২ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ৩:৪৫

নজরদারিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

বিলাস বহুল লঞ্চে ক্যাসিনো

ঢাকার ক্লাবগুলো বন্ধ থাকায় বিকল্প ক্যাসিনোর রাজ্য এখন সদরঘাটের একাধিক ভিআইপি লঞ্চ। লঞ্চগুলোতে সাত থেকে আটটি কেবিন একসঙ্গে করে গড়ে উঠেছে মিনি ক্যাসিনো। সেখানে রয়েছে মদ ও বিয়ারের ব্যবস্থা। রয়েছে আলোর ঝলকানি এবং মনোরঞ্জনের জন্য সুন্দরী ললনা। সাত এবং ১০ নম্বর জেটি থেকে একাধিক ক্যাসিনো ভিআআইপি লঞ্চ ছেড়ে যায়। সপ্তাহের দুইদিন বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার লঞ্চগুলো চাঁদপুরের মোহনা ঘুরে আবার সদরঘাট এসে ভিড়ে। প্রত্যেক যাত্রায় ৮০ থেকে ৯০ জন অংশ নিয়ে থাকেন। ঢাকার ক্লাবগুলোর ক্যাসিনো বন্ধ থাকার কারণে ক্যাসিনো নেশাবাজ খেলোয়াড়রা সেখানে ভিড় করছেন। রীতিমতো সিরিয়াল দিয়ে ক্যাসিনো খেলার জন্য বুকিং দিচ্ছেন তারা।

এসব লঞ্চ ছাড়ার আগে সদর ঘাট কর্তৃপক্ষকে জানান যে, তারা ব্যবসায়ী। কখনও তারা সরকারি কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। কখন তারা নিজেদের সরকারি দলের নেতা পরিচয় দিয়ে সদরঘাট কর্তৃপক্ষ বলেন, তারা নৌ বিহারে যাচ্ছেন। সকাল হলেই তারা ফিরে আসবেন। নৌ বিহার এবং বনভোজনের কথা বলার কারণে অনেকেই তাদের সন্দেহের ঊর্ধ্বে দেখে থাকেন। রাতভর ক্যাসিনো খেলার পর তারা নির্বিঘ্নে লঞ্চ নিয়ে ফিরে আসেন। তাদের এ অপকর্মে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা মাসোহারা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে নৌ পুলিশের ডিআইজি মো. আতিকুল ইসলাম গতকাল মানবজমিনকে বলেন, নদীপথে বিভিন্ন অপরাধ ঠেকাতে পুলিশ রাতদিন কাজ করছে। অপরাধের মাত্রা অনেকটা কমে এসেছে। কোনো লঞ্চে যদি অবৈধ ক্যাসিনোর অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র‌্যাব সদর দপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, বিলাস বহুল লঞ্চগুলোতে ক্যাসিনো গড়ে ওঠার তথ্য এসেছে তাদের কাছে। লঞ্চে ক্যাসিনো গড়ে ওঠার পেছেনে ফকিরাপুলের ইয়াংমেন ক্লাবের ক্যাসিনো পরিচালনাকারী ক্ষমতাসীন দলের এক নেতা জড়িত। র‌্যাব’র অভিযানে ওই নেতা পলাতক ছিলেন। তাকেও নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক গুলজার আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। সদরঘাটের একাধিক সূত্রে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৮ই সেপ্টেম্বর সারা দেশে ক্যাসিনো অভিযান শুরু হয়। র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে ক্লাবগুলোর ক্যাসিনো সাম্রাজ্য তছনছ হয়ে যায়। অনেকেই গ্রেপ্তার হয়। ক্যাসিনো হোতাদের অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। ক্লাবগুলোতে ক্যাসিনো বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ক্যাসিনো খেলোয়াড়রা বিকল্প হিসেবে লঞ্চকে বেছে নিয়েছেন। সূত্র জানায়, ক্যাসিনো অভিযান ঢিলে হওয়ার কারণে আবারও জমে উঠেছে বিলাস বহুল লঞ্চে ক্যাসিনোর কারবার। লঞ্চগুলোর চেয়ার কেবিনে ক্যাসিনো খেলা হয় না। একাধিক কেবিন একসঙ্গে করে বড় বড় ক্যাসিনোর গড়ে তোলা হয়েছে। ওইসব ক্যাসিনোতে অর্থ ও বিত্তের মালিক ছাড়া অন্য কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় না। এটা নিয়ে বড় একটা চক্র গড়ে উঠেছে। কেউ নতুন করে লঞ্চে ক্যাসিনো খেলার প্রস্তাব দিলে চক্রের সদস্যরা তার বায়োডাটা আগে যাচাই-বাছাই করে থাকেন। যদি তিনি অঢেল অর্থের মালিক হন এবং তাদের তথ্য বাইরে ফাঁস করবেন না বলে মনে হয় তখনই তাকে তাদের আসরের সদস্য হিসেবে নিয়ে থাকেন। কাউকে সন্দেহ হলে লঞ্চের ক্যাসিনোতে তারা নেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাত থেকে রক্ষার জন্য তারা ঘন ঘন নম্বর বদল করেন।

সূত্র জানায়, লঞ্চ ক্যাসিনোতে জড়িত পাঁচ জনের নাম পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা সবাই ক্ষমতাসীন দলের এক-একটি অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। ফকিরাপুল ও ইয়াংমেন ক্লাবে ক্যাসিনো গড়ে ওঠার পেছনে ছিলেন তারা। যারা ক্যাসিনো অভিযানের পর দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন এদের মধ্যে রয়েছেন কামাল হোসেন ওরফে বোর কামাল, তসলিম ওরফে হকার তসলিম, এজাজ, কবির হোসেন নান্টু ওরফে ল্যাংড়া নান্টু এবং শহিদুল ওরফে বক্স শহিদুল। এদের মধ্যে যুবলীগ নেতা কামাল এবং তসলিম ঢাকার ক্যাসিনো জগতের অন্যতম হোতা বলে তথ্য রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।

র‌্যাব’র ক্যাসিনো অভিযান শুরু হওয়ার পর শহিদুল ওরফে বক্স শহিদুল দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানতে পেরেছে যে, শহিদুল মালয়েশিয়ায় আরেক ক্যাসিনো সম্রাট মতিঝিলের সাঈদের সঙ্গে ছিলেন। মতিঝিলের ক্যাসিনো পাড়ার অন্যতম হোতা সাঈদ এখন অনেকটা প্রকাশ্যে চলাফেরা করছেন।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=256938