১ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার, ১১:৫৫

আলোচনায় গুম-খুন

চট্টগ্রামে বেওয়ারিশ হয়েছেন ২৬৯ জন

চট্টগ্রামে বছরজুড়ে আলোচনায় ছিলো গুম-খুনের ঘটনা। করোনার মধ্যেও থেমে নেই খুনোখুনি। গেল বছরে মহানগরী ও জেলায় শতাধিক খুনের ঘটনা রের্কড হয়েছে। রাজনৈতিক, সামাজিক বিরোধ, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের ঘটনায় একের পর লাশ পড়েছে। পারিবারিক কলহ, পরকিয়াসহ নানা অনৈতিক সম্পর্কের জেরেও ঘটছে খুনের ঘটনা। গুপ্ত ঘাতকের শিকার অনেকের লাশ পাওয়া গেছে সাগর, নদী, খাল, নালা, সড়ক, জঙ্গলে। অজ্ঞাত অনেকের লাশ বেওয়ারিশ হিসাবে দাফন করেছে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলাম। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সংস্থার ব্যবস্থাপনায় ২০২০ সালে ২৬৭ জনের লাশ দাফন করা হয়। আগের বছরে বেওয়ারিশ লাশের সংখ্যা ছিল ২৮৪টি।

কিশোর গ্যাংয়ের বিরোধ এমনকি তুচ্ছ ঘটনায়ও খুন হয়েছেন বেশ কয়েকজন। বছরজুড়ে খুনোখুনিতে উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় ছিলো সাধারণ মানুষ। খুনের রহস্য উদঘাটন আর খুনিচক্রের সদস্যদের পাকড়াও করতে গলদগর্ম হতে হয়েছে পুুলিশকে। আলোচিত হত্যাকান্ডের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পতেঙ্গায় ব্যবসায়ী খুন। ১৯ ডিসেম্বর রাতে নগরীর পতেঙ্গায় খুন হন পরিবহন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলমগীর ওরফে আলমগীর কোম্পানী। আউটার রিং রোড সংলগ্ন বেড়িবাঁধে ডেকে নিয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যা করে চার উঠতি যুবক। পরদিন ওই চারজনকে গ্রেফতার করা হলে তারা খুনের দায় স্বীকার করে।

পরকীয়ার জেরে নগরীর টেরিবাজার এলাকায় খুন হন এক স্বর্ণের কারিগর। গত ৪ ডিসেম্বর পুলিশ টেরিবাজারের আফিমের গলির একটি বাসায় খাটের নিচ থেকে মাধব দেবনাথ নামে ওই যুবকের লাশ উদ্ধার করে। তার সহকর্মী ও মামাতো ভাই পিন্টু দেবনাথের স্ত্রীর সাথে পরকীয়া ছিল তার। এর জেরে তাকে বাসায় ডেকে নিয়ে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ খাটের নিচে লুকিয়ে রাখা হয়। প্রতিবেশীরা পচা গন্ধ পেয়ে পুলিশে খবর দিলে লাশ উদ্ধার করা হয়।

২৮ নভেম্বর নগরীর বন্দর থানার আনন্দবাজার সাগরপাড়ের ঝোপ থেকে অজ্ঞাত হিসেবে ইব্রাহীমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পরে নোয়াখালী থেকে দু’জনকে গ্রেফতারের পর তারা খুনের দায় স্বীকার করেন। খালাতো ভাইয়ের প্রেমিকাকে ফুসলিয়ে বিয়ে করার জেরেই পরিকল্পিতভাবে ইব্রাহীমকে খুন করা হয়। এতে ভাড়াটে খুনি হিসেবে কাজ করেন সোহাগ ও রাসেল।

১৫ অক্টোবর নগরীর পাহাড়তলী আলিফ গলি থেকে ককশিট ও পেপার দিয়ে মোড়ানো বস্তাবন্দি বিকাশ এজেন্ট বিজয় কুমার বিশ্বাসের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মামলা তদন্তে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি অভিযুক্ত খুনি আবদুর রহমানকে গ্রেফতার করে। আবদুর রহমান স্বীকার করেন মাসে পাঁচ হাজার টাকা সুদ দেওয়ার কথা বলে দেড় লাখ টাকা ঋণ নেন বিজয়ের কাছ থেকে। পাওনা টাকা চাওয়ায় তাকে হত্যা করা হয়। নিজ দোকানে গলায় ইন্টারনেটের তার পেচিয়ে হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে বিজয় কুমারের বাসার অদূরে ফেলে যান আবদুর রহমান।

নগরীর চান্দগাঁও এলাকায় গত ২৪ আগস্ট খুন হন মা-ছেলে। মা গুলনাহার বেগমকে কুপিয়ে ও তার শিশুছেলে মো. রিফাতকে গলাকেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনার প্রায় এক মাস পর র‌্যাব প্রধান আসামি মো. ফারুককে গ্রেফতার করে। ফারুক গুলনাহারের বাসায় সাবলেট থাকতেন। টাকা-পয়সা নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করেন ফারুক। মাকে খুনের ঘটনা দেখে ফেলায় শিশু রিফাতকেও হত্যা করা হয়।

১৩ মে সীতাকুন্ড পৌর এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের বিরোধের জেরে মো. শাহীন ও জাহিদ হোসেন নামে দুই যুবক খুন হন। ফটিকছড়িতে ২৬ মে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আবদুল জব্বারকে। এ ঘটনায় ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আধিপত্য বিস্তারের জেরে বাঁশখালীতে মাদরাসা ছাত্রসহ গুলি করে হত্যা করা হয় দুইজনকে।

কলহ-বিরোধে শিশু খুনের ঘটনাও ঘটেছে। ৯ জুলাই নগরীর দেওয়ানহাট থেকে ইকরা নামে এক শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সৎ মা শিরীন আক্তার তাকে খুনের পর লাশ জানালায় ঝুলিয়ে রাখে। ৭ জুলাই আগ্রাবাদে মায়ের সঙ্গে ঝগড়ার জের ধরে তিন বছরের শিশু মেহরাবকে কুপিয়ে হত্যা করে তার চাচা জসিম উদ্দিন। কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন জসিম। ১ জুলাই পটিয়ার কাশিয়াইশে দুই শিশু টুকু বড়–য়া এবং নিশু বড়–য়াকে গলা টিপে হত্যার পর নিজেই আত্মহত্যা করেন মোখেন্দু বড়–য়া।

৭ জুন নগরীর বাকলিয়া থানা এলাকায় বাড়িওয়ালাকে ফাঁসাতে পানির ট্যাঙ্কিতে ফেলে হত্যা করা হয় দুই বছরের শিশু আবদুর রহমান আরাফকে। ফটিকছড়ি থানা এলাকায় নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় চার বছরের শিশু আবদুল্লাহ আল দিহানকে। এ ঘটনায় জড়িত শিশুর চাচি রেশমা আকতারকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

https://www.dailyinqilab.com/article/346991