১৮ অক্টোবর ২০২০, রবিবার, ৫:১৬

চাল কারসাজিতে ৪৩৬ মিল মালিক

দেশে হঠাৎ বেড়ে গেছে চালের দাম। দাম কমাতে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন উদ্যোগ নিলেও বাজারে এর প্রভাব তেমন একটা পড়ছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে গত মওসুমে ধানের রেকর্ড উৎপাদন হয়েছে। এ অবস্থায় চালের দাম বাড়ার কোনো কারণ নেই। মিল মালিকদের কারসাজিতেই এই দাম বৃদ্ধি বলে মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রত্যেক বড় বড় মিল মালিক প্রায় ৩ হাজার টনের ওপর চাল মজুত করে রেখেছেন। দেশের প্রায় ৫২টি জেলায় ৪৩৬ জন মিল মালিক চালের দাম বাড়ানোর কারসাজিতে জড়িত। তারা তাদের মিলে চাল মজুত করে রেখেছেন।

চলতি বছরে দেশে বোরো, আউস, আমন মিলে ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। এতো উৎপাদন হলেও ঢাকাসহ দেশের খুচরা বাজারে মিনিকেট চাল এখন ৫৮ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হচ্ছে। চালের মজুত ঠেকাতে নওগাঁসহ একাধিক এলাকায় খাদ্য অধিদপ্তর এবং ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, যে সব মিল মালিক তাদের গুদামে অবৈধভাবে চাল মজুত করে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক র‌্যাব সদর দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গতকাল জানান, মিল মালিকদের মধ্যে সারা দেশে বড় ধরনের সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের একাধিক বড় গুদাম আছে। বাজারে চালের দাম উঠানামা করলেই অধিক মুনাফার জন্য তারা তাদের নিজস্ব গুদাম ছাড়াও অন্যের গুদাম ভাড়া নেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ শুরুর পর খাদ্যশস্য উৎপাদন বড় সংকটের সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা করে সরকার। কিন্তু, সঠিক সময়ে কৃষকদের সার ও বীজ সরবরাহের জন্য উৎপাদন মাত্রা আগের মতোই থাকে। চলতি বছরে দেশে বোরো, আউস, আমন মিলে ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ কোটি ১ লাখ ৮১ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। আগের বছরের হিসাবে ২০১৮-১৯ সালে উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৭৩ লাখ ২৮ হাজার টন, ২০১৭-১৮ সালে ৩ কোটি ৬২ লাখ ৭৯ হাজার টন।

সূত্র জানায়, নওগাঁ জেলায় সবচেয়ে বেশি ৫০ জন মিল মালিক এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়াও বগুড়া জেলায় ৩৮, সিরাজগঞ্জ জেলায় ৩৭, চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলায় ২৫, জয়পুরহাটে ২৫, পাবনায় ২৩, দিনাজপুরে ১৫, গাইবান্ধায় ১২, নীলফামারী ১০, রংপুরে ৯ ও রাজশাহীতে ৯ জন মিল মালিক রয়েছেন। এ ছাড়াও বরিশালে ১১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৫, বাগেরহাটে ৪, ভোলায় ৪, চুয়াডাঙ্গায় ৪, কুমিল্লায় ৪, ফরিদপুরে ৩, ফেনীতে ৩, গোপালগঞ্জে ২, হবিগঞ্জে ২, জামালপুরে ৪, যশোরে ৪, ঝালকাঠীতে ৩, ঝিনাইদহে ৪ ও খুলনায় ৪ জন মিল মালিক রয়েছেন।

জানা গেছে, কিশোরগঞ্জে ৪, কুড়িগ্রামে ৯, কুষ্টিয়ায় ৪, লক্ষ্মীপুরে ৪, লালমনিরহাটে ৯, মাদারীপুরে ৪, মাগুরায় ৭, মানিকগঞ্জে ৪, মেহেরপুরে ৪, মৌলভীবাজারে ৭, ময়মনসিংহে ৭, নারায়ণগঞ্জে ৭ ও নরসিংদীতে ৩ জন মিল মালিক চালের দাম বৃদ্ধির কারসাজির সঙ্গে জড়িত। সূত্র জানায়, নাটোরে ২, নেত্রকোনায় ২, নোয়াখালীতে ৪, নড়াইলে ২, পঞ্চগড়ে ৯, পটুয়াখালীতে ৩, পিরোজপুরে ৩, রাজবাড়ীতে ২, সাতক্ষীরায় ৩, শরীয়তপুরে ২, সিলেটে ২, শেরেপুরে ২ এবং টাঙ্গাইলে ৪ জন মিল মালিক তাদের গুদামে ধান মজুত করে রেখেছেন।

সূত্র জানায়, চাল নিত্যপণ্য হওয়ার কারণে দাম বৃদ্ধি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ক্রেতাদের মধ্যে। ইতিমধ্যে নওগাঁ জেলায় প্রায় ২৫টি মিলে অভিযান চালিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয় ও ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়াও মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন এইসব মিল মালিকদের তাদের নিজস্ব গুদাম ছাড়াও আর কোথাও গুদাম রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে।

https://mzamin.com/article.php?mzamin=247236&cat=2