রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মাঠেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন রংপুর-২ আসনের সাংসদ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী। ছবিটি সাংসদের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
২৪ মার্চ ২০১৭, শুক্রবার, ৮:৪৭

বদরগঞ্জে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

তিনটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে দলীয় কার্যক্রম

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মাঠেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এমনিতেই শ্রেণিকক্ষ-সংকট। তার ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয় নাম দিয়ে তিনটি শ্রেণিকক্ষ দখল করে সেখানে দলীয় কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় মাঠেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শিখা বানু গত সোমবার দুপুরে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয় চালুর নামে বিদ্যালয়ের সভাপতি কৈলাশ চন্দ্র রায় শ্রেণিকক্ষ দখল করে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এতে শ্রেণি পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
জানতে চাইলে শিখা বানু প্রথম আলোকে বলেন, কক্ষ তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। সেখানে নিয়মিত ক্লাস নেওয়া হতো। এ ছাড়া গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের ১০ হাজার টাকা মূল্যের দুটি গাছ কেটে অর্থ আত্মসাৎ করেন কৈলাশ চন্দ্র। ওই ঘটনায় ১৬ ফেব্রুয়ারি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে কৈলাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
উপজেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। একটি ভবনে চারটি পাকা কক্ষ এবং পাশেই আধা পাকা আরও তিনটি কক্ষ রয়েছে। আধা পাকা কক্ষের সামনে সাইনবোর্ডে লেখা—বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের সাংসদ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর নাম লেখা রয়েছে। কক্ষের দেয়ালে লেখা, সাংসদ ১৯ ফেব্রুয়ারি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টির উদ্বোধন করেন।
আধা পাকা তিনটি শ্রেণিকক্ষের মধ্যে দুটির দরজা-জানালা নেই। একটিতে তালা ঝুলছে। তবে কক্ষটির জানালা খোলা। জানালা দিয়ে দেখা যায়, ভেতরে একটি টেবিল, কয়েকটি প্লাস্টিকের চেয়ার ও একটি টেলিভিশন রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা প্রথম আলোকে বলেন, লোহানীপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য এবং মাঠেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি কৈলাশ চন্দ্র রায় ওই শ্রেণিকক্ষগুলো এ বছরের জানুয়ারি মাসে দখল করেন। সেখানে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম শিশুদের কোনো দিনও ক্লাস নেওয়া হয়নি। ওই কক্ষের চাবি কৈলাশ চন্দ্রের কাছে থাকে। তিনি দলীয় কাজে কক্ষটি ব্যবহার করছেন। এতে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস নির্ধারিত সময়ের তিন ঘণ্টা পরে শুরু করা হচ্ছে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কক্ষসংকটের কারণে বিদ্যালয়ের একটি ভবনের চারটি কক্ষের মধ্যে একটি অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অন্য তিনটিতে চলে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪৪। শিক্ষক আছেন মাত্র দুজন।
জানতে চাইলে কৈলাশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘অনেক দিন ধরে ইউনিয়নে একটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল দেওয়ার কথা ভাবছি। কিন্তু কোথাও জায়গা পাই নাই। আমি এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের (মাঠেরহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়) সভাপতি। এখানে বহু দিন ধরে তিনটি কক্ষ পড়ে আছে। এ কারণে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে ব্যক্তিগতভাবে এক লাখ টাকা খরচ করে পরিত্যক্ত কক্ষ তিনটি সংস্কার করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছি। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সাংসদ নিজে এসে ১৯ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যালয়টির উদ্বোধন করে গেছেন। তবে এখনো প্রতিবন্ধী স্কুলের কার্যক্রম শুরু করা হয়নি। শিক্ষার্থীও ভর্তি করা হয়নি। শিগগিরই স্কুলটি চালু করা হবে। এখন আমরা সেখানে বসি। দলীয় লোকজন আসেন।’
এদিকে সাংসদ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী ওই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী ও অটিজম বিদ্যালয়টি উদ্বোধনের কথা অস্বীকার করে বলেন, যদি এমনটি হয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘স্কুলের সরকারি জায়গা ও শ্রেণিকক্ষ দখল করে কেউ অন্য কোনো নামে স্কুল করতে পারেন না। অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল হক বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। অবশ্যই তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

http://www.prothom-alo.com/bangladesh/article/1118335/