১০ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার, ১২:৫৯

করোনাকালেও ‘ধর্ষণের শিকার ৬২৬ শিশু’

২০২০ সালে সারা দেশে ৬২৬ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১৪ শিশুর। গতকাল ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফরমে আয়োজিত ‘শিশু পরিস্থিতি রিপোর্ট-২০২০, পত্রপত্রিকার পাতা থেকে’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ধর্ষণের শিকার শিশুর মধ্যে বালিকা ৬১৬ ও বালক ১০ জন। এ ছাড়াও বালিকা ও বালক ক্রমানুসারে যৌন নির্যাতনের শিকার ১৫-১, ধর্ষণ চেষ্টা হয়েছে ৩৫-২ জনের উপর। ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের মধ্যে ১০১ বালিকার বাল্যবিয়ে, অপহরণ ৭ (বালিকা ৫-বালক ২), হত্যা ও হত্যাচেষ্টা ১৪৫ (৫২-৯৩), নির্যাতন ১৬ (১৫-১), আত্মহত্যা ৩৪ (২৬-৮), অপরাধের সংশ্লিষ্ট শিশু ২ (১-১), নিখোঁজ ২২ (৭-১৫), পানিতে (পুকুরে ডুবে ১১৫, নদীতে ৩০ ও বন্যার পানিতে ২০) ডুবে ১৬৫ (৯০-৭৫) জনের মৃত্যু হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা ১৫৮ (৫৫-১০৩), অন্যান্য দুর্ঘটনা ১৯২ (৭০-১২২), মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র প্রতিবেদনে বলা হয়, পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে ১০১ জনের বাল্যবিয়ে থাকলেও ফাউন্ডেশন ও তার সহযোগী সংগঠনগুলোর গবেষণা পরিসংখ্যানমতে এ সময়ে বাল্যবিয়ে হয়েছে ৯৩৫ জনের।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনামের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের শিশু-অধিকার বিষয়ক ককাসের সদস্য অ্যারোমা দত্ত এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মুহিবুজ্জামান।

এমজেএফের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য ফাতেমা ইউসুফসহ এমজেএফের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন আলোচনায় অংশ নেন।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, করোনার কারণে শিশুরা ঘরে থাকলেও তাদের ওপর নির্যাতন কমেনি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিবারের সদস্য বা প্রতিবেশীদের মাধ্যমেই শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ফাউন্ডেশনের গবেষক রাফিজা কাওসার মৌসুমী বলেন, পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমেই শিশুরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে ধর্ষণের শিকার শিশুর বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও ধর্ষকের মনোবৃত্তি নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। এটা নিয়ে সামাজিক সচেতনতা প্রয়োজন। শিশু নির্যাতন কমাতে সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দেন মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের। শিশু অধিকার বিষয়ক পৃথক একটি অধিদপ্তর করতে সরকারের প্রতি আহ্বান তাদের। শিশু নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র আরো ভয়াবহ হতে পারে বলে মনে করেন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম। মূলত আটটি পত্রিকা থেকে নির্যাতনের এ তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু সব ক্ষেত্রে ঘটনাগুলো পত্রিকায় আসে না। শাহীন আনাম বলেন, করোনার জন্য একটি ইউনিক সময় আমরা কাটাচ্ছি, সেটাকে অন্য কোনো বছরের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। তারপরও আমরা দেখছি, বাড়িতে থাকার পরেও কিন্তু অনেক শিশু অত্যাচার- নিপীড়নের মুখে পড়েছেন। এই সময়ে বাল্যবিবাহ ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের শিশুদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে ‘আরো কার্যকর ব্যবস্থা’ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। সংস্থাটি ২০১১ সাল থেকে সংবাদপত্রকে উৎস হিসেবে ধরে শিশু সংক্রান্ত বিভিন্ন ধরনের সংবাদ নিয়মিত সংরক্ষণ করে। সংস্থাটি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করলেও শিশু নির্যাতন, শিশুর সাফল্য, হত্যা, আত্মহত্যা, যৌন নিপীড়নসহ শিশুর অধিকার বিষয়ক বিভিন্ন ক্ষেত্রে নজর দিয়ে থাকে।

এই সময়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ১৯২ জন শিশু নিহত হয়েছে, যার মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শিশুর সংখ্যা ১৫৮ জন। পাশাপাশি পানিতে ডুবে মারা গেছে ১৬৫ জন। এ ছাড়া ধর্ষণ, ধর্ষণচেষ্টা, হত্যা, অপহরণ, নিখোঁজ ও নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছে আরো ১৪৫ জন শিশু। করোনাকালীন গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার সময় ৭ জন মেয়ে নির্যাতনের শিকার হয়, যার মধ্যে তিনজন শিশু মারা যায়।

পর্যালোচনা অনুযায়ী, ২০২০ সালে ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুরাই ধর্ষণের শিকার হয়েছে বেশি। এরপর রয়েছে ৭ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুরা। শিশুদের চকলেট বা খাবারের লোভ দেখিয়ে, ভয় দেখিয়ে, মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে এবং ঘরে একা পেয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। এমনকি ত্রাণ দেয়ার কথা বলেও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই সময়ে আত্মহত্যা করেছে ৩৪ শিশু এবং আত্মহত্যার চেষ্টা করতে গিয়ে আহত হয়েছে ২৩ জন।

২০২০ সালে নিখোঁজ ও অপহরণের শিকার হয়েছে ২৯ শিশু। অপহরণের কারণ হিসেবে টাকার জন্য, প্রেমঘটিত সমস্যা, বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, প্রতিশোধ গ্রহণ, পাচার ও মুক্তিপণ দাবির কথা উঠে এসেছে সংবাদে। ২০২০ সালে ১২ ধরনের ইতিবাচক সংবাদের সংখ্যা ৩৩০টি এবং ২৬ ধরনের নেতিবাচক ঘটনায় ১৩৬১টি সংবাদের কথা বলা হয়েছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=258005