৩ জানুয়ারি ২০২১, রবিবার, ২:৩৭

ফেব্রুয়ারিতে আসছে সিরামের ভ্যাকসিন

টাকা জমা দেয়া হচ্ছে আজ

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেশে আসতে পারে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) ভ্যাকসিন। এমনই ইঙ্গিত দিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবুল বাশার মুহাম্মদ খুরশীদ আলম। এ উদ্দেশ্যে আজ রোববার বেক্সিমকোর মাধ্যমে ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরকার ৬০০ কোটি টাকা জমা দেবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। ভারত ইতোমধ্যে সিরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। ফলে ভ্যাকসিনটি বাংলাদেশে আসতে আর কোনো বাধা নেই। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতর ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সাথে চুক্তি করে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কেনার জন্য। চুক্তি অনুযায়ী সিরাম ইনস্টিটিউট আগামী জুনের মধ্যে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেবে বাংলাদেশকে। এই চুক্তি অনুযায়ী প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন আসবে। এই শর্তে জুনের মধ্যে সিরাম ইনস্টিটিউট ভ্যাকসিন না দিতে পারলে টাকা ফেরত দেবে।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিন বাংলাদেশে খুব সহজেই সংরক্ষণ করা সম্ভব। এই ভ্যাকসিনটি সাধারণ রেফ্রিজারেটরে (ফ্রিজার) ৪ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা যাবে।

বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে কিভাবে ভ্যাকসিন আনা হবে এর পুরো পরিকল্পনা তারা করে রেখেছে। ভ্যাকসিনের ডোজগুলো প্রথমে টঙ্গীতে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করা হবে। পরে সরকার অনুমোদিত বিভিন্ন কোল্ডস্টোরেজে তাদের ব্যবস্থাপনায় পৌঁছে দেয়া হবে। পরে সেখান থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্যবস্থাপনায় ভ্যাকসিনগুলো নেয়া হবে বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা: এম মোজাহেরুল হক জানান, অক্সফোর্ডের চ্যাডক্স নামক ভ্যাকসিনটি মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়। শিম্পাঞ্জির দেহে সর্দি-জ্বর সৃষ্টিকারী একটি ভাইরাসকে ল্যাবরেটরিতে দুর্বল করে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। ফ্লু ভাইরাস, জিকা ভাইরাস ও মার্স ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিষেধক তৈরি করা হয়েছে একই প্রক্রিয়ায় শিম্পাঞ্জির এই ভাইরাসটি ব্যবহার করে। শিম্পাঞ্জির সর্দির জন্য দায়ী এই ভাইরাসটিতে গবেষণাগারে করোনাভাইরাসের মতো কৃত্রিম স্পাইক প্রোটিন সংযুক্ত করে দেয়া হয়েছে। জিন সম্পাদিত এই ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করালে মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসের এই কৃত্রিম স্পাইককে হুমকি হিসেবে দেখে থাকে এবং তা ধ্বংস করার চেষ্টা করে। জিন এডিটেড ভাইরাসের স্পাইক মানুষকে কোনো ক্ষতি করতে পারে না; কিন্তু শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস করতে শিখে যায় এবং এই ধ্বংস করার প্রক্রিয়াটি কোষের মেমোরিতে থেকে যায়। পরে যখন প্রকৃত করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শরীরে প্রবেশ করে তখন শরীরে তৈরি হওয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা (অ্যান্টিবডি) স্পাইকটিকে শনাক্ত করে এবং আগের ধ্বংস করার ক্ষমতা প্রয়োগ করে কোভিড-১৯ ভাইরাসটিকে ধ্বংস করে দেয়। অধ্যাপক মোজাহেরুল হক বলেন, শিম্পাঞ্জির ওই ভাইরাসটিকে গবেষণাগারে এমনভাবে পাল্টে দেয়া হয়েছে যেন এই ভাইরাসটি শরীরে আর বংশ বৃদ্ধি করে বেড়ে উঠতে না পারে। করোনাভাইরাসের যে রূপান্তরিত স্ট্রেইন পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন দেশে, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার চ্যাডক্স ভ্যাকসিন তাও ধ্বংস করতে পারবে বলে জানানো হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম ফোনে জানিয়েছেন, অক্সফোর্ডের এই ভ্যাকসিনটি নিলে সিভিয়ার (তীব্র) কোভিডে আক্রান্ত হয় না কেউ। অথবা কোভিডে আক্রান্ত হয়ে কাউকে হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয় না। এই শক্তিটিই অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির মূল ভরসা। এর কার্যকারিতা ৬০ শতাংশ নাকি ৯০ শতাংশ এটা নিয়ে ভেবে তেমন লাভ নেই। ভারতে অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বছরের শুরুতে বাংলাদেশের জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো খবর। তিনি বলেন, পাঁচ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ইতোমধ্যে সিরাম ইনস্টিটিউট প্রস্তুত করে রেখেছে। তিনি বলেন, এখনই বাংলাদেশের উচিত ভ্যাকসিনেশনের একটা মক ট্রায়াল (নকল প্রয়োগ) করা; যাতে করে প্রকৃত ভ্যাকসিন প্রদানের সময় সব কিছু পরিকল্পনামাফিক হয়। প্ল্যানিং এবং ইমপ্লিমেন্টেশনের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করতে হলে একটা মক ট্রায়াল জরুরি।
প্রসঙ্গত, এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটিসহ আরো দুইটি ভ্যাকসিনের অনুমোদন দিয়েছে কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে ফাইজার ও অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন অনুমোদন দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। আরেকটি ভ্যাকসিন যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি মডার্না তৈরি করেছে। বাংলাদেশের জন্য অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন সবচেয়ে উপযোগী। কারণ এটা সংরক্ষণ করা যাবে সহজেই। ফাইজারের ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা দেশে নেই। এই ভ্যাকসিনটি মাইনাস ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি : স্বাস্থ্য মন্ত্রী
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন বলেছেন, করোনাকালীন বিভিন্ন দেশে ১৮ লাখ মানুষ মারা গেছে আর আক্রান্ত হয়েছে ৮ কোটি মানুষ। অনেক উন্নয়নশীল দেশে অর্থনীতির সূচক মাইনাস হয়ে পড়েছে। ওইসব দেশ করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বলে তাদের এই অবস্থা। কিন্তু আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি বলেই আমাদের দেশে উন্নয়নের চাকা ঘুরছে। পদ্মা সেতুসহ সব সেক্টরে সমানতালে উন্নয়ন হচ্ছে। বিএনপিসহ অনেকেই ঘরে বসে শুধু নিরাপদে থেকে সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু তারা করোনাকালীন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। তাই পৌর নির্বাচনে মানুষ তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করেছে। আগামীতে দেশে যত নির্বাচন হবে ভোটাররা তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। শুক্রবার রাতে জেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানিকগঞ্জ পৌর সভার নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, পৌর নির্বাচনে প্রমাণ হলো মানিকগঞ্জবাসী নৌকার পক্ষে ও উন্নয়নের সাথে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নকে মানিকগঞ্জবাসী ভোট দিয়েছে। এই ভোট উন্নয়নের বিজয়, নৌকার বিজয়।

পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোনায়েম খানের সভাপতিত্বে সংবর্ধনা সভায় বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সুদেব সাহা, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম, নব নির্বাচিত কাউন্সিলর আরশেদ আলী বিশ^াস, আব্দুর রাজ্জাক রাজা, রাজিয়া সুলতানা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক আরো বলেন, ভোটাররা তাদের ভোট প্রয়োগ করে দায়িত্ব পালন করেছে। এখন পৌর এলাকায় শিশুপার্ক, মিনি স্টেডিয়াম, মিলনায়তন নির্মাণসহ শহরের খালটি উন্নয়ন করা হবে।
৮ মাসে সর্বনিম্ন শনাক্ত : মৃত ২৩ সুস্থ ৯৬৪

নয়া দিগন্ত ডেস্ক, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৮৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের হিসাবে আট মাসে সর্বনিম্ন। গত ৯ মে শনাক্ত হয়েছিলেন ৬৩৬ জন। দেশে এ পর্যন্ত করোনা পজেটিভ হলেন ৫ লাখ ১৫ হাজার ১৮৪ জন। গতকাল শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৩ জন এবং এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৭ হাজার ৫৯৯ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন ৯৬৪ জন, এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৬২০ জন।

গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৯ হাজার ৫০৯টি। অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৯ হাজার ৭০১টি। এখন পর্যন্ত ৩২ লাখ ৪৯ হাজার ৪০২টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। একই সময়ে শনাক্তের হার ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং এখন পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ২১ শতাংশ এবং মৃত্যু হার ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ১৭ জন পুরুষ এবং ৬ জন নারী। এখন পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৮১ জন পুরুষ এবং এক হাজার ৮১৮ জন নারী মারা গেছেন। বয়স বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মারা যাওয়াদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব বয়সী ১১ জন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে সাতজন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে দুইজন, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে দুইজন এবং ২১-৩০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন।

বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৪ জন, রংপুর বিভাগে ৩ জন, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ বিভাগে ২ জন করে এবং রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে একজন করে রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করা ২৩ জনই হাসপাতালে মারা গেছেন।

চট্টগ্রামে শনাক্ত ১১৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে সংক্রমিত শনাক্ত হয়েছেন ১১৭ জন। এদের মধ্যে ৯২ জন নগরের ও ২৫ জন উপজেলার বাসিন্দা। ১৩৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নতুন রোগীদের শনাক্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনায় মারা গেছেন ৩৫৯ জন। এর মধ্যে ২৫৬ জন নগরের ও ১০৩ জন উপজেলার বাসিন্দা।

গতকাল শনিবার চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: শেখ ফজলে রাব্বি জানান, গত শুক্রবার ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষায় ৩৩ জন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে ৩৫ জন, সিভাসুতে ১১ জন, ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ১৪ জন, শেভরনে ২১ জন এবং মা ও শিশু হাসপাতালে ৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/first-page/553138