৫ জানুয়ারি ২০২১, মঙ্গলবার, ১১:২৬

রেকর্ড রিজার্ভের আড়ালে ছিল রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের আর্তনাদ

মুহাম্মাদ আখতারুজ্জামান : বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ২০২০ সাল শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। অপ্রত্যাশিত অভিঘাত কোভিড-১৯ এর মধ্যেও রিজার্ভ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে রেমিট্যান্সের অন্তঃপ্রবাহ। বর্তমানের রিজার্ভ দিয়ে প্রতি মাসে চার বিলিয়ন ডলার হিসেবে প্রায় সাড়ে ১১ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা কোটি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ বা রেমিটেন্স। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো। কিন্তু যাদের পাঠানো অর্থে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভিত হচ্ছে মজবুত, সেই প্রবাসী শ্রমিকদের কষ্ট প্রকট হয়ে ফুটে উঠে বিদায়ী বছরে করোনাভাইরাস মহামারীতে। কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে বিমান না পেয়ে নিদারুণ ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয় তাদের; নামতে হয় বিক্ষোভে; ঠিক সময়ে যেতে না পেরে চাকরিটিও হারিয়ে বসেন অনেকে। ফলে বিদায়ী বছরে দেশের মানুষ দেখেছে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের আর্তনাদ। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির প্রায় পাঁচ বছর হতে চললো। অথচ এখনো চুরি হওয়া অর্থের ৫৬১ কোটি টাকা ফেরত আসেনি। সেই অর্থ ফেরত আসার কোনো আশ্বাসও মেলেনি। গতবছর শেষে ৪৫ বারের মতো পেছালো এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ। রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা কেন্দ্রীয় ব্যাংক অরক্ষিত প্রমান করেছে বলেই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রফতানি ও প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে উচ্চ প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরিতে সহায়তা করেছে। বিগত ২০১৯-২০ অর্থবছরে করোনার প্রভাবে রফতানি ও আমদানির ক্ষেত্রের ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হলেও রেকর্ড পরিমাণ প্রবাসী আয় এবং একাধিক দাতা সংস্থার কাছ থেকে বাজেট সহায়তা প্রাপ্তির কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২০ সাল শেষে অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৩ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বছর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৪৩ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

এদিকে মহামারির মধ্যেও রেমিট্যান্স পাঠিয়ে রেকর্ড গড়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ২০২০ সালে ২ হাজার ১৭৪ কোটি ১৮ লাখ (২১.৭৪ বিলিয়ন) ডলার রেমিটেন্স দেশে এসেছে। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ১৮ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছিল। সদ্য শেষ হওয়া বছরে যে পরিমাণ রেমিটেন্স এসেছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনই আসেনি।

এর মধ্যে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে এসেছে এক হাজার ২৯৪ কোটি ৪৭ লাখ (১২.৯৪ বিলিয়ন) ডলার। আর ২০১৯-২০অর্থবছরের শেষ ছয় মাসে অর্থাৎ জানুয়ারি-জুন সময়ে এসেছে ৮৭৯ কোটি ৭০ লাখ (৮.৭৯ বিলিয়ন) ডলার। গত জুলাইয়ে ২৬০ কোটি ডলার রেমিটেন্স এসেছিল, যা ছিল মাসের হিসেবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২০ সালের শেষ মাস ডিসেম্বরে ২০৫ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের চেয়ে ২১ দশমিক ২১ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের ছয় মাসের পাঁচ মাসেই ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিটেন্স দেশে এসেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ১৬৯ কোটি ১৬ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল দেশে। আর চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলারের যে রেমিটেন্স এসেছে তা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৭ দশমিক ৬০ শতাংশ বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিদায়ী বছরের জুলাই মাসে প্রবাসীরা দেশে ২৬০ কোটি মার্কিন ডলারের রেকর্ড রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এর আগে কোনো একক মাসে এত রেমিট্যান্স কখনও আসেনি। দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বিভিন্ন দেশে থাকা ১ কোটিরও বেশি বাংলাদেশির পাঠানো অর্থ। দেশের জিডিপিতে এই রেমিটেন্সের অবদান ১২ শতাংশের মতো।

এর আগে প্রবাসীদের উৎসাহ দিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। গত ১ জুলাই থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠালে প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ টাকা প্রণোদনা পাচ্ছেন প্রবাসীরা। এর ফলে করোনার মধ্যেও রেকর্ড গড়েছে রেমিট্যান্স।

অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল বলেন, আমার বিশ্বাস, রেমিটেন্স বৃদ্ধির এই ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকবে। কেননা, বৈধ পথে রেমিটেন্স আনতে আমরা গত অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছি। এছাড়া রেমিটেন্স পাঠাতে যে ফরম পূরণ করতে হয়, তা সহজ করা হয়েছে।

এদিকে বিদায়ী বছরে মহামারির ঠিক আগে অনেকে ছুটি নিয়ে দেশে এসেছিলেন। ফিরতে না পেরে এখন কাটাচ্ছেন বেকার জীবন। মালয়েশিয়া থেকে আসা কয়েকজন জানান, একেবারে দেশে চলে আসব চিন্তা ছিল না। মালয়েশিয়ায় চাকরি থাকাকালে প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা দেশে পাঠাতে পারতাম। তাতে স্বচ্ছন্দেই চলত পরিবার। এখন আয়ের কোনো পথ নেই আছি চরম আর্থিক সঙ্কটে। না পারছি ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে, আর না পারছি কাউকে সেই কথা বলতে। আমাদের ভবিষ্যত এখন অনিশ্চিত। শুধু মালয়েশিয় নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা শ্রমিকদের একই অবস্থা।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের তথ্য অনুযায়ী, ১ এপ্রিল থেকে ৩০ নভেম্বর নাগাদ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে নানা কারণে ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৮ জন কর্মী দেশে ফেরত এসেছেন। এর মধ্যে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৪৮৪ জন পুরুষ এবং ৩৯ হাজার ২৭৪ জন নারী কর্মী। ফেরার এই মিছিল শুরু হয় বছরের শুরুতে, ফেব্রুয়ারিতে ইতালিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিলে সেদেশ থেকে দলে বাংলাদেশিরা ফিরতে থাকেন।

দেশে সংক্রমণ এড়াতে ইতালিফেরতদের প্রথমে বিমানবন্দরের কছে হজ ক্যাম্প ও গাজীপুরে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেখানকার ব্যবস্থাপনায় অসন্তুষ্ট হয়ে বিক্ষোভে নামলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের শ্লেষাত্মক সমালোচনা শুনতে হয়েছিল প্রবাসী কর্মীদের। বছরের শুরুতে দেশে ফেরার পর হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়েছিল ইতালি ফেরত বেশ কয়েকজন। বছরের শুরুতে দেশে ফেরার পর হজ ক্যাম্পে কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ জানিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কিতে জড়িয়েছিল ইতালি ফেরত বেশ কয়েকজন। মার্চে বিমান চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। স্থবির হয়ে পড়া বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন দেশে কাজ হারিয়ে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের বিমান বিশেষ ফ্লাইটে দেশে ফিরিয়ে আনে। মহামারীকালে দেশে ফেরার পর এই প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিনে থাকার বাধ্যবাধকতায় কিছু কিছু স্থানে তাদের বাড়ি স্থানীয়রাই ঘিরে ফেলে অনেকটা একঘরে ফেলে বলেও খবর আসে। জুলাইয়ের দিকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলে বিমান চলাচল সীমিত আকারে শুরু হলে প্রবাসী শ্রমিকরা কর্মস্থলে ফিরে যেতে চাইলেও বিপত্তি দেখা দেয় বিমানের টিকেট নিয়ে। হাতে গোনা এয়ারলাইন্সের মাত্র কয়েকটি ফ্লাইট চলায় টিকেট হয়ে যায় সোনার হরিণ; টিকেট না পেয়ে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা নিয়ে অনেককে থেকে যেতে হয় দেশে। চাকরি হারানোর শঙ্কায় বিমানের টিকেট পেতে বছরের মাঝামাঝিতে বিক্ষোভে নেমেছিল প্রবাসী কর্মীরা।চাকরি হারানোর শঙ্কায় বিমানের টিকেট পেতে বছরের মাঝামাঝিতে বিক্ষোভে নেমেছিল প্রবাসী কর্মীরা। একদিকে টিকেট নেই, অন্যদিকে চাকরির নিয়োগপত্রের মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে; এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যগামী কয়েক হাজার প্রবাসীকর্মী টানা কয়েক দিন ঢাকায় বিক্ষোভ করে। বাংলাদেশিদের মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়লে ইতালি বাংলাদেশ থেকে যাওয়া বন্ধ করে দিলে দেখা দেয় নতুন সঙ্কট। যাদের বৈধ কাগপপত্র নেই, তারা রয়েছে আরও সমস্যায়। এভাবে চলতে থাকলে আর্থিক সঙ্কটের কারণে বহু মানুষের জীবন ও জীবিকা হুমকির মুখে পড়বে। ফলে বিদায়ী বছরে দেশের মানুষ দেখেছে রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের আর্তনাদ।

অভিবাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য বলছে, কোভিড-১৯ মহামারীর আগে বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার লোক বিদেশে যেত, বছরের হিসেবে তা দাঁড়ায় ৬ লাখের মতো। এবার করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ প্রবাসী এরই মধ্যে দেশে ফিরে এসেছেন। অর্থাৎ প্রায় ১০ লাখের কাছাকাছি লোক দেশের বাইরে যেতে পারেননি। অথচ বছরের শুরুতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেছিলেন, ২০২০ সালে কম করে হলেও সাড়ে সাত লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর লক্ষ্য ধরেছেন তিনি। উল্টো দেশে এসে ১০ লাখ শ্রমিক যেতে পারেনি।

বাংলাদেশের জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাড়ি জমাতে পেরেছে ১ লাখ ৯০ হাজারের মতো জন, যাদের ৯৬ শতাংশ গেছে প্রথম তিন মাসে অর্থাৎ করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে। এপ্রিল-জুন পর্যন্ত লকডাউনের কারণে একজনকেও পাঠানো যায়নি। জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে গেছে মাত্র ৮ হাজার জন।

বিশ্ব ব্যাংক বলছে, মহামারীর কারণে বিদেশে সব কিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিদেশে অর্থ ব্যয়ের সুযোগ কমে গেছে বলে প্রবাসীরা দেশে থাকা স্বজনদের বেশি অর্থ পাঠিয়েছেন। আর হুন্ডি ছিল বন্ধ, বিপরীতে বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠালে সরকার দিচ্ছে প্রণোদনা। তা রেমিটেন্সের প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে। সংস্থাটি বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশের মুসলিম প্রবাসীরা হজের জন্য টাকা জমিয়ে রাখেন। কিন্তু মহামারীর কারণে এবার হজ বন্ধ থাকায় তারা সেই টাকা দেশে পাঠিয়েছেন।

অর্থনীতির গবেষক আহসান এইচ মনসুর বলেন, একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, এখন উপার্জন বা কাজের টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন না তারা (প্রবাসী)। জমানো টাকা যেটা ছিল সেখান থেকেই অথবা অন্য কারও কাছ থেকে ধার করে পরিবারের-পরিজনের বিপদের দিনে কিছু পাঠাচ্ছেন। সেটা ফুরিয়ে গেলে আর পাঠাতে পারবেন না। প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদের অর্থ পাঠানোর পরিমাণ যদি ভবিষ্যতে কমে যায়, তার সঙ্গে জনশক্তি রপ্তানির পথ যদি আগের মতো না খোলে, তাহলে দেশের জন্য বড় সঙ্কট যে সামনে তা স্পষ্ট।

এ বিষয়ে ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচি প্রধান শরিফুল হাসান জানান, প্রথমত আমাদের সরকারের চেষ্টা থাকা দরকার, যেন প্রবাস থেকে কর্মীরা ফেরত না আসে। পাশপাশি দেশে যারা ফিরে এসেছেন, কিন্তু যেতে পারছেন না, তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাটা করতে হবে। পাশাপাশি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে দেশের কর্মীরা যেন আরও প্রশিক্ষিত হয়ে বিদেশে যেতে পারেন, সেজন্য এখন থেকেই সরকার ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর প্রস্তুতি রাখার পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রম বাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো। প্রবাসী শ্রমিকদের প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ ভাগ সৌদি আরবে যান। এর বাইরে দুবাই, কুয়েত, কাতারসহ কয়েকটি দেশেও বেশ সংখ্যক শ্রমিক যান।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, শুধু প্রবাসী কর্মীরাই নন, মহামারীতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিদেশে জনশক্তি রপ্তানি করে এমন ১৬০০ এজেন্সিতে অন্তত ৪০ হাজার কর্মী রয়েছে, যাদের বেতনসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি মাসে এজেন্সি মালিকদের আনুমানিক ৪৫ কোটি টাকা খরচ হত। তাছাড়া প্রায় এক লাখ লোকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) সভাপতি তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার সনদ নিয়ে সন্দেহ তৈরি হওয়ায় বিভিন্ন দেশ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের দেশে বাংলাদেশিদের প্রবেশ করতে দেয়নি।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির পাঁচ বছর হতে চলেছে। অথচ এখনো চুরি হওয়া অর্থের ৫৬১ কোটি টাকা এখনো ফেরত আসেনি। সেই অর্থ ফেরত আসার কোনো আশ্বাসও মেলেনি। রিজার্ভ চুরি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ফিলিপাইনে যে মামলা চলছে, তাতেও এখন আর অর্থ ফেরত পাওয়ার কোনো আশা দেখা যাচ্ছে না। নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ বা নিউইয়র্ক ফেডে রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরি হয় ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ফেরত আসে ১ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এখনো রয়ে গেছে ৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ৫৬১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় পদত্যাগ করতে হয় তৎকালীন গভর্নর আতিউর রহমানকে। তিনি প্রায় ২৪ দিন এই ঘটনা গোপন রেখেছিলেন। এরপর দুই ডেপুটি গভর্নরকেও সরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বদলি করা হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিবকে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, টাকা ফেরত পাওয়ার আশাতেই আমরা যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করেছি। টাকা ফেরত পাওয়ার ব্যাপারে এখনো আশাবাদী। রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা বাদী হয়ে ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। তবে রিজার্ভ চুরির মামলায় বাংলাদেশ অংশের তদন্ত শেষ হলেও শিগগিরই চার্জশিট দিতে পারছে না পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য ২০২১ সালের ১৩ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত। এ নিয়ে ৪৫ বারের মতো পেছালো এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার তারিখ। বিদায়ী বছরের ৬ ডিসেম্বর মামলাটির প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে প্রতিবেদন জমা না দেওয়ায় ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদবীর ইয়াছির আহসান চৌধুরী নতুন এই দিন ধার্য করেন। আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার জিআর শাখা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

এ দিকে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবি আইয়ের তথ্য ফাঁসে বাংলাদেশ ব্যাংকে তোলপাড় শুরু হয়। এফবি আই বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮০০ কোটি টাকার রিজার্ভ চুরিতে ব্যাংকটির ভেতরকার ব্যক্তিদের যোগসাজশ ছিল। এবং এফবি আইয়ের এজেন্টদের দাবি বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্তত একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ তারা পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে এফবি আইয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।

https://dailysangram.com/post/439587