৫ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১১:৪১

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন ক্রমেই কমছে

চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন ক্রমেই কমছে। কমছে বন্দরে জাহাজ আসার পরিমাণও। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর বৈশ্বিক তালিকার ৫৮ ব্যস্ততম বন্দরের অগ্রগতি ধরে রাখা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশ্বজুড়ে করোনা সংক্রমণের প্রভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে করোনা পরিস্থিতিতে আমদানি-রপ্তানি উভয়ই কমেছে। করোনার সংক্রমণ শুরুর পর চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি উভয় জাহাজ হ্যান্ডলিং প্রায় একমাস বন্ধ ছিল। এখন বৈশ্বিক পরিস্থিতির ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে আমদানি-রপ্তানি বাড়বে।

তখন চট্টগ্রাম বন্দরেও জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়বে।

তিনি বলেন, আমাদের কোনো সমস্যার কারণে কনটেইনার হ্যান্ডলিং কমেনি। এক্সপোর্ট ভলিউম কম হওয়ায় কমেছে। তবে বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানের হেরফের তেমন হবে না। কারণ ভারত, শ্রীলঙ্কার অবস্থা আমাদের চেয়েও খারাপ। বিশ্ব পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এটা মূল্যায়ন করে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান বিবেচনা করা হবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যানুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭ টিইইউস। ২০১৯ সালে হয়েছিল ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউস। ২০১৮ সালে ২৯ লাখ ৩ হাজার ৯৯৬ এবং ২০১৭ সালে ২৬ লাখ ৬৭ হাজার ২২৩ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর।

সদ্য সমাপ্ত বছরে আগের বছরের চেয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ও খালি কনটেইনার পরিবহন কমেছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ২১০ টিইইউস। কনটেইনার পরিবহন কমেছে প্রায় আট শতাংশ। চট্টগ্রাম বন্দরের ইতিহাসে শতাংশের হারে কনটেইনার পরিবহন সবচেয়ে বেশি কমেছে ২০২০ সালে। এর আগে ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের পর প্রায় ছয় শতাংশ কনটেইনার পরিবহন কমেছিল চট্টগ্রাম বন্দরে।

সদ্য সমাপ্ত ২০২০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে তিন হাজার ৭২৮টি। ২০১৯ সালে এর চেয়ে ৭৯টি জাহাজ বেশি হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল। সে বছর জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল তিন হাজার ৮০৭টি। ২০১৮ সালেও জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল সদ্যসমাপ্ত বছরের চেয়ে ১৯টি বেশি। সে বছর জাহাজ হ্যান্ডলিং হয় তিন হাজার ৭৪৭টি। ২০১৭ সালে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৩৭০টি।

জাহাজ হ্যান্ডলিং কমলেও ২০২০ সালে আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহন বেড়েছে। সদ্যসমাপ্ত বছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন হয়েছে ১০ কোটি ৩২ লাখ ৯ হাজার ৭২৪ টন। ২০১৯ সালে হয়েছিল ১০ কোটি ৩০ লাখ ৭৭ হাজার ৭৩৬ টন। ২০১৮ সালে ৯ কোটি ৬৩ লাখ ১১ হাজার ২২৪ টন এবং ২০১৭ সালে ৮ কোটি ৫২ লাখ ৪৬ হাজার ৯৪৮ টন পণ্য পরিবহন করা হয়েছিল।

১৯৭৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন শুরু হয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কনটেইনার পরিবহনেও সার্বিক অগ্রগতি আসে গত এক দশকে। বৈশ্বিক তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থানও গত এক দশকেই উপরের দিকে যেতে শুরু করে।

গত এক দশকে ৩০ ধাপ এগিয়ে লন্ডনভিত্তিক শিপিং বিষয়ক সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্টের বৈশ্বিক তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এখন ৫৮তম। ২০১৯ সালে মাত্র এক বছরের ব্যবধানে চট্টগ্রাম বন্দর এগিয়ে গিয়েছিল ছয় ধাপ। ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান ছিল বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের মধ্যে ৬৪তম।

তবে বৈশ্বিক তালিকায় চট্টগ্রাম বন্দরের এই অগ্রগতি ধরে রাখা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তাদের মতে, করোনা সংক্রমণের প্রভাবে বিশ্বজুড়েই বন্দরগুলোতে জাহাজ ও কনটেইনার পরিবহনের পরিমাণ কমেছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার পরিবহন আট শতাংশ কমলেও প্রতিবেশী দেশ ভারতের চেন্নাই ও মুম্বই বন্দরে কমেছে প্রায় ১২ শতাংশ।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের ক্রেডিবিলিটি নিয়ে কোনো সমস্যার কারণে তো কনটেইনার বা জাহাজ হ্যান্ডলিং কমেনি। সামগ্রিকভাবে এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট কমে গেছে। সেটার প্রভাব পড়েছে। এখন সরকারের উচিত হবে দেশের কোন কোন খাতের রপ্তানি কমে গেছে সেটা চিহ্নিত করে ইনিশিয়েটিভ নেয়া যে, কীভাবে সেটা বাড়ানো যায়। রপ্তানি যখন বাড়বে তখন জাহাজ ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংও বাড়বে।

বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কনটেইনারে তৈরি পোশাক, ওষুধ, ইসপাতসহ বিভিন্ন শিল্পপণ্য ও ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাবে দেশের পোশাক শিল্পখাতে ধস নেমেছে। রপ্তানি কমেছে তৈরি পোশাক খাতে। এর প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক প্রবৃদ্ধিতেও।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=257337