২৩ মার্চ ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:৪৩

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

তিন সেমিস্টার প্রথা বাতিলের নির্দেশ

জানুয়ারিতে চালু হবে দুই ধাপের ব্যবস্থা * বছরে সাড়ে তিন লাখ শিক্ষার্থীর ব্যয় কমবে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা * স্ট্যান্ডার্ড সিলেবাস কারিকুলামের গাইডলাইন দেয়া হয়েছে

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যকর তিন সেমিস্টার প্রথা বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এ প্রথা বাতিল করে জানুয়ারি থেকে দুই সেমিস্টার চালু করতে হবে। পাশাপাশি মানসম্মত সিলেবাস-কারিকুলাম পড়ানোর কথাও বলা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ৯৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘স্ট্যান্ডার্ড সিলেবাস ও কারিকুলাম’ গাইডলাইন তৈরি করে দেয়া হয়েছে।

বর্তমানে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ই তিন সেমিস্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। এতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফিসহ নানা খাতে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হয়। তা ছাড়া মাত্র ৪ মাসের সেমিস্টার হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ঠিকমতো কোর্স শেষ হয় না। পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পর্যাপ্ত সময়ও পায় না তারা। এসব বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে ইউজিসি বছরে দুই সেমিস্টারের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে প্রতি সেমিস্টারে ভর্তির সময় শুধু সেশন চার্জ, উন্নয়ন, ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার, লাইব্রেরিসহ বিভিন্ন খাতের ফি হিসেবে ১০-১২ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। এর সঙ্গে যোগ হয় টিউশন ফি এবং ক্রেডিট চার্জ। ইউজিসির এ পদক্ষেপের কারণে এক সেমিস্টারে প্রতি শিক্ষার্থীর গড়ে অন্তত ১০ হাজার টাকা ব্যয় কমবে। বর্তমানে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার ১৩০ জন শিক্ষার্থী আছে। সেই হিসেবে শিক্ষার্থীদের বছরে অন্তত সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা খরচ কম হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন সেমিস্টার প্রথা নেই। বরং যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের ভালো শিক্ষা চায় তারা বছরে দুটি সেমিস্টার পদ্ধতি রেখেছেন। আমরা মনে করি, মানসম্মত উচ্চ শিক্ষার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি সেমিস্টার থাকা বাঞ্ছনীয়। এ জন্য দুই সেমিস্টার প্রথা এবং আদর্শ সিলেবাস ও কারিকুলামের গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। জনস্বার্থে সংশ্লিষ্টদের এটা মানতে হবে। কেন না, শিক্ষার্থীদের শুধু পাসের জন্য নয় ডিগ্রি অর্জন, জ্ঞানার্জন এবং ক্লাস-পরীক্ষার চাপ কমাতে সেমিস্টার কমানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দেশে বর্তমানে ৯৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তবে এগুলোর মধ্যে ৮৪টি চালু আছে। বাকিগুলো অনুমোদন পেলেও এখনও চালু হয়নি। প্রথমদিকের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নর্থসাউথ। এর ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, এ প্রতিষ্ঠানটি এক সেমিস্টারে ভর্তির জন্য ক্রেডিট প্রতি সাড়ে ৫ হাজার টাকা, স্টুডেন্ট অ্যাকটিভিটি ও কম্পিউটার ল্যাব ফি বাবদ ২ হাজার টাকা করে এবং লাইব্রেরি ফি ৫০০ করে আদায় করছে। এর বাইরে সেশন চার্জ আছে।

ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ প্রোগ্রামে একজন শিক্ষার্থীকে চার বছরে ১২৩ ক্রেডিট সম্পন্ন করতে হয়। প্রতি বছর তিন সেমিস্টার করে ১২ সেমিস্টারে এসব ক্রেডিট শেষ করে ডিগ্রি গ্রহণ করতে হয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান আবু সাদাত জানান, প্রতি সেমিস্টারের ফি ৪ হাজার টাকা করে নিয়ে থাকে এ প্রতিষ্ঠানটি। এর বাইরে ক্রেডিটপ্রতি নির্ধারিত ফি ছাড়া আর কিছু নেয়া হয় না। সে হিসেবে ইউজিসি যদি এক সেমিস্টার কমায় তাহলে একজন শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ ৪ হাজার টাকা কম খরচ হবে। কিন্তু ১২৩ ক্রেডিট শেষ করতে অন্যান্য ফি ঠিকই খরচ হবে।

ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভিসি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, হংকংয়ে ৪৫ক্রেডিটে সেমিস্টার আছে। বাংলাদেশেরই অনেক শিক্ষক সেখানে গিয়ে ৭ দিনে ৪৫ ক্রেডিট পড়িয়ে চলে আসেন। সুতরাং সেমিস্টার সমস্যা নয়। তবে এটা ঠিক বছরে তিন সেমিস্টার পড়ালে পরীক্ষার সময় নিয়ে টানাটানি হয়ে যায়। ছেলেমেয়েরা সময় কম পায়। ব্যক্তিগত ভাবে আমি বছরে দুই সেমিস্টারের পক্ষে। কিন্তু দুই সেমিস্টার করা হলে ছেলেমেয়েরা বেশি সময় পেলে আজেবাজে দিকে মন দেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ বাড়বে। কেন না, ভাড়া বাড়ির ক্যাম্পাসে জায়গা সমস্যা। বেশি জায়গা এবং শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে। জানা গেছে, ইউজিসি গত বছরের ৩১ জানুয়ারি বছরে দুই সেমিস্টার চালুর আদেশ জারি করে। এরপর গত সপ্তাহে দুই সেমিস্টার চালু এবং সেমিস্টারে কোন ধরনের কোর্স-কারিকুলাম পড়াতে হবে তার একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড গাইডলাইন’ প্রকাশ করে। গাইডলাইনে কোন বিভাগের অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি কত ক্রেডিটে শেষ হবে তা উল্লেখের পাশাপাশি কোর্স নির্দেশনা ও সিলেবাস আছে। ইউজিসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই তিনটি সেমিস্টারের জায়গায় দুটি সেমিস্টার পড়াতে বলা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ইউজিসির নির্দেশনা জারির পর আটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কয়েকজন ব্যক্তি ধানমণ্ডির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বসেছিলেন। সেখানে এ নিয়ে আলোচনায় অনেকেই উষ্মা প্রকাশ করেন। কেউ কেউ বলেছেন, ১৯৯২ সাল থেকে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন সেমিস্টার প্রথা চালু আছে। পরীক্ষিত এ পদ্ধতি নিয়ে এখনও কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। তাই এ নিয়ে ইউজিসির নতুন নির্দেশনাকে তাদের অনেকে নেতিবাচকভাবে দেখছেন বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে মালিক সমিতি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবে বলে জানা গেছে।

http://www.jugantor.com/last-page/2017/03/23/111331