২ জানুয়ারি ২০২১, শনিবার, ৩:৪৪

করোনা সুরক্ষায় স্বাস্থ্যবিধিতে গুরুত্বারোপ

আবারও মাস্ক কেলেঙ্কারি

১০ দিনের স্থলে ২ মাস পর মাস্ক সরবরাহ - কার্টনপ্রতি বক্স ও মাস্কের সংখ্যা ছিল কম - পরিদর্শনকালে অসংগতি পেয়েছি -স্টোর অফিসার সিএমএসডি

কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে (সিএমএসডি) আবারও মাস্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এবার মাস্কের গুণগতমান ঠিক থাকলেও পরিমাণে অসংগতি দেখা দিয়েছে। কার্টন প্রতি বক্স এবং বক্সে মাস্কের সংখ্যা দুটোই কম পাওয়া গেছে।কার্যাদের পাওয়ার ১০ দিন পরে সরবরাহের কথা থাকলেও সময় লেগেছে প্রায় ২ মাস। যে প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়েছে তাদের পক্ষে সরবরাহ করেছে অন্য একটি প্রতিষ্ঠান। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে এ ধরনের অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ১০ আগস্ট ‘কসবা ফ্রেইট’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ২ লাখ ৬০ হাজার পিস ‘এন-৯৫’ মাস্ক সরবরাহ সংক্রান্ত চিঠি (কার্যাদেশ) দেয় সিএমএসডি। প্রতিটি মাস্কের দাম ৪৬০ টাকা হিসেবে এর আর্থিক মূল্য ছিল ১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

কার্যাদেশের পরের ১০ কর্মদিবসের মধ্যে মাস্ক সরবরাহের নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি এ আদেশ পাওয়ার ১ মাস পর ২৭ সেপ্টেম্বর ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরে এনওসির (অনপত্তি) আবেদন করে।

অধিদফতর ১ অক্টোবর ৩ মাসের জন্য তাদের অনাপত্তি সনদ দেয়। কিন্তু অনাপত্তি পাওয়ারও ২ মাস পর ৩১ ডিসেম্বর প্রথম চালান সরবরাহের চেষ্টা করে ‘কসবা ফ্রেইট’।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কসবা ফ্রেইট কার্যাদেশ পেলেও এর ভিত্তিতে ৩১ ডিসেম্বর বেলা পৌনে ১২টায় মাইশা গ্রুপের মার্কেটিং ম্যানেজার তাহমিনা আক্তার ও তার ২ সহযোগী মাস্কের প্রথম চালান নিয়ে সিএমএসডিতে আসেন।সেখানে এক লাখ পিস ‘এন-৯৫’ মাস্ক থাকার কথা। দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে বেলা ৩টায় ২টি গাড়ি থেকে কার্টন নামানো শুরু হয়। মোট ৬২৫টি কার্টনের প্রতিটিতে ৮টি করে বক্স থাকার কথা।প্রত্যেক বক্সে থাকবে ২০টি করে মাস্ক।

সিএমএসডির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা পরীক্ষামূলকভাবে ২য় গাড়ির ২৫টি কার্টন খুলে দেখেন। যার ১৫টিতেই ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। প্রতি কার্টনে ৮টির পরিবর্তে মাস্কের বক্স ছিল কোনোটিতে ৬টি, কোনোটিতে ৭টি।আবার বক্সে ২০টি করে মাস্ক থাকার কথা থাকলেও কোনোটিতে ছিল ১৬টি, কোনোটিতে ১৯টি। এ সংক্রান্ত সব তথ্য যুগান্তরে সংরক্ষিত আছে।

সূত্র জানায়, মাস্কসংক্রান্ত এসব তথ্য পাওয়ার পর সিএমএসডির স্টোর অফিসারের দায়িত্ব পালনকারী ২ মেডিকেল অফিসার ডা. রিয়াদ ও ডা. মাহবুব প্রত্যক্ষভাবে বিষয়টি পরিদর্শন করেন।

পরিদর্শন শেষে তারা প্রতিষ্ঠানের পরিচালককে বিষয়টি অবহিত করেন। পরে পরিচালকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিকাল ৫টা ১৮ মিনিটে মাস্কগুলো ফেরত নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর দিনে যারা এসেছিলেন সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ তারা মাস্কসহই সিএমএসডি ত্যাগ করেন।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনাপত্তিপত্রে দেখা গেছে, দক্ষিণ করিয়ার এসটিটি টেক লিমিটেডের উৎপাদিত ৮২১০ মডেলের এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহের নির্দেশনা দেয়া আছে।যা দুই লটে ১ লাখ ৩০ হাজার পিস করে সরবরাহ করতে হবে। অবশ্যই ৩এম গ্রেডের হতে হবে। আমদানিকৃত মালামাল সরবরাহের সময় ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া গেলে আমদানিকারক সম্পূর্ণরূপে দায়ী থাকবেন।

জানতে চাইলে, কসবা ফ্রেইটের স্বত্বাধিকারী মো. সিদ্দিক যুগান্তরকে বলেন, মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে কিনা বা সেগুলো সিএমএসডি ফেরত দিয়েছে কিনা তা তিনি জানেন না।

তিনি বলেন, তার মূলত ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিংয়ের ব্যবসা। তিনি এসব বোঝেন না। মাইশা গ্রুপের পক্ষ থেকে তার প্রতিষ্ঠানের নামে মাস্ক আমদানি করা হয়।সেগুলো এনে তাদের গুদামে রাখা হয়। তাই এসব বিষয় তার জানা নেই। মাইশা গ্রুপের মার্কেটিং ম্যানেজার তাহমিনা আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্ত তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ প্রসঙ্গে সিএমএসডির স্টোর অফিসারের দায়িত্ব থাকা ডা. রিয়াদের কাছে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য প্রকাশে অনীহা প্রকাশ করেন। তবে মাস্ক বুঝে নিতে গিয়ে অসঙ্গতি পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার অনুরোধ করেন।

এসব বিষয়ে জানতে শুক্রবার সিএমএসডির পরিচালক আবু হেনা মোরশেদ জামানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তার ফোন বন্ধ পাওয়ায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে এমনটি ঘটে থাকলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হবে বলে জানান।

১ এপ্রিল রাজধানীর মুদগা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নোয়াখালীর আড়াইশ’ শয্যা হাসপাতালসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এন-৯৫ মাস্কের মোড়কে নিম্নমানের সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করে সিএমএসডি। যে মাস্কের উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ছিল জেএমআই। যার প্যাকেটের গায়ে এন-৯৫ লেখা থাকলেও ভেতরে ছিল সার্জিক্যাল মাস্কের চেয়েও নিুমানের মাস্ক।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় জেএমআইর কারখানায় তৈরি মাস্কের মোড়কে এন-৯৫ লেভেল লাগিয়ে সরবরাহ করা হয় কেন্দ্রীয় ঔষধাগারে। সে বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জেএমআইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি। ওই সময়ে এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারি খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছিল দুদকও।

https://www.jugantor.com/todays-paper/first-page/379840/