১ জানুয়ারি ২০২১, শুক্রবার, ১১:৪৩

‘লাইফ সাপোর্টে’ গণতন্ত্র ও রাজনীতি!

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল: লাইফ সাপোর্টে দেশের রাজনীতি’ এমনটিই মনে করছেন দেশের বিশিষ্টজনসহ রাজনীতিবিদরা। তারা বলছেন, ২০০৯ সালের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর থেকে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশে বিরোধী রাজনীতি অনেকটা নিষিদ্ধ। বিশেষ করে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে এমন কোনো কাজ নেই, যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ করেনি। গত কয়েক বছরে সেই ষড়যন্ত্র বেড়েছে কয়েকগুণ। বিরোধীদের সভা সমাবেশে ছিল অলিখিত নিষেধাজ্ঞা। ফলে দেশ পরিণত হয়েছে রাজনীতিক কর্মসূচি শূন্যতায়। বিরোধীদের রাজপথের কর্মসূচি ঘরোয়া কর্মসূচিতে রূপ নিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সেখানেও বাধা এসেছে। গেল বছরেও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বছরের শুরুর দিকে কারাবন্দী দলের চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বড় ধরনের সমাবেশ করতে চাইলেও সরকার তাতে অনুমতি দেয়নি। মার্চ থেকে করোনার কারণে ঘরোয়া কর্মসূচিও বন্ধ হয়ে যায়। যার কারণে ঘরবন্দী রাজনীতিরও অনেকটা অবসান ঘটে। রাজনীতি হয়ে উঠে অনলাইন নির্ভর। বছরের শেষের দিকে করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও রাজপথে রাজনীতি করার সুযোগ মিলেনি। সরকার সভা সমাবেশের ক্ষেত্রে প্রশাসনের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক করে। এতে করে বিরোধীদের কর্মসূচি পালন অনেকটা বন্ধ হয়ে যায়।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেনের মতে, দেশ এখন বড় সংকটের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসে বেঁচে রয়েছে রাজনীতি ও গণতন্ত্র। লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেললেই শেষ। এমতাবস্থায় খুব শিগগির যদি অলৌকিক কিছু না ঘটে, তাহলে দেশের গণতন্ত্র অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। তিনি বলেন, রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ এখন পরীক্ষিত রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। এছাড়া একদল দ্বারা আরেক দলকে নিশ্চিহ্ন করার হুংকার এবং প্রচেষ্টা সার্বিকভাবে রাজনীতির জন্য আত্মঘাতী হচ্ছে। এ ধরনের কৌশলের পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা থমকে যাবে। দেশে সৃষ্টি হবে রাজনৈতিক শূন্যতা।

সরকার সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে রাজনীতি শূন্য করে দিচ্ছে’ এমন অভিযাগ শীর্ষ রাজনীতিবিদসহ বিশিষ্টজনদের। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগের মূল উদ্দেশ্য দেশে একটি দল থাকবে, আর কোনো দল থাকবে না। বিরাজনীতিকরণের উদ্দেশ হচ্ছে, যাতে দেশের মানুষ রাজনীতি করতে না পারে। রাজনৈতিক দলগুলো যেন রাজনীতি করতে না পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিরাজনীতিকরণের লক্ষ্যেই সরকার করোনা পরিস্থিতির মধ্যে হামলা-মামলা, গ্রেফতার অব্যাহত রেখেছে। নতুন নতুন মামলায় জড়িয়ে বিরোধীদের কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার বাংলাদেশকে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতি শূন্য করে দেয়ার চক্রান্ত শুরু করেছে। তারা সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে রাজনীতি শূন্য করে দিচ্ছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য দেশে একটি দল থাকবে, আর কোনো দল থাকবে না। এটা তাদের সেই পুরনো দিনের ইচ্ছা। আগে বাকশাল করেছিল, বর্তমান আওয়ামী লীগ দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চায়। সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে, অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ৭২ সালেও রক্ষীবাহিনী দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছিল। আজকেও চারদিকে দুঃশাসন। দেশে কোনও আইনশৃঙ্খলা নেই। মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, নারী-শিশুদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। বিনাবিচারে হত্যা করা হচ্ছে। এই অবস্থার পরিবর্তনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, অবিলম্বে অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক এই সরকার, যারা নির্বাচন না করে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে তাদের পদত্যাগসহ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকেও বাতিল করে দিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কমিশন গঠন করতে হবে।

‘বিরোধী রাজনীতির মাঠ প্রায় শূন্য’ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, আমি দেখছি এখন বিরোধী রাজনীতির মাঠ প্রায় শূন্য। আওয়ামী লীগের কাছে দেশ নিরাপদ নয় মন্তব্য করে মান্না বলেন, পুরো দেশে কোনও বিধান নেই। পুরো দেশকে নতুন করে গড়তে হবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিরোধী জোটকে কোণঠাসা করে রাখার সরকারি দলের সিদ্ধান্তে সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। করোনাকালেও বিরোধী নেতাকর্মীদের নামে নতুন নতুন মামলা হচ্ছে। অথচ এখন দেশে রাজনীতিক কার্যক্রম তেমন নেই। বিরোধীরা ইনডোর সভা-সমাবেশ করছে। নিশ্চিত হার জেনেও সব ধরনের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। এতে সরকারের ভাবমূর্তি কিছুটা উজ্জ্বল হলেও সরকার বিরোধীদের ছাড় দিচ্ছে না। যেখানেই নির্বাচন হচ্ছে সেখানে মামলা হামলা চলছে। সরকার প্রতিদ্বন্দ্বী অপর দলকে পর্যুদস্ত করার চেষ্টায় রত। এখনও কোনো ঘটনা ঘটলে সেটার সাথে বিরোধীদের জড়ানো হচ্ছে। সাথে সাথে মামলা দেয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভাজন ক্রমেই সংঘাতে রূপ নিচ্ছে, যা দেশের স্থিতিশীলতা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য শুভ নয়। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করলে বা দুর্বল করলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে, তা হয়তো জায়গা করে দেবে অশুভ শক্তিকে। গণতন্ত্রকে ধারাবাহিকতায় চলতে দিতে হলে সরকারি দলকে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্য দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পথে সহযোগিতা করতে হবে। অন্যথায় বর্তমানে রাজনীতির ময়দানের যে গতি-প্রকৃতি দৃশ্যমান, তাতে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ রাজনীতিবিদদের হাতে নাও থাকতে পারে।

দেশে এখন কোনো রাজনীতি নেই মন্তব্য করে বিশিষ্ট কলাম লেখক সৈয়দ বোরহান কবীর বলেছেন, রাজনীতির মাঠ ফাঁকা। সেখানে আওয়ামী লীগের নিজেদের মধ্যে কর্মকান্ড ছাড়া আলোচনা করার মতো কোনো খবর নেই। চারপাশে কী হচ্ছে এ নিয়ে কারও আগ্রহ নেই। অন্যদিকে বিএনপি এখন এক কিংকর্তব্যবিমূঢ় দল। তারা যেন এক ঘোরের মধ্যে আছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থাও তথৈবচ। সোজা-সাপটা বলা যায়, দেশে এখন কোনো রাজনীতি নেই। রাজনীতি শূন্য এই দেশে তাই আর ভোটউৎসব হয় না। উপজেলা নির্বাচনে ভোটার বিমুখতা, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকেই লজ্জায় ফেলেছে।

রাজনীতিক বোদ্ধারা বলছেন, রাজনীতিহীন একটি রাষ্ট্র বিপজ্জনক। এর পেছনে রয়েছে জোর করে ক্ষমতা দখল। যতবার দেশে অবৈধভাবে বা অসাংবিধানিক শাসন জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে, ততবারই আক্রান্ত হয়েছে রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদরা। অথচ বাংলাদেশের সব অর্জনই রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদদের হাত ধরেই। ১৯৫২, ‘৬৯, ‘৭১, ‘৯০ সব রাজনৈতিক বিজয়ের মাধ্যমেই বাংলাদেশ একটা করে মাইলফলক ছুঁয়েছে। ২০০৭ সালে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে গঠিত ওয়ান ইলেভেনের সেই সরকারের বিরাজনীতিকরণের যে টার্গেট ছিল সেই বিরাজনীতিকরণের চক্রটি এখনো তৎপর। তাদের তৎপরতায় দেশকে আবার বিরাজনীতিকরণের পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে? করোনার কারণে দেশে তেমন রাজনীতি না থাকলেও বিরোধীদের বিরুদ্ধে রায়, দন্ড প্রদান কিন্তু থেমে নেই। এখনো আদালত প্রাঙ্গণে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে বিরোধীদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে এখন যে সমস্যাগুলো চলছে, যা দেশের মানুষকে উদ্বিগ্ন করছে তার রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে হবে, রাজনৈতিকভাবে নিষ্পত্তি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশকে যেভাবে রাজনীতি শূন্য করার নীরব প্রক্রিয়া চলছে, তার সবচেয়ে বড় মাশুল দিতে হবে ক্ষমতাসীনদেরই।

দেশের রাজনীতির মাঠ ২০১৯ সালে ছিল নিস্তরঙ্গ, তা পেরিয়ে ২০২০ সালের শুরুতেই দেখা দেয় কোভিড-১৯ মহামারি। আর তাতে জীবন বাঁচাতে রাজনীতি ঢুকে যায় ঘরে। মিছিল, সমাবেশ, হাত মেলানোর মতো জনসংযোগের চেনা দৃশ্যগুলো হয়ে যায় উধাও। তৈরি হয় অবরুদ্ধ অবস্থা, যে কোনো সমাবেশের উপর আসে নিষেধাজ্ঞা। ওই সময়টাতে রাজনৈতিক নেতাদের কাজ ঘরে থেকে বক্তব্য-বিবৃতি দেয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে। তবে সঙ্কটে পড়া মানুষের সহায়তায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মীদের তৎপরতা ছিল। নেতাদের রাজপথ ছেড়ে সভা-ওয়েবিনার নিয়ে ভার্চুয়াল জগতেই বেশি সময় কাটাতে দেখা গেছে। অন্য সব নির্বাচন বন্ধ থাকলেও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণ দেখিয়ে সংসদের কয়েকটি আসনের উপনির্বাচন মহামারিকালেও করেছে নির্বাচন কমিশন। তাতে ভোটারদের তেমন সাড়া দেখা যায়নি। বিএনপি আগের মতোই কারচুপির অভিযোগ তোলে। জুলাই মাসে অবরুদ্ধ অবস্থার বিধি-নিষেধ শিথিল হলে ধীরে ধীরে রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়তে থাকলেও তা চেনা দৃশ্যে ফেরেনি। মোটামুটি সব রাজনৈতিক দলের তৎপরতা ঘরোয়া সভা, এর বাইরে কয়েকটি মানববন্ধনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। রাজনীতির মাঠ স্বাভাবিকে কবে ফিরবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাবে।

গত বছর বিএনপির কর্মসূচি ঘুরপাক খাচ্ছিল দলীয় চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়ে। জোরাল কোনো কর্মসূচি না থাকলেও কর্মীদের চাপ ছিল। তবে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে আকস্মিকভাবেই সরকার নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেন দুর্নীতির মামলায় দ-িত খালেদা জিয়াকে। তিনি এখন তার বাড়িতেই রয়েছেন। শীর্ষ নেতারা দুই ঈদে তার সাক্ষাৎ পেলেও রাজনৈতিক কর্মকা-ে তিনি অনুপস্থিত। বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমও সীমাবদ্ধ ছিল। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাষায়, আমাদের একদিকে ফ্যাসিবাদী স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে, অন্যদিকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের কথা বললেও দৃশ্যমান কিছু করতে না পারার বিষয়ে ফখরুল গত এক দশকে বিএনপির ৩৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা ও নিপীড়ন-নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমরা এক দুঃসময় অতিক্রম করছি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি সেটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আওয়ামী লীগ সরকারের অত্যাচার, অনাচার, ব্যাংক লুট, গুম, খুন, নির্যাতন, দুঃশাসনের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ। এখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সাধারণ মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই, কোনো মর্যাদা নেই। এই সরকার জাতিকে বিভক্ত করেছে, শিক্ষার্থীদের নষ্ট করেছে। তারা সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন। দেশের গণতন্ত্র বিলুপ্ত করেছেন। সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। শুধু একটি দলের নেতাকর্মীদের জন্য সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। এই দুঃশাসনের অবসান হওয়া প্রয়োজন।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার ৪৯ বছর অতিক্রম করছি। এই যুদ্ধ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এখন দেশে যত উন্নতি, সব মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন আজও সম্ভব হয়নি বলে দুঃখ লাগে। যটুকু ছিল সেগুলোও এই সরকার ধ্বংস করে দিচ্ছে।

বিমানবাহিনীর সাবেক প্রধান ফখরুল আজম বলেন, স্বাধীনতার মূল চেতনা গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা আজ সঙ্কুচিত। দেশকে গড়তে হলে নতুন প্রজন্মকে জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। নতুন করে দেশকে গড়ে তুলতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশের গণতন্ত্র এখন আইসিইউর ‘লাইফ সাপোর্টে’ রয়েছে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করে আওয়ামী শাসকদল নিজেরাই নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করেছে। হারানো গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরে পেতে মাঠে নামতে হবে।

গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সামরিক একনায়কত্ব দেখেছে। কিন্তু সেই সামরিক শাসনের মধ্যেও রাজনীতি ছিল। রাজনৈতিক কর্মকা-ে বিধিনিষেধ থাকা সত্ত্বেও রাজনীতি ছিল। বাংলাদেশে কিছুকাল যাবৎ বেসামরিক সরকার আছে, সংসদ আছে, গণতন্ত্রটা নেই। তা না থাকলেও বিশেষ ক্ষতি ছিল না, কিন্তু গভীরতর উদ্বেগের কথা হলো রাজনীতিও নেই। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কার্যকর থাকলে খুব ধীরে ধীরে একটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে ও সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে উন্নতি করে। গণতন্ত্র ছাড়া ধারদেনা করে রাতারাতি অর্থনীতি ও অবকাঠামো উন্নতির চেষ্টা করলে বিপর্যয় অনিবার্য। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক রাজনীতির উপহার বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সেই গণতন্ত্রই যদি শেষ হয়ে যায়, রাজনীতিই যদি না থাকে, তাহলে সেই স্বাধীনতা জনগণের কাছে অর্থহীন হয়ে পড়বে। যে অর্থনৈতিক উন্নতিতে লাভবান হয় অন্যান্য দেশ, বহুজাতিক কোম্পানি ও দেশের অল্পসংখ্যক মুৎসুদ্দি গোছের মানুষ, তা দিয়ে জনগণের লাভ কী? যে অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নষ্ট হয়, সে উন্নতিতে ফায়দা কী? তিনি বলেন, বিরাজনীতিকরণের এই সংস্কৃতি থেকে এখন যারা দেশকে মুক্ত করতে পারবেন, ইতিহাস তাদের গলাতেই মাল্যদান করবে।

https://dailysangram.com/post/439184