৫ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১১:৩৬

করোনায় আশীর্বাদ ছিল তথ্যপ্রযুক্তি

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : মহামারি করোনার ভাইরাসটি সংক্রামক হওয়ায় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই জারি করা হয় লকডাউন। পুরো বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও স্থবির হয়ে পড়ে স্বাভাবিক জীবনব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতি। রাজনীতি হয়ে যায় ঘরবন্দী। পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই সব সময় ছুটে চলা জীবনের এমন হঠাৎ থমকে যাওয়ার মুহূর্তে আশীর্বাদ হয়ে উঠে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মাধ্যম। বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এই বছরে। বিশ্ববাসী প্রযুক্তির নানা সুবিধা এবং কল্যাণকর দিক উপভোগ করেছে মানুষ। ঘরবন্দী মানুষের প্রাত্যহিক জীবনযাপনের অনুষঙ্গ যেমন ছিল, তেমনই বিশ্বকে সংযুক্ত রাখতে অসাধারণ অবদান রেখেছে প্রযুক্তি। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতা প্রতিবছর থাকলেও কোভিড-১৯ মহামারিকালীন সময়ের কারণে গেল বছরটি ছিল প্রযুক্তিময়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার কারণে প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে দ্রুতবেগে। এর কারণে পরবর্তী পাঁচ বছরে বিশ্বের প্রযুক্তি খাতের যে উন্নয়ন ও প্রসার হতো, তা মহামারির এ সময়ে অনেকটাই হয়ে গেছে বলে মনে করেন প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে এ সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। বাংলাদেশেই এ বছর ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে অন্তত ৫০ শতাংশ। নিয়ন্ত্রক সংস্থার সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হিসাবমতে, শুধু জুলাই মাসে দেশে ৩০ লাখ নতুন সংযোগ যুক্ত হয়েছে নেটওয়ার্কে। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ৬৪ লাখ ১০ হাজার। ঠিক এক মাসে এ সংযোগ ছিল ১০ কোটি ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার। দেশে এখন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৮৫ লাখ ৭১ হাজার। অন্যদিকে, মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে ব্যবহৃত হচ্ছে সাড়ে নয়শ’ থেকে এক হাজার জিবিপিএস (গিগাবাইট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ। প্রায় একই পরিমাণ ব্যান্ডউইথ চাহিদা থাকা মোবাইল ইন্টারনেটের চাহিদা বেড়ে দাঁড়ায় ২ হাজার ১০০ জিবিপিএস।

গেল বছরে সাইবার নিরাপত্তা সূচকে এগিয়েছে বাংলাদেশ। ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সূচকে ৮ ধাপ এগিয়ে ৭৩তম থেকে ৬৫তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। মৌলিক সাইবার হামলা প্রতিরোধে প্রস্তুতি এবং সাইবার ঘটনা, অপরাধ ও বড় ধরনের সংকট মোকাবেলায় তৎপরতা মূল্যায়ন করে পাঁচ ধাপে তৈরি সূচকে এ উন্নতি হয়। এনসিএসআই-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সূচক অনুযায়ী, ৯৬ দশমিক ১০ স্কোর পেয়ে প্রথম অবস্থানে রয়েছে গ্রিস। পর্যায়ক্রমে ৯২ দশমিক ২১ ও ৯০ দশমিক ৯১ স্কোর পেয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে চেক রিপাবলিক ও এস্তোনিয়া।

করোনার কারণে কর্মক্ষেত্রের অন্যরকম রূপ উপলব্ধি করে কর্মীরা। বছরটিতে মানুষের মুখে মুখে অন্যতম আলোচিত বিষয় ছিল- জুম-ওয়েবিনার ও হোম অফিস। বিশ্বজুড়েই জরুরি সেবার জন্য যাদের একান্তই পথে-ঘাটে কাজ করতে হয়, তাদের বাদ দিয়ে আর সবার জন্যই শুরু হয় ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এমনকি ব্যাংকগুলোও তাদের কর্মীদের করোনার কারণে হোম অফিসে পাঠায়। অনেক দেশেই করোনার প্রকোপ কিছুটা কমে গেলেও সেসব দেশে এখনও চালু আছে ওয়ার্ক ফ্রম হোম সংস্কৃতি। বাংলাদেশেও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কর্মীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এখনও হোম অফিস অব্যাহত রেখেছে।

করোনা মহামারির বছরে সবচেয়ে বড় নির্ভরতা ও প্রয়োজন হয়ে পড়ে তথ্যপ্রযুক্তি। এ সময় দেশের মানুষের অনলাইন নির্ভরতা বাড়ার কারণে ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস চালু হওয়ায় স্মার্টফোন বিক্রিও বেড়েছে। জানা গেছে, দেশে স্মার্টফোন বিক্রির এ হার আগের প্রান্তিকের চেয়ে প্রায় আড়াই গুণ বেশি। বছরের তৃতীয় প্রান্তিক জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বরের হিসাবে, দেশে স্মার্টফোন বিক্রি হয়েছে ৩২ লাখ ৬৩ হাজার ৭০৫টি। বাজার গবেষণার একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্যানুযায়ী, তৃতীয় প্রান্তিকে দেশে স্মার্টফোন বাজার দখল করেছে ৩২ শতাংশ। এর আগের প্রান্তিকে এটি ছিল ২৬ শতাংশে। বছরের শুরুতে যা ছিল মাত্র ২০ শতাংশ।

কোভিড-১৯ মহামারির এ বছরটিতে ই-কমার্স ও এফ-কমার্সে মানুষের নির্ভরতা বেড়েছে ব্যাপক। মানুষের দোরগোড়ায় খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেয়ায় লকডাউনের মধ্যে ই-কমার্স কেনাকাটা কয়েকগুণ বেড়ে যায় ই-কমার্সগুলো জরুরি সেবা দিতে থাকে। লকডাউনে মানুষ দৈনন্দিন বাজারসদাই থেকে শুরু করে সব ধরনের কেনাকাটায় ভরসা করেছে এ অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোয়। এ সময়ে এফ-কমার্স খাতের উল্লম্ফন ঘটে। ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) বলছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বাংলাদেশে গত ৮ মাসে ই-কমার্স সেক্টরে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। যেখানে এক লাখ পণ্য ডেলিভারি হয়েছে প্রতিদিন, ৫০ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় ই-কমার্সে কেনাকাটা বেড়েছে ৫০ শতাংশ এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ৫০ লাখ।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে ‘সোশ্যালি ডিসটেন্সড, ডিজিটালি কানেক্টেড’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় প্রযুক্তি খাতের মহোৎসব ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০২০। রাজধানীর বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মাল্টিপারপাস হলে আয়োজিত হয় ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডের সপ্তম আসর। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড অ্যাপ ডাউনলোড করে ভার্চুয়ালি পুরো প্রদর্শনী ঘুরে দেখেছে দর্শনার্থীরা। ৯ থেকে ১১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় করোনাকালীন এ ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলা।

ফ্রিল্যান্সারদের আর্থিক ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিতে বিদায়ী বছরটিতে পরিচয়পত্র প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়। নভেম্বরের শেষ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কার্যক্রম বাস্তবায়নে ভার্চুয়াল আইডি কার্ড পোর্টালের উদ্বোধন করেন। সরকারের আইসিটি ডিভিশন, স্টার্টআপ বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (বিএফডিএস) যৌথভাবে কাজটি করছে। যেখানে ফ্রিল্যান্সাররা খুঁজে পাবেন নিজের কাজের সনদ। দেশের প্রায় সাড়ে ৬ লাখ ফ্রিল্যান্সারকে ভার্চুয়াল কার্ড দেয়ার পোর্টাল চালু করা হয়। এ কার্ডের মাধ্যমে আত্মপরিচয়ের পাশাপাশি ব্যাংকের ঋণ সহায়তা এবং হাইটেক পার্কে অগ্রাধিকার পাবেন ফ্রিল্যান্সাররা। এ ছাড়া ভবিষ্যতে আইটি খাতে সরকার প্রদত্ত ১০ শতাংশ ক্যাশ প্রণোদনা পেতে এ আইডি হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ।

মহামারির সময়ে আলোচিত ঘটনাবলির মধ্যে বছরের শেষ দিকে নভেম্বরে বিশ্বের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এক বাংলাদেশির বিরুদ্ধে দেশের আদালতে ৫০ হাজার মার্কিন ডলার (৪৪ লাখ টাকা) ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করে। ফেসবুক ডটকম ডটবিডি ডোমেইনটি উদ্ধারে ২৩ নভেম্বর ঢাকা জেলা জজ আদালতে ট্রেডমার্ক অ্যাক্ট ৯৬ ও ৯৭ ধারায় এবং ফৌজদারি আইনের ১৫১ ধারায় এসকে সামসুল আলম নামে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে এ মামলা করে ফেসবুক। মামলা নম্বর ৪১/২০২০। মামলায় ক্ষতিপূরণ দাবির পাশাপাশি ডোমেইনটি যাতে ব্যবহার ও হস্তান্তর না করতে পারে, সেজন্য এর ওপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চেয়েছিল বিশ্বখ্যাত এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। এরপর এ ডোমেইন ব্যবহারে অন্তর্র্বতীকালীন নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ২০২১ সালের ৯ মার্চ মামলার পরবর্তী তারিখ দেয়া হয়েছে। সে পর্যন্ত ডোমেইন ব্যবহারের এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। এ ছাড়া এ নিষেধাজ্ঞা স্থায়ী করা হবে না- বিবাদীদের আগামী ১৫ দিনের মধ্যে সেই ব্যাখ্যা দিতে বলেন আদালত।

দেরিতে হলেও এ বছরই অবৈধ, নকল ও চুরি যাওয়া মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধে বিটিআরসি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০১২ সালে প্রথম এ উদ্যোগ নেয়ার পর অবশেষে ২০২০ সালে তা বাস্তবায়িত হতে যাচ্ছে। বছরের ২৫ নভেম্বর বিটিআরসি অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধ করতে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) প্রযুক্তি সরবরাহ ও পরিচালনার জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করেছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। অবৈধ ও নকল মোবাইল হ্যান্ডসেট বন্ধে আগামী বছরের শুরু থেকেই প্রযুক্তি বাস্তবায়ন শুরু করতে যাচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। বিটিআরসি সূত্রমতে, এ প্রক্রিয়া শুরু হলে অবৈধ হ্যান্ডসেটে প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট একটি সিম ছাড়া অন্য কোনো সিম কাজ করবে না। নির্দিষ্ট সময় পরে কোনো সিমই কাজ করবে না। ফলে গ্রাহকরা বাধ্য হয়েই নকল বা অবৈধ হ্যান্ডসেট ব্যবহার বন্ধ করবেন। এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে সরকার প্রতি বছর ৪ হাজার কোটি টাকার মতো বাড়তি রাজস্ব পাবে।

বছরের শেষে ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিনে তৃতীয় সাবমেরিন প্রকল্পে অনুমোদন দেয় সরকার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল)। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৯৩ কোটি ১৬ লাখ ৭১ হাজার টাকা। চলতি বছর কাজ শুরু হয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত এটির বাস্তবায়নের সময়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর ব্যান্ডউইথ রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া দেশে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী। যে কারণে চাহিদাও বাড়ছে ব্যান্ডউইথের। জানা গেছে, ক্যাবলটির কোর ল্যান্ডিং স্টেশন হবে সিঙ্গাপুর, ভারত, জিবুতি, মিসর ও ফ্রান্সে। বাংলাদেশের শাখাটি বঙ্গোপসাগর হয়ে কক্সবাজারের ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

বছরের মাঝামাঝি সময়ে সারা দেশে ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ বন্ধের হুমকি দিয়ে আন্দোলনে নামেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাররা। গ্রাহক পর্যন্ত সংযোগ স্থাপনে ঝুলন্ত তারের বিকল্প ব্যবস্থা না করে তার কাটায় ১২ অক্টোবর সাংবাদিক সম্মেলন করে ইন্টারনেট ও ডিশ সংযোগ বন্ধ করার কর্মসূচি দেয় সংগঠনটি। পরে সরকারের সংশ্নিষ্ট দফতরের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মসূচি স্থগিত করেন। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের সঙ্গে বৈঠক করে মাটির নিচ দিয়ে তার নেয়ার বিষয়ে সমঝোতা হয়। পরে এ কর্মসূচি তুলে নেয় আইএসপিএবি।

লকডাউনের বছরজুড়ে সভা-সেমিনারসহ সাংবাদিক সম্মেলন সব হতে থাকে ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে। প্রথমবারের মতো সরকারের মন্ত্রিসভার বৈঠকও হয় অনলাইনে। ভার্চুয়াল কোর্টের মাধ্যমে বিচারিক কার্যক্রম ও টেলি মেডিসিন সেবাসহ বিভিন্ন অনলাইন সেবায় অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে যায় মানুষ। করোনাকালীন ৭ মাসে ১০ লাখ ই-ফাইলের কাজ করে সরকার। সরকারি বরাতে, কোভিড-১৯ মহামারিকালে ইন্টারনেটের ব্যবহার বেড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ।
করোনার কারণে বিশ্ববাসী প্রযুক্তির নানা সুবিধা এবং কল্যাণকর দিক উপভোগ করেছে মানুষ। নতুন বছর বিশ্বব্যাপী আরও ব্যাপকতা আসবে তথ্যপ্রযুক্তি ও এ খাতের পণ্য ব্যবহারে। মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী লকডাউনে যায় প্রায় দেশ। যে কারণে ঘরে থেকে অফিস করার যে পদ্ধতি প্রচলন হয়েছে, তা চালু থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সিসিজি ইনশাইটের নিরীক্ষা বলছে, ইউরোপ-আমেরিকার ৬০ শতাংশ ব্যবসায়িক নেতারা মনে করছেন, করোনার পরও ২৫ শতাংশ অফিস কর্মীদের বাসায় বসে অফিস করার পদ্ধতি জারি থাকবে। বড় বড় বহু প্রতিষ্ঠানও ইতোমধ্যে কর্মীদের বাসায় থেকে কাজের সুযোগ দিয়েছে এবং এ সুযোগ দীর্ঘ সময় বহাল থাকবে। বাংলাদেশেও বেসরকারি বিভিন্ন কোম্পানি, ব্যাংকসহ অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো হোম অফিস চলমান রয়েছে। বিদায়ি বছরে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং লাভবান হয়েছে ভিডিও কনফারেন্সিং বিভিন্ন প্ল্যাটফরম। বিশেষ করে জুম ভিডিও কলিং অ্যাপটি ব্যাপক বিস্তৃতি পেয়েছে। করোনার এ সময়ে দূরে থেকেও কাছে থাকার অনুভূতি দিয়েছে ডিজিটাল এসব প্ল্যাটফরম। এ ছাড়াও মাইক্রোসফট টিম ও অ্যাপলের ফেইস টাইমে মানুষ ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করেছে। মানুষের ডিজিটাল সেবার অভ্যস্ততার সুবাদেই তরতর করে উত্থান ঘটেছে জুমের। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, মহামারির সময়টায় বিশ্বে ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে ভিডিও কনফারেন্সিং সেবা জুম। সদ্য আগত বছরটিও এসব ডিজিটাল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকবে বলেও ধারণা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের।

বিগত বছরে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিল পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট তথা ফাইভজির সময়ে নতুন এমন পৃথিবীর দেখা মিলবে যেখানে শুধু সব মানুষ-মানুষে নয়, বিশ্বের সব যন্ত্রপাতি-জিনিসপত্রও সবাই সবার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। ইতোমধ্যে ফাইভজির আওতায় এসেছে বিশ্বের ১শ’ কোটিরও বেশি মানুষ। একইসঙ্গে ২০২৬ সালে বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ ফাইভজি কভারেজের আওতাভুক্ত হবে এবং ফাইভজি সাবস্ক্রিপশন পৌঁছে যাবে ৩৫০ কোটিতে। করোনা মহামারির কারণে সোশ্যাল ডিস্টান্সিং জরুরি হয়ে পড়ে। যে কারণে এ বছর প্রায় সব টেক সম্মেলন বাতিল হয়েছে। ফলে আগামী বছর বার্সেলোনা মোবাইল কংগ্রেস-এর আয়োজন হবে গরমকালে। করোনা ভয়াবহতা থেকে কিছুটা মুক্তি পেলে হয়তো অন্য টেক ইভেন্টগুলোও আয়োজিত হবে।

লকডাউনের মধ্যে অ্যামাজনের ব্যবসা আরও অনেক বেড়েছে। এ সময়ে অ্যামাজন পণ্য ডেলিভারির জন্য রোবটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার চালিয়েছে। তারা মূলত ছোট একটি ট্রাকের মাধ্যমে এ পরীক্ষা চালায়। এ রোবটের নাম দেওয়া হয়েছে স্কাউট। ওয়াশিংটনের পায়ে হাঁটা পথে এর পরীক্ষামূলক ব্যবহার হচ্ছে এটি। জানা গেছে, আপাতত অ্যামাজন ডেলিভারি কাজে ৬টি রোবট ব্যবহার করছে। এগুলো মানুষের ‘হাঁটার গতিতে’ পণ্য নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেবে। আগামী বছর ওয়্যারহাউসগুলোয় তারা পণ্য বহন ও প্যাকিংয়ের জন্য রোবটের ব্যবহারও বাড়াবে।

হোম অটোমেশন সিস্টেম, যা একটি বাড়ির তিনটি মূল অংশ-হিটিং সিস্টেম, লাইটিং সিস্টেম এবং সিকিউরিটি কন্ট্রোল সিস্টেমসহ সংশ্লিষ্ট ডিভাইসগুলোকে স্মার্ট উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করে। ইতোমধ্যে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে আশা করা হচ্ছে চলতি বছর স্মার্ট স্পিকারের ব্যবহারও বাড়বে। ভয়েস কমান্ড দিয়ে ঘরের লাইট ফ্যান অন বা অফ করাটা আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

https://dailysangram.com/post/439563