বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও বেতন-ভাতার দাবিতে শনিবার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আদমজী ইপিজেডের সামনের সড়কে আগুন জ্বালিয়ে পোশাক শ্রমিকদের অবরোধ -যুগান্তর
১০ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার, ১২:৫৮

হঠাৎ শ্রমিক অসন্তোষে শঙ্কিত ব্যবসায়ীরা

আদমজী ইপিজেডে হঠাৎ করে শ্রমিক অসন্তোষ ভাবিয়ে তুলেছে ইপিজেডের ব্যবসায়ীদের। এ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। এ আন্দোলন কোনো ষড়যন্ত্র কি না, তাও ভাবছেন তারা।

এজন্য ব্যবসায়ীরা সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তবে আন্দোলনরত শ্রমিকরা বলছেন, গত চার মাস ফ্যাক্টরি বন্ধ থাকায় তারা পেটের দায়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।

জানা যায়, আদমজী ইপিজেডের কুনতং অ্যাপারেলস লিমিটেড (ফ্যাশন সিটি) গত বছরের ১০ আগস্ট হঠাৎ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে এরপরও শ্রমিকদের তিন থেকে চার হাজার টাকা করে বেতন পরিশোধ করে আসছিল মালিকপক্ষ।

তার ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ আগামী ১২ জানুয়ারি বেতন দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এরপরই দেখা দেয় শ্রমিক অসন্তোষ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নারী শ্রমিক বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলাম। এ সময় আনসার ও ইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালায়। তারা নারী শ্রমিকদের লাঠিচার্জ করে।

একজন গর্ভবতী নারীকে মারধর করে গুরুতর আহত করে। তিনি বলেন, আমরা কোনো কিছু ভাঙচুর করিনি। ৪ মাস ধরে আমাদের যে বেতন দেওয়া হচ্ছে সেই টাকায় সংসার চলছে না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা আন্দোলনে নেমেছি।

ওই নারী শ্রমিক আরও বলেন, ‘আমাদের দাবি একটাই, আমাদের বেতন পরিশোধ করে দিক। বেতন বুঝে পেলে আমরা চলে যাব। উনাদের কোম্পানি উনারা চালু রাখুক বা বন্ধ করে দিক এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুরুষ শ্রমিক বলেন, ‘স্যারেরা (ফ্যাশন সিটির কর্মকর্তারা) প্রথমে দুদিনের কথা বলে ফ্যাক্টরি বন্ধ করেছেন। আমাদের অগ্রিম ৪ মাসের বেতন ও ফান্ডের টাকা বুঝিয়ে দিতে হবে। যদি আমাদের দাবি না মানা হয় তাহলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’

আরেক শ্রমিক বলেন, ‘এমনিতেই করোনার মধ্যে কোনোরকম খেয়েপরে বেঁচে আছি। ছেলেমেয়ে নিয়ে কোনো কোনো সময় তিনবেলার জায়গায় দুবেলা খাচ্ছি। নতুন বছরে ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করতে হবে, কিন্তু টাকা নেই। টাকা কোথায় পামু? ফ্যাক্টরি তো বন্ধ।’

এ ব্যাপারে বিকেএমইএ-এর পরিচালক মজিবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, এমনিতেই করোনা মহামারির পর আমাদের গার্মেন্ট ব্যবসায় অনেক সমস্যা।

তার ওপর তাদের এ আন্দোলন আমাদের আতঙ্কিত করে তোলে। তবে আমি মনে করি সরকারের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোর সক্রিয়তার ফলে তারা কোনো ষড়যন্ত্র করতে পারবে না, কোনো সমস্যা করতে পারবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আদমজী ইপিজেডের একটি পোশাক কারখানার জিএম এ প্রতিবেদককে বলেন, করোনার কারণে এমনিতেই পোশাক খাতের ব্যবসায় নানা রকম সমস্যা চলছে। এর মধ্যে শ্রমিক আন্দোলন আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

এ আন্দোলনের ফলে ভোরের দিকে আমাদের ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা আসার পথে দুর্ভোগে পড়ে। তবে এ কর্মকর্তা আন্দোলনের জন্য আদমজী ইপিজেডের নিরাপত্তাপ্রহরী ও আনসারদের অদূরদর্শিতাকে দায়ি করেছেন।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/382336