৪ জানুয়ারি ২০২১, সোমবার, ১২:১৪

করোনার ভ্যাকসিন কূটনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহী চীন-ভারত

মুহাম্মদ নূরে আলম : করোনার মহামারির কারণে বছরজুড়ে আলোচনার বিষয় ছিল করোনার ভ্যাকসিন। এ নিয়ে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের দৌঁড়ঝাঁপ ছিল লক্ষণীয়। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে দুই দেশ চীন ও ভারত ভ্যাকসিন কূটনীতির মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে মরিয়া। আর এর মধ্য দিয়ে দু’দেশের কাছ থেকেই ভ্যাকসিন পাওয়ার পথ উন্মুক্ত হচ্ছে বলে মনে করেন কূটনীতিক বিশ্লেষকরা। করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে কূটনৈতিক তৎপরতা। কূটনীতিকরা আশা করছে, খুব দ্রুত একটি নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিন সবার জন্য উন্মুক্ত হবে। মহামারী থেকে উদ্ধার পেতে হলে ভ্যাকসিনের কোনো বিকল্পও নেই। এখন পর্যন্ত ১৬০টির বেশি ভ্যাকসিন আবিষ্কারের পথে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন গবেষকরা। এর মাঝে ৩১টি কোম্পানি মানবদেহে পরীক্ষা শুরু করেছে। ভ্যাকসিন আবিষ্কারে এ অগ্রগতি অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় নজিরবিহীন। এর মাঝে রাশিয়ার স্পুটনিক ভি, সেই দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদনও পেয়েছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের বেক্সিমকো এবং ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের মধ্যে একটি চুক্তির অধীনে তারা যে পরিমাণ করোনা ভাইরাসের টিকা কিনেছেন এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছ থেকে তারা যে টিকা পাবার আশা করছেন তার পরিমাণ হবে সব মিলিয়ে চার কোটি ৯০ লাখ ডোজ।

চীনা কূটনীতিকরা করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য টিকা নিয়ে বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। তাদের ভাষায়, বন্ধু দেশগুলোর কাছে টিকা পৌঁছে দেয়াই এই মুহূর্তের প্রধান কাজ। এই টিকা কূটনীতিতে বাংলাদেশ বিশেষ সুবিধা পেতে যাচ্ছে। অন্য দেশগুলোকে চীন সহজ ঋণে টিকা দেয়ার কথা বলেছে। বাংলাদেশ পাবে ১ লাখ ১০ হাজার ডোজ টিকা। যার জন্য কোন মুল্য দিতে হবে না। অন্য দেশগুলো এই সুবিধা পাবে না। বিশেষ বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবেই এই টিকা বাংলাদেশ পাচ্ছে। এমনটাই বলা হয়েছে বেইজিং এর তরফে। ঢাকায় আইসিডিডিআরবি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. জন ক্লিমেন্স এর সত্যতা স্বীকার করেছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও ক’দিন আগে এমন ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন। এ মাসের শেষের দিকে চীনের সিনোভ্যাক টিকার তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল ঢাকায় শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এজন্য দু’ দেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এই ট্রায়াল মনিটর করবে আইসিডিডিআরবি। বাংলাদেশ বাদে এশিয়া, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোকে টিকার জন্য এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দিচ্ছে চীন। বাংলাদেশ টিকা পেতে এখন মরিয়া। অক্সফোর্ডের টিকা বিলম্বিত হয়ে যাওয়ার আশংকায় রাশিয়ার দিকেও পা বাড়িয়েছে। মস্কোয় বাংলাদেশ দূতাবাস সেদেশের সরকারের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে। ঢাকায় রাশিয়ান রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একাধিক বৈঠক হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন, যেখানে টিকা সেখানেই পৌঁছে যাবে বাংলাদেশ।

এদিকে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছে ভারত। গত বৃহস্পতিবার ১৭ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল বৈঠক করেছেন। গত বছর ভারতের বিতর্কিত ধর্মভিত্তিক নাগরিক আইন পাস হওয়ার পর এটিই তাদের প্রথম বৈঠক। আলোচনার শুরুতেই বাংলাদেশে ভ্যাকসিন সরবরাহের ব্যাপারে ভারত বিশেষ ভাবে নজর দিবে বলে জানান নরেন্দ্র মোদি। ভারতের বাজারে আসার দৌড়ে রয়েছে মূলত ৩টি সংস্থার সম্ভাব্য টিকা। দুটি ভারতীয় সংস্থার তৈরি-ভারত বায়োটেকের কোভ্যাক্সিন এবং জাইডাস ক্যাডিলার জাইকভ-ডি। তৃতীয়টি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিশিল্ড, ভারতে যার উৎপাদন, গবেষণা ও প্রয়োগের বিষয়টি দেখছে সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া। বিদেশি সংস্থার টিকা বাজারে ছাড়তে হলে অন্তত তৃতীয় ধাপের পরীক্ষাটি দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ওপরে করার নিয়ম রয়েছে। কোভিশিল্ডের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চলছে। সিরাম ইন্সটিটিউট জানিয়েছে, সব ঠিক থাকলে নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই ওই টিকা আসবে। টিকা তৈরিতে সিরামের হাত ধরেছে মার্কিন সংস্থা নোভাভ্যাক্স। গত ৯ ডিসেম্বর ভারতের ভ্যাকসিন প্রস্তুতি কতদূর এগিয়েছে তা দেখার জন্য, ভ্যাকসিন নিয়ে ৬০টির বেশি রাষ্ট্রদূত দেখতে গিয়েছিলেন হায়দরাবাদের ভারত বায়োটেক। রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনাররা এদিন রাজধানী থেকে হায়দরাবাদের রওনা দিলেন। টিকার প্রস্তুতি থেকে বিতরণ সব বিষয়েই কথাবার্তা হয়। ভারতের বিদেশমন্ত্রকের তরফেই এই সফরের আয়োজন করা হয়েছে। এই ধরনের পর্যবেক্ষণ এই প্রথম। গত ৬ ডিসেম্বর কেন্দ্রে তরফে ১৯০ জনের আন্তর্জাতিক প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয় কোভিড যুদ্ধ তথা ভ্যাকসিন তৈরির কাজ খতিয়ে দেখতে, সেই সূত্রেই এই সফর।

এদিকে করোনার ভ্যাকসিন চিন তৈরি করলে তা প্রথমেই পাবে বাংলাদেশ বলে জানিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চলতি বছরের ২০ মে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং টেলিফোনে কথা বলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন জিনপিং। করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করলে তা বাংলাদেশকেই সবার আগে দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করে চীন। চীন-বাংলাদেশ সহযোগিতার সোনালী সাফল্য বলেছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং তার এক বক্তব্যে। তিনি বলেন, চীনারা বলে মনের মিল থাকলেই কেবল দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব হতে পারে। কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার পর বিগত ৪১ বছর ধরেই চীন বাংলাদেশকে আন্তরিক বন্ধু ও উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে গণ্য করে আসছে। চীন সবসময় দু'দেশের সম্পর্কোন্নয়নের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় এবং কেন্দ্রীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ইস্যুতে পরস্পরের পাশে থাকার নীতিতে বিশ্বাস করে। চীনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাককে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমতি দিয়েছে সরকার। আইসিডিডিআর,বির সহযোগিতায় এ ট্রায়াল হবে বলে কথা রয়েছে। এর বাইরেও ভ্যাকসিন নিয়ে যেসব দেশ কাজ করছে তাদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। চীন যেহেতু সবার আগে প্রস্তাব দিয়েছে তাই তাদের সবার আগে ভ্যাকসিন ট্রায়ালের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

এছাড়া করোনা প্রতিরোধের জন্য কোনও সফলভাবে ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারলেই বাংলাদেশকে সে ব্যাপারে অগ্রাধিকার দেবে চিন। ঢাকায় চিনের দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অফ মিশনও এই কথা জানান গণমাধ্যমকে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ আমাদের বন্ধু এবং এক্ষেত্রে বাংলাদেশ অবশ্যই অগ্রাধিকার পাবে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও চিন কাজ করছে বলেও জানান তিনি। করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য চিনের মোট ৫টি সংস্থা কাজ করছে। বাংলাদেশকে ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়াকে চিনের সঙ্গে কূটনীতির ফসল বলেও মনে করছেন তিনি। করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় শুরু থেকেই বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে চিন।
গত বৃহস্পতিবার ১৭ ডিসেম্বর ভারত-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয়ের শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও ভারত অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে বৈশ্বিক ভ্যালু চেইন আরও সমৃদ্ধ করতে পারবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য, কৃষি ও জ্বালানি সম্পর্কিত মোট ৭টি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দেশ দুটি। বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তিস্তার পানি বন্টনের অন্তর্র্বর্তী চুক্তির কথা তুলে ধরেছেন শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে ভারতের আন্তরিকতা এবং মোদি সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টা আছে বলে জানান নরেন্দ্র মোদি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দীর্ঘদিনের ব্যর্থ তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি ও বিতর্কিত নাগরিক আইনের কারণে কয়েক দশকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আঁচ লেগেছিল। কোভিড-১৯ দুটি দেশকে আবারও একত্র করেছে। গত নভেম্বরে বাংলাদেশে ভ্যাকসিন সরবরাহের প্রতিশ্রুতির ঘোষণার পরই ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে ৩ কোটি ডোজের চুক্তি করেছে বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লি.।

চলতি বছরের ৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য আয়োজিত ভার্চুয়াল গ্লোবাল ভ্যাকসিন সামিট-২০২০ এ ভাষণকালে করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারি থেকে মানবজাতিকে রক্ষার জন্য নতুন ভ্যাকসিনগুলো দ্রুত উদ্ভাবন করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। বিশ্বসভায় আমাদের প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে এবং তিনি ভ্যাকসিন কূটনীতিতে বাংলাদেশকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরও যোগ করে বলেছিলেন, আবিষ্কৃত টিকা সংক্রামক রোগগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। কোভিড-১৯ প্রমাণ করেছে যে কোনো বিশ্বব্যাপী দুর্যোগের মধ্যে আমরা কতটা শক্তিহীন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পুরনো উক্তিটিও স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন যে, প্রতিরোধ প্রতিকারের চেয়ে সবসময়ই ভালো। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী জিএভিআই জোটের (গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস এবং ইমিউনাইজেশন) সহায়তা চেয়েছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, জোট আমাদের এ যুদ্ধে সেরা সমর্থন জোগাতে পারে এবং আমরা যদি তাদের এটি করতে দিই তবে তারা তা চালিয়ে যাবেন। বাংলাদেশে করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালের জন্য ভারত ও চীনের কূটনৈতিক চেষ্টার পর শেষ পর্যন্ত প্রথম ট্রায়ালের জন্য চীনকেই অনুমতি দিয়েছে সরকার। তবে চীনকে আগে দেয়া হয়েছে, তার মানে এ নয় ভারতকে দেয়া হবে না-এমনটাই মনে করছেন কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। তারা আশা করছেন, ভারত যখনই প্রস্তাব দেবে, তখনই তাদের ট্রায়ালের সুযোগ দেবে বাংলাদেশ।

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ঘোষণা অনুয়ায়ী ওষুধ খাতে বাংলাদেশ আরও ১৩ বছর মেধাস্বত্ব ছাড় পাবে। বাংলাদেশ যখন এলডিসিভুক্ত দেশ ছিল, তখন স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বিশেষ সুবিধা পেত যার মেয়াদ ছিল ২০১৬ পর্যন্ত। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৃজনশীল কূটনৈতিক দক্ষতায় তা বাড়িয়ে ২০৩৩ পর্যন্ত অর্জন করা গেছে। তা না হলে এখনই আমাদের অনেক বেশি দামে ওষুধ কিনতে হতো। সবাই স্বীকার করবেন, সৃজনশীল কূটনীতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছেন। ভ্যাকসিন কূটনীতিতে সেটা আরেকবার প্রমাণিত হবে- ধারণার চেয়েও আরও বেশি কিছু অর্জন করতে পারি।

অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনে বাংলাদেশে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হলে করণীয় কী হবে জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এ ভ্যাকসিনে এখন পর্যন্ত তেমন কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। ভারতের জনগণ আর আমরা একই রকমের। একই আবহাওয়া, একই খাদ্যাভ্যাস। কাজেই আমরা আশা করি কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ‘হু’ জানিয়েছে গরিব দেশগুলি আগামী বছরের শুরু থেকেই কোভিড ভ্যাকসিন পাবে। মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের টিকা প্রাপ্তি নিয়ে গরিব দেশগুলোর অনিশ্চয়তা নিয়ে বক্তব্য রাখার পর ‘হু’ এ বক্তব্য দিল। গত শুক্রবার ১৮ ডিসেম্বর হু জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের জনসন অ্যান্ড জনসনের সঙ্গে ৫০ কোটি ভ্যাকসিনের চুক্তি হয়েছে তাদের। এছাড়া আস্ট্রজেনেকা, নোভাভ্যাক্স ও সানোফি-জিএসকের সঙ্গেও যুক্তি হয়েছে ‘হু’এর।
কানাডার জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং সিনিয়র পলিসি বিশ্লেষক, আলবার্টা মিনিস্ট্রি অব হেলথ ডা. শাহরিয়ার মোহাম্মদ রোজেন বলেন, বাংলাদেশকে ভ্যাকসিন কূটনীতি আরও জোরদার করতে হবে। ভ্যাকসিন দৌড়ে এগিয়ে থাকা বন্ধুপ্রতিম ভারত, রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ক এক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, ট্রায়ালে সব ধাপ অতিক্রম করা প্রথম ভ্যাকসিনটি কাক্সিক্ষত সাফল্য নাও পেতে পারে। এ কারণে সম্ভাব্য সব উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। বিশ্বে ভ্যাকসিন আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে- এমন ভাবার কোনো কারণ নেই। একদিকে একাধিক উৎসের সঙ্গে যোগাযোগ ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে; অন্যদিকে, ভ্যাকসিনপ্রাপ্তির পর জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে যাতে অযাচিত বিলম্ব না হয়, সেজন্য অগ্রিম পরিকল্পনা এবং কৌশল চূড়ান্ত করতে হবে।
চলতি সপ্তাহে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের ওয়েবিনারে বক্তারা ভ্যাকসিন কূটনীতি এবং বাংলাদেশ বিষয় নিয়ে কম্বোডিয়া থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরাম নিয়মিতভাবে সাপ্তাহিক এই আয়োজন করে আসছে। চলতি সপ্তাহে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়ন ফোরামের ওয়েবিনারে বক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যথা সময়ে বাংলাদেশের করোনার ভ্যাকসিন পাওয়া নিয়ে।

https://dailysangram.com/post/439476