২ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ৩:৪৬

বিদায়ী বছরে কর্মক্ষেত্রে ৪৩২ শ্রমিকের মৃত্যু

দেশে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার কারণে শ্রমিকদের মৃত্যুর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিদায়ী বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ৩৭৩টি কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় ৪৩২ জন শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ তথ্য প্রকাশ করেছে বেসরকারি সংস্থা সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি। এদিকে করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত বছরের ২৬শে মার্চ থেকে ৩১শে মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি থাকার পরেও দুর্ঘটনা এবং নিহত শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েছে।

সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি জাতীয় ও আঞ্চলিক ২৬টি দৈনিক সংবাদপত্র মনিটরিং করে এ তথ্য প্রকাশ করে। তবে শ্রমিক কর্মক্ষেত্র থেকে আসা-যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার সংখ্যা তাদের জরিপে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। সংস্থাটির পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে পরিবহন খাতে। যার সংখ্যা ১৬৮ জন।

এর পরেই নির্মাণ খাতে নিহত হয়েছে ১১৭ জন, সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে ৮৬ জন, কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে ৪৫ জন এবং কৃষি খাতে ১৬ জন।

প্রতিবেদনে মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৭ জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৯৬ জন, ছাদ, মাচা বা ওপর থেকে পড়ে মারা গেছে ৪৩ জন, শক্ত বা ভারী কোনো বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ৩৬ জন, পাহার বা মাটি, ব্রিজ, ভবন বা ছাদ, দেয়াল ধসে ১৯ জন, আগুনে পুড়ে ১৮ জন, বজ্রপাতে ১১ জন, রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ১০ জন এছাড়া অন্যান্য কারণে ২২ জন শ্রমিক নিহত হন।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, করোনা শ্রমজীবীদের জন্য সম্পূর্ণ নতুন একটি অভিজ্ঞতা। করোনার কারণে দীর্ঘ সময় শ্রমজীবীরা কাজ-কর্মে যুক্ত ছিল না, সবকিছুর ক্ষেত্রে একধরনের অচল অবস্থা বিরাজ করেছে, তাই বলে কর্ম-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমেনি। শ্রমজীবীর জীবনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে তাদের সুরক্ষার জন্য শ্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরো সচেতন হতে হবে এবং এক্ষেত্রে যেকোনো ব্যয়কে বিনিয়োগ মনে করতে হবে। জরিপের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যবস্থা, আইন প্রয়োগে বাধা ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। তাছাড়া যত্রতত্র কল-কারখানা গড়ে ওঠায় দুর্ঘটনায় শুধু শ্রমিক নয় সাধারণ জনগণও আক্রান্ত হচ্ছে। এইসব দুর্ঘটনা প্রতিহত করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।

অধিকাংশ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটে নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার না করে বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ দেয়ার সময়, মটর চালু করতে গিয়ে, মাথার ওপরে বয়ে যাওয়া বিদ্যুতের লাইনের নিচে কাজ করতে গিয়ে বা নির্মাণ সাইটে লোহার রড নিয়ে কাজ করার সময় শক্তিশালী বিদ্যুতের লাইন লোহার রড স্পর্শ করার ফলে। নির্মাণাধীন ভবনের পার্শ্বে বেড়া বা গার্ড তৈরি না করার ফলে লোহার রড বিদ্যুতের সংস্পর্শে আসে।

বিশেজ্ঞরা মনে করছেন, সকলের যৌথ প্রচেষ্টাই পারে কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনা থেকে শ্রমিকের জীবন বাঁচাতে। ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদানসহ কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব মালিকের। আর সরকার এ সংক্রান্ত আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করবে এবং মালিক কর্তৃক গৃহীত কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনিটরিং করবে। এতে করে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমে আসবে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=256936