১০ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার, ১২:৫৭

বাড়তি প্রভিশন সংরক্ষণ থেকে রেহাই পেল ব্যাংক

প্রকৃত মুনাফা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে

বিদায়ী বছরে সব ধরনের ঋণের ওপর বাড়তি এক শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ থেকে রেহাই পেয়েছে ব্যাংকগুলো। যারা গত বছর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেননি কেবল ওইসব ঋণের ওপর বাড়তি এক শতাংশ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। অন্যদের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োজন হবে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন এবিবিকে (অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ) চিঠি দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সিদ্ধান্ত ব্যাংকগুলোর প্রকৃত মুনাফা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে ব্যাংকাররা মনে করছেন।

জানা গেছে, ব্যাংক বছরে যে পরিমাণ পরিচালন মুনাফা করে তার ওপর প্রথমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ব্যাংকের সাড়ে ৩৭ শতাংশ এবং তালিকাবহির্ভূত ব্যাংকগুলোকে ৪০ শতাংশ করপোরেট ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। এরপর ব্যাংকগুলোর যে পরিমাণ খেলাপি ঋণ থাকে তার ধরনভেদে ২০ শতাংশ থেকে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। বাধ্যতামূলক সব ঋণের ওপর সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন সংরক্ষণের পর ব্যাংকগুলোর রিজার্ভ তহবিলে মূলধন সংরক্ষণ করার পর যেটুকু অবশিষ্ট থাকে, তা থেকে শেয়ারহোল্ডারদের একটি অংশ মুনাফা বণ্টন করা হয়। এরপরেও অবশিষ্ট যেটুকু থাকে তা রিটেইন আর্নিং হিসাবে ব্যাংক সংরক্ষণ করে। মূলত ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করতে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়।

করোনা মহামারীর কারণে বিদায়ী বছর ঋণ আদায় কার্যক্রমের ওপর শিথিলতা আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনাভাইরাসের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে এক বছর কেউ ঋণ পরিশোধ না করলেও তাকে খেলাপি করা যাবে না -কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন নির্দেশনায় ব্যাংকের ঋণ আদায় কার্যক্রম অস্বাভাবিক হারে কমে যায়। ঋণ নিয়মিত থাকলে শুধু জেনারেল প্রভিশন ১ শতাংশ সংরক্ষণ করতে হয়। আর খেলাপি হলে নীতিমালা অনুযায়ী খেলাপির ধরনভেদে শতভাগ পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। ঋণ আদায় কার্যক্রমে ছাড় দেয়ায় বিদায়ী বছরে নতুন করে কাউকে ঋণখেলাপি করা হয়নি। এতে ঋণ নিয়মিতই থেকে যায়। এ বিষয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলোর জন্য এক নির্দেশনা প্রদান করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, গত বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ না হলেও তা খেলাপি বিবেচিত হবে না।

এ দিকে ঋণ আদায় না হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী ঋণ নিয়মিত থেকে যায়। আর নিয়মিত ঋণ থাকলে বাড়তি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে না। এর ফলে ঋণ আদায় না হয়েও বাড়তি প্রভিশন সংরক্ষণ না করায় ব্যাংকের কৃত্রিম মুনাফা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। কৃত্রিম মুনাফা কমাতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গত ১০ ডিসেম্বর নতুন করে এক সার্কুলার জারি করে। অনাদায়ী ঋণের সুদ ব্যাংকগুলো যাতে আয় খাতে নিতে না পারে সে জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। বলা হয়, ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ থেকে অর্জিত সুদ আয় খাতে নিতে হলে ৩১ ডিসেম্বর ভিত্তিক ব্যাংকের হিসেব চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে অনাদায়ী ঋণ (এসএমএ) বা বিনিয়োগসহ সব অশ্রেণীকৃত বিনিয়োগের বিপরীতে ১ শতাংশ অতিরিক্ত জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। এ নির্দেশনাই পরিপালন করতে ব্যাংকগুলোর বিপত্তি বাঁধে। সব অশ্রেণীকৃত ঋণের ওপর ১ শতাংশ জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ব্যাংকগুলোর মুনাফা থেকে বাড়তি অর্থ সংরক্ষণ করতে হবে। এতে আয় আরো কমে যাবে। এমনি পরিস্থিতিতে ব্যাংকাররা এ বিষয়ে বিবেচনা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে আবেদন করেন। ব্যাংকারদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সম্প্রতি ২৮ সেপ্টেম্বর জারিকৃত সার্কুলারে স্পষ্ট করা হয়। বলা হয়, শুধু যারা গত বছর ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেননি কেবল ওইসব ঋণের ওপর বাড়তি এক শতাংশ জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে। অন্য কোনো ঋণের ওপর অতিরিক্ত এক শতাংশ জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হবে না।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন নির্দেশনা ব্যাংকগুলোতে কিছুটা হলেও স্বস্তি বয়ে এনেছে। কারণ কোনো ব্যাংকের ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ থাকলে এর ওপর বাড়তি ১ শতাংশ জেনারেল প্রভিশন সংরক্ষণ করতে ২০০ কোটি টাকা প্রয়োজন হতো। এতে প্রকৃত আয় আরো কমে যেতো। এখন অন্তত এ থেকে ব্যাংকগুলো কিছুটা হলেও রেহাই পেল বলে তারা মনে করছেন।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/554788/