৬ জানুয়ারি ২০২১, বুধবার, ১১:০১

বছরজুড়ে ছিল বিদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরে আসার খবর

করোনা পরিস্থিতিতে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বিদেশে জনশক্তি রফতানি। বেড়েছে দেশে ফেরত আসার সংখ্যা। বছরজুড়ে ছিল বিদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরে আসার খবর। বিশেষ করে যেসব নারী জীবনে সচ্ছলতার মুখ দেখার জন্য বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন তাদের অনেকেই নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে লৌমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন। পাশাপাশি পুরুষরাও নানা তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরেছেন।

আইওএমের গবেষণা অনুযায়ী বিদেশ থেকে দেশে ফেরা শতকরা ৭০ ভাগ অভিবাসী কর্মীই বেকার। তাদের পরিবার-পরিজন এখন নিঃস্ব ও বিপন্ন। কিছু বেকার কর্মী তাদের শেষ সম্বল সঞ্চয়টুকুও ভেঙে খাচ্ছেন। নারী অভিবাসী কর্মীদের অবস্থা আরও খারাপ। শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন, বিরতিহীন অত্যধিক কাজের চাপ, খাদ্য ও মজুরি বৈষম্য তাদের নিত্য সঙ্গী। সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে দেশে ফিরেও এই নারী কর্মীরা কলঙ্ক তিলক বহন করে নিগৃহীত হচ্ছেন।

বিদেশে নারী গৃহকর্মীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারী সংস্থা বমসা বলছে, করোনাকালে (এপ্রিল-নভেম্বর) নানা কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ৩ লাখ ২৭ হাজার প্রবাসী দেশে ফিরেছেন। তার মধ্যে ৪০ হাজার নারী কর্মী (গৃহকর্মী) ফিরেছেন। যাদের মধ্যে শুধু সৌদি আরব থেকেই ফিরেছেন ১৭ হাজার ৩ শ’ জন। এদের অধিকাংশই ফিরেছেন খালি হাতে। কিংবা বেতনের চেয়ে কম নিয়ে। অনেকে আবার নানা নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরেছেন। কাজ না থাকা, চুক্তি বা আকামার মেয়াদ না বাড়ানো, অবৈধ হয়ে পড়া এবং অনেকেই কারাভোগ শেষে আউট পাস নিয়ে দেশে ফিরেছেন বলে জানিয়েছে অভিবাসী নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন। তারা বলছে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে করোনাকালে প্রবাসীদের দেশে ফেরার হার ৫ গুণেরও বেশি। দেশে ফিরে এসব রেমিট্যান্সযোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ফেরত আসা প্রবাসীদের ৭০ শতাংশই জীবিকা সঙ্কটে রয়েছেন। ৫৫ শতাংশ বলছেন তাদের উপর ঋণের বোঝা রয়েছে।

১৬টি বেসরকারি সংস্থার নেটওয়ার্ক বিসিএম-এর জরিপ মতে, করোনাকালে ৬১ শতাংশ পরিবারে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি। ৭৪ শতাংশ অভিবাসী (ফেরত আসা) কোনো টাকা পয়সা নিয়ে আসতে পারেননি।
২০১৩ সালের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনে নারী অভিবাসী শ্রমিকের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি উল্লেখ করে ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, গন্তব্য দেশে নারী অভিবাসীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। মূল সমস্যা হলো, নারী শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়া। সচেতনতা এবং অজ্ঞতার কারণে দালাল বা প্রতারকের পাল্লায় পড়ে কিশোরী মেয়েরা অভিবাসনের নামে পাচার হয়ে যায় এবং কেউ কেউ লাশ হয়ে ফেরত আসে।

মহামারির মধ্যেও নির্যাতন থেমে নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, বমসা’র হটলাইনে প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০টি ফোন গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন অভিযোগ পায়। যেমন- ফলপ্রসূ সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিধানের অভাবে আমাদের নারী শ্রমিকেরা বিরতিহীনভাবে দীর্ঘ সময় কাজ করতে ও এক বাসার পরিবর্তে ২/৩ বাসায় কাজ করতে বাধ্য হয়। এক কাজের কথা বলে অন্য কাজ করতে বাধ্য করে। বেতন কম দেয়। সময়মতো বেতন দেয় না। দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকা, অবসর-বিনোদনের কোনো সুযোগ না থাকা, দেশে যোগাযোগ করতে না দেয়া, বাথরুমে আটকে রাখা, শারীরিক, মানসিক এবং কখনো কখনো যৌন নির্যাতনের শিকার কিংবা নিখোঁজ বা হত্যার শিকার হওয়ার খবর আসে।
বমসা’র পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬৪ জন নারী অভিবাসীর লাশ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড। এর মধ্যে ২২টি সৌদি আরব থেকে, ১৪টি লেবানন, ১১টি জর্ডান, ৭টি ওমান এবং ৪টি আরব আমিরাত থেকে এসেছে।

২০১৬ থেকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ৪৭৩টি নারী অভিবাসীর লাশ এসেছে। এর মধ্যে এক সৌদি আরব থেকেই এসেছে ১৭৫টি। এর মধ্যে ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার ১৪ বছরেরর কিশোরী উম্মে কুলসুম, কুমিল্লার ১৩ বছরের নদী আক্তারের লাশ এসেছে, যাদেরকে ২৫ বছরের যুবতি বানিয়ে সৌদি আরব পাঠানো হয়েছিল।

২৫ বছরের নিচে কাউকে গৃহকর্মী হিসেবে সৌদি আরবে পাঠানো যায় না। কিন্তু তাদের কীভাবে পাঠানো হলো এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে বমসার পরিচালক বলেন, অনতিবিলম্বে নারী অভিবাসনের অন্তরায় সকল বাধা দূর করার জন্য ২০১৩ সালের বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী আইনের সংশোধন করে নিরাপদ অভিবাসনের মাধ্যমে নারী অভিবাসী শ্রমিকের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিধান অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। বাধ্যতামূলকভাবে দেশে ফেরা প্রতিটি লাশের পোস্টমর্টেমের মাধ্যমে মৃত্যুর কারণ চিহ্নিত করা এবং এ ব্যাপারে দূতাবাসের পদক্ষেপ মনিটরিং ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। যেসকল ব্যক্তির দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের জবাবদিহিতা এবং শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে গন্তব্য দেশে যেসব মামলা দায়ের হয়েছে দূতাবাসের মাধ্যমে সেসব মামলার ফলোআপ ও মনিটরিং ব্যবস্থা করতে হবে।

২০১৮ সালের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড অ্যাক্টের ৯(খ) ধারা অনুযায়ী প্রত্যাগত নারীকর্মীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে পুনর্বাসন ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য আলাদা প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে নারী অভিবাসী ও তাদের পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে দাবি জানায় বমসা।

বমসা বলছে, সবচেয়ে বড় এবং ভয়ঙ্কর সমস্যা হলো, দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে স্পন্সরশীপ ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়ায় কর্মীর সকল খরচ বহন করে নিয়োগকারী এবং চুক্তিপত্রে যথেষ্ট সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় এদেরকে (গৃহকর্মী হিসেবে যাওয়া) কৃতদাসীর মতো ব্যবহার করা হয়।

বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এপ্রিল থেকে নভেম্বর এই আট মাসে অন্তত পাঁচ লাখ মানুষের বিদেশে কর্মসংস্থান হতো। এর মধ্যে প্রায় এক লাখের পাসপোর্ট-ভিসা সব প্রস্তুত ছিল। কিন্তু, তারা করোনাভাইরাস ও লকডাউনের কারণে যেতে পারেননি। ২০২১ সালের জুলাইয়ের আগে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনাও কম।

একদিকে যেমন কর্মসংস্থান বন্ধ, অন্যদিকে রোজই চাকরি হারিয়ে বিদেশ থেকে ফিরছে কর্মীরা। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, স্বাভাবিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এপ্রিল থেকে ১২ ডিসেম্বর এই সময়ে তিন লাখ ৬০ হাজার কর্মী বিদেশ থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৪ হাজারই আবার নারী কর্মী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গত এক যুগ ধরে বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর গড়ে ছয় থেকে সাত লাখ মানুষ বিদেশে কাজ করতে যাচ্ছিলেন। সেই হিসেবে প্রতি মাসে যান ৫০ থেকে ৬০ হাজার কর্মী। কিন্তু, করোনার কারণে এপ্রিলে বিদেশে লোক পাঠানো প্রায় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। গত কয়েকমাস ধরে সামান্য কিছু কর্মী গেলেও এই বছর দুই লাখ কর্মী বিদেশে যাবেন কি না, তা নিয়েও শঙ্কা আছে। অথচ স্বাভাবিক বছর হলে সাত লাখ কর্মী যেত, যেমনটা গেছে গত বছরও।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর কমপক্ষে ছয়-সাত লাখ শ্রমিক বৈধভাবে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতেন। এদের প্রধান গন্তব্য ছিল সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ; কিন্তু চলতি বছরের চিত্র একবারেই ভিন্ন। সৌদি আরব ও আরব আমিরাতসহ বিশ্বের ২৮টি দেশ থেকে গত আট মাসে তিন লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরেছেন। তাদের মধ্যে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৪৮৪ জন পুরুষ ও ৩৯ হাজার ২৭৪ জন নারী। এদের মধ্যে ৫৬ শতাংশেরও বেশি কর্মী মধ্যপ্রাচ্যের দুটি দেশ, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব থেকে ফেরত এসেছেন। এপ্রিল থেকে নভেম্বর এই আট মাসে তারা দেশে ফিরেছেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের প্রবাসীকল্যাণ ডেস্ক থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

মহামারি কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে কর্মহীন হয়ে কিংবা চাকরি মেয়াদ শেষ হওয়ায় অধিকাংশ কর্মী দেশে ফিরে এসেছেন। এছাড়া কেউ কেউ বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউট পাসের মাধ্যমে কিংবা ভিসার মেয়াদ না থাকায় সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশে ফিরে এসেছেন।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশ পৃথিবীর শীর্ষ ১০ দেশের একটি। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন ১৮ ডিসেম্বর শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেছেন, ১৯৭৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত এক কোটি ২৫ লাখ বাংলাদেশী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করতে গেছেন। যার মধ্যে ৭৫ শতাংশই আছেন মধ্যপ্রাচ্যে।
ফেরত আসাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সৌদি আরব থেকেই ফিরেছেন এক লাখ সাত হাজার কর্মী। এ ছাড়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৯৭ হাজার, কাতার থেকে ৪১ হাজার, ওমান থেকে ২১ হাজার, মালয়েশিয়া থেকে ১৫ হাজার ৪১৬, মালদ্বীপ থেকে ১৫ হাজার, কুয়েত থেকে ১৪ হাজার ৬২২ জন, ইরাক থেকে ১০ হাজার, লেবানন থেকে আট হাজার, সিঙ্গাপুর থেকে সাত হাজার ও বাহরাইন থেকে তিন হাজার কর্মী ফিরে এসেছেন। ফেরত আসার এই প্রবণতা আগামী বছরও থাকবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২৮টি দেশের মধ্যে সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি ৯৮ হাজার ৬৮৭ জন ফেরত এসেছেন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৭৯ হাজার ৩৭১ জন ও নারী ১৭ হাজার ৩১৬ জন। সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরেছেন ৮৭ হাজার ৫২৫ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৭৯ হাজার ১২৮ জন ও নারী আট হাজার ৩৯৭ জন।

মালদ্বীপ থেকে ফিরেছেন ১৪ হাজার ২২৩ জন। পর্যটননির্ভর দেশ হওয়ায় কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে দেশটিতে কাজ নেই। তাই মালিক বা কোম্পানি তাদের ফেরত পাঠিয়েছে।নসিঙ্গাপুর থেকে ফেরত এসেছেন ৬ হাজার ৩৪৪ জন। কাজের বা চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তাদের ফেরত পাঠানো হয়েছে। ওমান থেকে ফেরত এসেছেন ১৮ হাজার ৯৫১ জন। তারা বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউট পাসের মাধ্যমে দেশে ফেরেন। কুয়েত থেকে ১৩ হাজার ৪২৬ জন ফেরত আসেন। আকামা বা ভিসার মেয়াদ না থাকায় বা অবৈধ হওয়ায় সাধারণ ক্ষমার আওতায় তারা ফেরত আসেন। আবার অনেক কর্মী বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে দেশে ফিরেছেন। বাহরাইন থেকে ফিরে এসেছেন দুই হাজার ৬৩৫ জন। তাদের অনেকেই বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করে আউট পাশ নিয়ে ফিরলেও অনেকেই অসুস্থ হয়ে ও চাকরি হারিয়ে ফেরত আসেন। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফেরত এসেছেন ৭১ জন। তাদের সবাই পুরুষ। কাজ নেই তাই দেশে ফিরে এসেছেন তারা। কাতার থেকে ফেরত এসেছেন ১৪ হাজার ৯১১ জন এবং মালয়েশিয়া থেকে এসেছেন ৩৬ হাজার ৬৯৫ জন। কাজ নেই তাই ফিরে এসেছেন তারা। দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ফেরত এসেছেন ২২০ জন। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় তারা দেশে ফিরে আসেন। এছাড়া থাইল্যান্ড থেকে ৮৯ জন, মিয়ানমার থেকে ৩৯ জন ফিরে এসেছেন। কাজ না থাকায় তাদের সবাই ফিরে এসেছেন। জর্ডান থেকে ফেরত এসেছেন দুই হাজার ৩২৯ জন। তাদের সবাই গার্মেন্টস শ্রমিক। চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফিরে এসেছেন তারা।

ভিয়েতনাম থেকে ফেরত এসেছেন ১২১ জন। তাদের সবাই পুরুষ। প্রতারিত হয়ে ফেরত এসেছেন তারা। কম্বোডিয়া থেকে ফেরত এসেছেন ১০৬ জন। সবাই পুরুষ। কাজ নেই তাই ফেরত এসেছেন তারা। ইতালি থেকে ফেরত এসেছেন ১৫১ জন। তাদের সবাই পুরুষ। গত ৬ জুলাই বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ১৫১ জন বাংলাদেশি কর্মীকে কোভিড সন্দেহে দেশে ফেরত পাঠানো হয়। পরে সবাইকে সেনাবাহিনীর অধীন কোয়ারেন্টাইনে নেয়া হয়। এছাড়া ইরাক থেকে ফেরত এসেছেন ১০ হাজার ১৬৯ জন, শ্রীলঙ্কা থেকে ৫৭৪ জন, মরিশাস থেকে ৪৫২ জন, রাশিয়া থেকে ১০০ জন এবং তুরস্ক থেকে ফেরত এসেছেন ১২ হাজার প্রবাসী।

এ দিকে যেসব কর্মী নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরেছেন; তাদের অনেকে ঘোরাঘুরির পরও সরকার থেকে কাক্সিক্ষত সহযোগিতা পাচ্ছেন না। যদিও প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক দিন পরপর কতজন দেশে ফিরেছেন সেই তথ্য জানানো হচ্ছে; কিন্তু প্রত্যাগতদের মধ্যে কতজনকে সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়েছে তার কোনো উল্লেখ কোথাও নেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী করোনাকালের আগে থেকেই এ খাতে মন্দাভাব স্পষ্ট। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো, বিশ্বের প্রতিটি দেশ নিজেদের শ্রমবাজারের প্রয়োজন অনুসারে জনশক্তি আমদানি করে। ফলে সরকারকে অনতিবিলম্বে যেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ধরে নিতে হবে, বিশ্ব শ্রমবাজারে অদক্ষ বা আধা দক্ষ শ্রমিকদের কদর আর বাড়বে না। স্বদেশে দেশ গঠনে যেমন, তেমনি বিদেশে কর্মসংস্থানে সনাতনী শিক্ষাব্যবস্থায় পরিবর্তন এনে কারিগরি শিক্ষার ওপর জোর দেয়া এখন সময়ের দাবি।

বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে বলছেন, বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে এজেন্ট বা দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। বাস্তবে এখনো বিদেশ গমনেচ্ছুরা দালালদের হাতেই বেশি প্রতারিত হয়ে থাকেন। এ জন্য দরকার শক্তিশালী নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তোলা। একই সাথে দরকার জাতীয় দক্ষতা নীতিমালার যথাযথ বাস্তবায়ন এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে গতি আনা। জনশক্তি খাতের ধূসর চিত্র বদলাতে হলে পুরনো পদ্ধতিতে যেভাবে এতকাল এ খাত চলছে, সেটিও পাল্টাতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনশক্তি আমদানিকারী দেশগুলোর চাহিদা ও পরিবর্তনের সাথে আমাদের খাপ খাওয়াতে হবে। প্রধানত ঐতিহ্যগত শ্রমবাজারগুলোর পরিবর্তন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সঙ্কোচনের বিষয়টি মনে রেখে এ খাত পুনরুজ্জীবিত করতে সার্বক্ষণিক তদারকিসাপেক্ষে একটি বৃহত্তর কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে।

https://dailysangram.com/post/439704