১ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার, ১১:৫০

৭০ হাজার প্রবাসী করোনায় আক্রান্ত

মারা গেছেন ২ হাজার ৩৩০

যেকোনো মহামারী পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন অভিবাসীরাই। বিশ্বমন্দা, তেলসঙ্কট, ২০০৯-১০ সালে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময়ও অভিবাসীরাই বেশি কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন। আর কোভিড সঙ্কটেও বেশি বিপদের মুখে রয়েছেন প্রবাসী শ্রমিকরা।

গত জুলাই মাস পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশীদের মধ্যে ৭০ হাজার জনই কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময় জীবন গেছে ১৩৮০ জনের। আর ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদেশে দুই হাজার ৩৩০ জন বাংলাদেশী মারা গেছেন। এরমধ্যে শুধু সৌদি আরবেই মারা গেছেন ৯৮৯ জন বাংলাদেশী শ্রমিক। আন্তর্জাতিক শ্রম অভিবাসনের গতি ও প্রকৃতি ২০২০ : অর্জন এবং চ্যালেঞ্জ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন ঘেঁটে এমন তথ্যই পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. শাহদীন মালিকের সভাপতিত্বে গত সপ্তাহে অনুষ্ঠিত জুম মিটিংয়ে অভিবাসন নিয়ে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার ড. তাসনিম সিদ্দিকী।

প্রতিবেদনে অভিবাসন খাতে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির মধ্যে কোভিড-১৯ এবং অভিবাসীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি পর্বে আরো বলা হয়েছে, অভিবাসনের দেশে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশীদের মৃত্যু অনেক বেশি। জুলাই মাস পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে কোভিড-১৯-এ মৃতের সংখ্যা ৩২৮ জন। তাদের মধ্যে ১২২ জনই বাংলাদেশী। কুয়েতে এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা ৩৮২ জন। এদের ৬০ জনই বাংলাদেশী। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সিঙ্গাপুরে আক্রান্ত অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যা এক লাখ ৫২ হাজার। এ দেশটিতে বসবাসরত মোট অভিবাসী শ্রমিকের সংখ্যার ৪৭ শতাংশ। অর্থাৎ গত ৯ মাসে সিঙ্গাপুরে থাকা অভিবাসীর অর্ধেকই কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। শুধু এখানেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২৩ হাজার। অর্থাৎ সেখানে আক্রান্তের শতকরা ৪০ ভাগই বাংলাদেশী। তবে চিকিৎসাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা যথাসময়ে নেয়ায় দেশটিতে মাত্র দুইজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আর মালদ্বীপে পর্যটন খাতে প্রচুর বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োজিত আছেন, যার বেশির ভাগই অনিয়মিত। দেশটিতে এক হাজার জন আক্রান্তের খবর পাওয়া গেলেও কোনো বাংলাদেশীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

গবেষণা প্রতিবেদনে কোভিড-১৯ এবং অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী, দুর্যোগকালে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার দায়িত্ব শ্রম গ্রহণকারী দেশের। সৌদি আরব, কুয়েত এবং কাতার অভিবাসী শ্রমিকদের বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টেস্টের সুযোগ পাবেন বলে ঘোষণা দেয়। তারা নিয়মিত ও অনিয়মিত অভিবাসীর ভেতরে কোনো তফাত করা হবে না বলে নিশ্চিত করেন। রামরুর গবেষণা অনুযায়ী, কোভিডকালে শুধু যাদের জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, তাদের শতকরা ৪৬ ভাগের কোভিড টেস্ট হয়েছে। বাকিরা কোভিড টেস্ট ছাড়াই প্রত্যাবর্তন করেছেন। ধরা পড়ার ভয় ছিল বিধায় অনিয়মিত অভিবাসীরা কোভিডের লক্ষণ দেখা দিলেও পরীক্ষা করাতে যাননি। সিঙ্গাপুরে ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের হোটেল অথবা নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে চিকিৎসাসেবা দেয়া হয়। রামরুর তৈরি করা গবেষণা প্রতিবেদনে জোরপূর্বক প্রত্যাবর্তিতদের বিদেশে ফেলে আসা মজুরি এবং অন্যান্য অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা সৃষ্টির জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাবি সমুন্নত রাখার কথা বলা হয়েছে।

https://www.dailynayadiganta.com/last-page/552773/