রায় সংরক্ষনযোগ্য টিকা এখনো পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেয়া হচ্ছে সেগুলোর সাথে নেগোসিয়েশন করা হলে আরো কম দামে আমাদের দেশ টিকা পেতে পারতো। এখনো সুযোগ আছে বলে আমি সরকারকে বিকল্প উৎস খোঁজার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন সংগ্রহ নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের ও বেক্সিমকো প্রধান নির্বাহীর বিভিন্ন ধরনের বক্তব্যে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভ্যাকসিন ক্রয় করতে গিয়ে সরাসরি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি না করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে (বেক্সিমকো) চুক্তি করায় আর্থিক ভাবে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এর মাধ্যমে ভ্যাকসিনের প্রতিটি ডোজের দাম প্রায় দ্বিগুন পড়বে। যদি কয়েক কোটি ভ্যাকসিন আমদানিও হয় তা সাধারণ মানুষ আদৌ সে ভ্যাকসিন পাবে কিনা তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। ভ্যাকসিন বিতরণের ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রণীত গাইড লাইনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতার মাধ্যমে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তিদের পরিবর্তে অন্যদেরকে এই ভ্যাকসিন দেয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে সরকারের প্রণীত নীতিমালায়। বেসরকারি খাতে উচ্চ মূল্যে চিহ্নিত কতিপয় মহলের নিকট প্রায় তিন মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন বিক্রি সরাসরি জনগনের সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থি। স্বাস্থ্য সুরক্ষা জনগনের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। শুধুমাত্র অর্থনৈতিক কারণে সাধারণ মানুষের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ কোনভাবে গ্রহনযোগ্য নয়।

করোনা ভ্যাকসিনের বিষয়ে সরকারের কর্মপরিকল্পনা অবিলম্বে জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন যে, ভ্যাকসিনের মূল্য ৪২৬ টাকা পড়বে। এই মূল্যটা কী সরকার প্রদান করবে নাকী জনগনকে প্রদান করতে হবে-এই বিষয়টা ক্লিয়ার না। অবিলম্বে সরকারের এই বিষয়ে পরিপূর্ণ একটা পরিকল্পনা রোডম্যাপ অর্থাৎ সব কিছু নিয়ে ভ্যাকসিন সংগ্রহ, বিতরণ, মূল্য, কতজনকে দেয়া সম্ভব হবে, কাদেরকে দেয়া হচ্ছে এর একটা রোডম্যাপ অবশ্যই জনগনের সামনে প্রকাশ করার দাবি আমরা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, সাধারণ মানুষ কিভাবে এই ভ্যাকসিনটা পাবে, কখন পাবে-সেই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য আমরা সরকারের কোন দফতরের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত পাইনি। তারা এটা নিয়ে রাজনীতিই করছে বেশী। সিরামের ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, এখন পর্যন্ত এই বিষয়ে সরকারের সুনির্দিষ্টভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ সেইভাবে অফিশিয়ালি কোনো কিছু এনাউন্স করেননি। আমরা যেটা পত্র-পত্রিকায় দেখছি যে, এই ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা হচ্ছে অক্সফোর্ড এস্ট্রোজেনাটার যেটা ভারতের সিরাম ইন্সটিউট থেকে। অর্থাৎ এই ভ্যাকসিন তৈরি করা হবে সিরাম ইন্সটিউটে। সেখান থেকে বাংলাদেশে নেবে। সেটাও নিচ্ছে একটা বেসরকারি ফর্মাসিটিক্যালস কোম্পানি বেক্সিমকো ফর্মাসিটিক্যিালস কোম্পানির মাধ্যমে। আমরা জানি না- বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি যে, অন্যান্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে গর্ভমেন্ট টু গর্ভমেন্ট এটাকে ডিল করছে অথবা সরসারি যে কোম্পানি প্রস্তুত করছে তাদের সাথে ডিল করছে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এই কথাটা বার বার বলছি যে, ভ্যাকসিন সংগ্রহ, ভ্যাকসিন সংরক্ষণ, ভ্যাকসিন বিতরণ এটা অত্যন্ত প্রফেশনাল, টেকনিক্যাল ও বিশেষ ব্যাপার। আমরা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানতে পারছি যে, আজ-কালকের মধ্যেই সম্ভবত আজকেই ৬শ’ কোটি টাকা ব্যাক্সিমকোর মাধ্যমে সিরাম ইন্সটিটিউটের কাছে দেবে। সেটার পর তারা ৬ মাসে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেবে। তাতে করে দেখা যাচ্ছে যে, প্রতিমাসে ৫০ লক্ষ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে। এটা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত অপ্রতুল।

ভ্যাকসিন প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, করোনার প্রতিষেধক ভ্যাকসিন ইউরোপে যেখানে ২ ডলার, আমাদের এখানে সাড়ে ৪ ডালার বা ৫ ডলার। ভ্যাকসিন উৎপাদনে ব্যয় খুব কম। যদি এক ডলার দাম হয় তাহলে ৪০ টাকা লাভ হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের যদি ভ্যাকসিনের দাম দুই টাকা হয় তাহলে আমাদের এখানে ৫ ডলার কেন? কারণ আমরা চুরি করি, দুর্নীতি করি, সেই কারণে ভ্যাকসিনের দাম বাড়ছে। তিনি বলেন, সরকার করোনার টিকা নিয়ে রাজনীতি করছে। তাদের অনেক ঘোষণাতেই বড় ধরণের গোলমাল লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭০০ কোটি। এই ৭০০ কোটি মানুষের জন্য অল্প সময়ের মধ্যে টিকা উৎপাদন সম্ভবপর নয়, তা সহজ হিসাবেই বোঝা যায়। ধনী দেশগুলোর টিকা কেনায় অস্থিরতার ফলে দরিদ্র দেশগুলো শুধু পথ চেয়ে বসে আছে। যদি দুই ডোজ করে টিকা দিতে হয় তাহলে বাংলাদেশের প্রয়োজন হবে ৩৬ কোটি ডোজ টিকা। অথচ মাসে ৫০ মিলিয়নের বেশি টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট সরবরাহ করতে পারবে না। সূত্রগুলো বলছে, বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩০টি দেশে করোনার টিকা অনুমোদনের খবর পাওয়া গেছে। বেশিরভাগ দেশেই ফাইজারের টিকাটি অনুমোদন পেয়েছে। এ ছাড়া রুশ টিকা স্পুটনিক-ভি অনুমোদন পেয়েছে রাশিয়া, আর্জেন্টিনা ও বেলারুশে। এসব দেশে ডিসেম্বর থেকে টিকা দেওয়াও শুরু হয়ে গেছে। এর উলটো চিত্র অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলোয়। এসব দেশে করোনার টিকার প্রতীক্ষা এখনো শেষই হয়নি। কবে পৌঁছাবে টিকা, তার নিশ্চয়তা এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশ দরিদ্র দেশের কাতারে আটকা পড়েছে। ভালো কোনো খবর আসছে না। তাই সবাই টিকা পাবে, সরকারের এমন বক্তব্য শুধুই রাজনীতি।

শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ ড. মাহ্বুব উল্লাহ বলেন, সংবাদপত্রে প্রায় প্রতিদিনই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলে আসছেন, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বা ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে বাংলাদেশে টিকা আসবে। সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী আদর পুনাওয়ালের সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, আগামী ২ মাসে তারা ভারতের টিকার চাহিদা পূরণ করবে। ভারত সরকারকে প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহের পরই টিকা রপ্তানি করা সম্ভব হতে পারে। ‘হতে পারে’ বাক্যাংশটি দুশ্চিন্তার অবসান তো করেনি বরং বাড়িয়ে তুলেছে। এ অনিশ্চয়তা নিয়ে বাংলাদেশের জনগণ কী পরিমাণ মানসিক চাপের মধ্যে পড়বে তা ভাষায় বর্ণনা করা কঠিন। এসব ছাড়াও আরও যে প্রশ্ন জনগণকে ভাবিয়ে তুলেছে তা হলো, ২ ডলারের টিকার জন্য আমাদের সেটা সোয়া ৫ ডলারে কিনতে হবে। ক্রয়মূল্য ও বিক্রয়মূল্যের মাঝে যে ব্যবধান তা কার বা কাদের হাতে যাচ্ছে? দেশবাসীকে পরিষ্কারভাবে হিসাব-নিকাশটা খুলে বলা কি উচিত নয়?

জনস্বাস্থ্য গবেষক এবং নির্বাহী পরিচালক, বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশন ড. মোহাম্মাদ সরোয়ার হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের স্থবিরতা থেকে মুক্তি পেতে উন্মুখ হয়ে আছে পুরো বিশ্ব। কার্যকরী ভ্যাকসিন পৃথিবীকে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরাতে বলে আমরা সবাই আশাবাদী। কিন্তু সরকারের উচিত হবে কথা বেশি না বলে কাজে তার প্রমাণ দেয়া। সরকারের শীর্ষ নেতারা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন। তাতে জনগণে শংকা সন্দেহ বাড়ছে। অন্তত করোনা টিকা নিয়ে রাজনীতি করা কারোরই উচিৎ হবেনা। তিনি বলেন, আমাদের ভাল কোয়ালিটির কিন্তু দাম কম এবং সাধারন তাপমাত্রায় (২-৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস) সংরক্ষণ করা যায় এমন অগ্রগামী ভ্যাকসিন কেন্ডিডেটগুলো প্রাক-অর্ডার করতে হবে। জেনসেন, কিউওরভ্যাক, নোভাভ্যাক্স, স্পুটনিক-৫ ভ্যাকসিনগুলো আগাম বুকিং দেয়া প্রয়োজন। এছাড়া যাদের সমর্থ আছে তারা যেন বেসরকারী উদোগের টিকা নিতে পারে সেজন্য সরকারকে উদ্যোগ নেয়া উচিত।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যেহেতু বর্তমান পরিস্থিতিতে করোনার টিকা জরুরি হয়ে দেখা দিয়েছে এবং এর প্রাপ্তি নিয়ে বিশ্বে এক ধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে, সেহেতু একাধিক উৎস থেকে টিকা পাওয়ার ব্যাপারে চুক্তি করা উচিত। টিকা প্রাপ্তি নিয়ে সব ধরনের অনিশ্চয়তা ও বিভ্রান্তির দ্রুত অবসান করা সরকারেরই দায়িত্ব।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুর রহমান বলেন, সরকারের বক্তব্যে আমরা আশায় বুক বাঁধতে পারি। তবে তারা যেভাবে এগুচ্ছে তাতে খুব কম সময়ে করোনা টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তিনি বলেন, অক্সফোর্ডের করোনা ভ্যাকসিন ছাড়াও অন্য সব ভ্যাকসিনেরই সুরক্ষা ও কার্যকারিতা নিয়ে অস্পষ্টতা রয়ে গেছে। তারপরও করোনার এ মহামারি থেকে মানুষের আপাতত মুক্তি পাওয়ার জন্য এসব ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্প নেই। তবে এটা স্পষ্ট যে, ফাইজার ও মডার্না ভ্যাকসিনের চেয়ে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির সাশ্রয়ী মূল্য ও সহজ সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারণে বাংলাদেশের জন্য বেশি উপযুক্ত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় করোনা ভ্যাকসিন কবে পাবো? কিভাবে পাবো? কে আগে পাবে? এর সাথে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, লোকাল রাজনীতি, সমাজনীতিসহ রাষ্ট্রীয় যোগাযোগ- সব কিছইু জড়িত। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে যে, আগে যত টিকা আবিষ্কার ও প্রয়োগ এর বিষয় সামনে এসেছে সবসময় এই রাজনীতি ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটের ভিতর দিয়েই যেতে হয়েছে। এখন করোনা ভ্যাক্সিনকে সামনে রেখেও এই ধরণের রাজনীতি, বৈশ্বিক যোগাযোগ, উন্নয়ন, কৌশল, ও বন্ধুরাষ্ট্র- এই বিষয়গুলো নতুন করে যোগ হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ এখন এই রাজনীতির রোষানলে পড়েছে। অনেকেই বলছেন, বিশ্ব রাজনীতির পাশাপাশি দেশীয় রাজনৈতিক মারপ্যাচের ভেতর দিয়ে জনগণকে এই করোনার টিকা নিতে হবে।

ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে অনিশ্চয়তা দূর হয়নি। এ নিয়ে একেক ব্যক্তি একেক কথা বলায় বিভ্রান্তি বাড়ছে। নিজ দেশে ভ্যাকসিন নিয়ে ট্রায়ালে বাধা সৃষ্টি করা, নিজ দেশের উদ্ভাবনকে সহায়তা না করা ও সর্বোপরি মহল বিশেষের ব্যবসায়িক স্বার্থকে জনস্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দেয়া এর কারণ। কেবল করোনা মোকাবিলাই নয়, জনগণের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার স্বার্থে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে দুর্নীতি, লুটপাট ও অব্যবস্থা থেকে বের করে ঢেলে সাজাতে হবে।

https://dailysangram.com/post/440119