৬ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১১:০৩

কৃষি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন

উন্নয়ন প্রকল্পে গেস্টরুম ভিভিআইপিদের জন্য

এটি অবশ্যই অপচয় -ড. জাহিদ হোসেন - ডকুমেন্ট পেলে আইএমইডির মাধ্যমে তদন্ত করা হবে -পরিকল্পনামন্ত্রী

কৃষি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পে ভিভিআইপিদের জন্য বিলাসবহুল অত্যাধুনিক গেস্টরুম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাবে এক হাজার বর্গফুটের ভিভিআইপি কক্ষে আধুনিক মানের ফিটিংস ও ফ্যামিলি ফ্যাসিলিটিজের কথা বলা হয়েছে।

সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আজ বুধবার বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (ডিপিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হবে। ডিপিইসি সভার কার্যপত্র সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে এ ধরনের ব্যয়কে অপ্রয়োজনীয় ও অপচয় হিসাবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ ধরনের ব্যয় পরিহার করা উচিত।

‘গোপালগঞ্জ জেলায় বিএআরআই’র কৃষি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন এবং দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণের মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে ভিভিআইপিদের জন্য গেস্টরুম নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এটি গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরার ৩৮টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে।

প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাবে পানির ট্যাংকের জন্য অনুমোদিত ব্যয়ের অতিরিক্ত ব্যয় ৭০ লাখ টাকা, সীমানাপ্রাচীরের উচ্চতা দুই দশমিক ১৩ মিটার থেকে বাড়িয়ে চার দশমিক ১৩ মিটার করার জন্য অতিরিক্ত ব্যয় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা হবে। এ ছাড়া আরসিসি সড়কের পুরুত্ব ছয় ইঞ্চির পরিবর্তে আট ইঞ্চি করার জন্য অতিরিক্ত ব্যয় ৮০ লাখ টাকা, ভূমি উন্নয়ন ব্যয় অতিরিক্ত ৯৫ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এ ধরনের কাজ অবশ্যই অপচয়। এমন প্রকল্পে গেস্টহাউস কেন প্রয়োজন হবে-সেটি বড় প্রশ্ন। এ ছাড়া রাস্তার পুরুত্ব বৃদ্ধি কিংবা দেওয়ালের উচ্চতা কেন বাড়তে হবে তাও বোধ্যগম্য নয়। বরং এ টাকা দিয়ে গবেষণাগারে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি, কেমিক্যাল ক্রয় কিংবা গবেষণা কাজে দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এমন কার্যক্রম করা উচিত ছিল।

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, এ ধরনের ব্যয়ের বিষয় আমার জানা নেই। কারো কাছে ডকুমেন্ট থাকলে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন। আমি আইএমইডির (বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ) মাধ্যমে তদন্ত করে দেখব।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মেসবাহুল ইসলাম সোমবার যুগান্তরকে বলেন, এখন অনেক জেলায় আন্তর্জাতিকমানের গেস্টরুম তৈরি হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় হয়তো এটি হতে পারে। তবে প্রকল্প প্রস্তাব না দেখে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্মাণে কাজে প্রতি বর্গমিটারের ব্যয় ভিন্ন রকম হতে পারে। এটি নির্ভর করে ভবনটি কীভাবে তৈরি হচ্ছে তার ওপর। বিভাগীয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির বৈঠকে বিষয়টিতে নজর দেওয়া হবে।

জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক এসএম কামরুজ্জামান বলেন, এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করব না। তবে এটুকু বলতে পারি, কৃষিমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। গোপালগঞ্জে ভিভিআইপিদের জন্য গেস্টরুম লাগবে বলে তিনি (কৃষিমন্ত্রী) ওপর মহল থেকে হয়তো নির্দেশনা পেয়ে থাকতে পারেন। এক প্রশ্নের জবাবে কামরুজ্জামান বলেন, প্রকল্প প্রস্তাবটি তৈরি করেছেন পরামর্শক। এ ছাড়া আমি তো ইঞ্জিনিয়ার নই। তাই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। তবে শুধু প্রস্তাব দিয়েছি। মন্ত্রণালয় থেকে যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়া হবে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন না দিলে আমরা এক পা-ও ফেলতে পারব না।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এটির মোট ব্যয় ১৫৭ কোটি টাকা ধরা হয়। কিন্তু এখন সার্বিকভাবে ৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা কমিয়ে মোট ১৪৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ধরে প্রথম সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সূত্র আরও জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২০ একর জমি অধিগ্রহণের জন্য ৯৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে এ খাতে প্রকৃত খরচ হয়েছে ৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এতে ২৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। মূলত এ টাকা দিয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে নির্মাণ কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে এবং নির্মাণ কাজের রেট বাড়িয়ে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া সংশোধনের এ পর্যায়ে নতুন প্রস্তাব হিসাবে বলা হয়েছে: অনুমোদিত মূল ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট একটি ছয়তলা ল্যাব কাম ফাংশনাল ভবন (২৮০০ বর্গমিটার বা ৩০ হাজার ১২৮ বর্গফুট) নির্মাণের জন্য ১০ কোটি ৭৭ লাখ টাকার সংস্থান রয়েছে। ভবনটির পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলায় প্রশিক্ষণার্থীদের (প্রকল্প এলাকার কৃষক ও বাস্তবায়নকারী সংস্থার বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা) ৯টি কক্ষে ১৭ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু সংস্থার বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে অতিরিক্ত ২০ জনের জন্য ভবনটি আনুভূমিকভাবে ১৯৮০ বর্গমিটার বা ২১ হাজার ৩০৫ বর্গফুট সম্প্রসারণের জন্য অতিরিক্ত ১২ কোটি ৮ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে একনেক অনুমোদিত ডিপিপিতে প্রতি বর্গফুটের নির্মাণ ব্যয় ছিল ৩ হাজার ৫১২ টাকা। বর্তমানে সংশোধনী প্রস্তাবে অতিরিক্ত কাজের প্রতি বর্গফুটের ব্যয় ৬ হাজার ৮ টাকা।

প্রস্তাবিত সংশোধনে উল্লেখ করা হয়েছে: বর্ধিত ২১ হাজার ৩০৫ বর্গফুট কাজের নির্মাণ খরচ রেট শিডিউল-২০১৮ অনুযায়ী প্রাক্কলন করা হয়েছে। কিন্তু সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ গেস্টরুমে আধুনিক ফিটিংস, ইন্টারনাল ডেকোরেশন ইত্যাদির জন্য প্রতি বর্গফুটের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আরও বলা হয়, গেস্টরুমে অত্যাধুনিক আসবাবপত্র থাকবে। নিচতলায় জিমনেশিয়ামসহ তৃতীয় তলায় প্রত্যেক ভিভিআইপির জন্য এক হাজার বর্গফুটের রুম তৈরি করা হবে। এর মধ্যে ফ্যামিলি সুবিধা থাকবে। এ ছাড়া প্রকল্পের আওতায় নৌকাসদৃশ ভবন নির্মাণ, পুকুর, ফ্লোরের উচ্চতা ১২ ফুট করা হবে।

https://www.jugantor.com/todays-paper/last-page/381126/