১৮ অক্টোবর ২০২০, রবিবার, ৫:০৮

বৈষম্যের কারণে কমছে না দারিদ্র্যের হার

বৈষম্যের কারণে কাঙ্ক্ষিত হারে কমছে না দেশের দারিদ্র্য। এ বৈষম্য যেমন আয়ের ক্ষেত্রে রয়েছে, তেমনি রয়েছে জীবনধারণের নানা বিষয়ের ওপর। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র।

এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এসপিআই) অনুযায়ী রান্না জ্বালানি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ মানুষ বৈষম্যের শিকার। এ ছাড়া উপযুক্ত বাসস্থানের ক্ষেত্রে এ হার ৩৮ দশমিক ৭ শতাংশ। স্যানিটেশন সুবিধার ক্ষেত্রে ৩০ দশমিক ৭ শতাংশ, সম্পদের ক্ষেত্রে ২৮ দশমিক ৩ শতাংশ, উপযুক্ত পুষ্টি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ এবং স্কুলগামিতার ক্ষেত্রে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ বৈষম্যের শিকার।
সম্প্রতি ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট: বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন-২০২০’ নামের এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে জিইডি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, এই আয় বৈষম্য বৈশ্বিক পরিমাপক অনুসারে দেশে ১৯৭৪ সালে দেশের পয়েন্ট ছিল শূন্য দশমিক ৩৬। ২০১৬ সালে তার বেড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে শূন্য দশমিক ৪৮৩ পয়েন্টে। গ্রামীণ এলাকায় তা শূন্য দশমিক ৪৯৮ এবং শহর এলাকায় শূন্য দশমিক ৪৫৪। এ সূচকের মান এক বা এর কাছাকাছি থাকলে চরম বৈষম্য নির্দেশ করে।

তিনি বলেন, গত কয়েক দশকে অর্জনের একাধিক সূচকে বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে ভালো মানের উন্নতি করেছে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মাথাপিছু আয় জিডিপির তিনগুণেরও বেশি বেড়েছে। গড় আয়ু বেড়ে ৭৩ শতাংশে পৌঁছেছে। তবে যদিও বর্তমানে বাংলাদেশ আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে ধনী, কিন্তু এখনও প্রায় চার কোটি মানুষ দরিদ্র। সবচেয়ে ধনী পাঁচ শতাংশ পরিবার দেশের মোট আয়ের প্রায় ২৮ শতাংশ পায়। অথচ নিচের দিকে থাকা পাঁচ শতাংশ পরিবার পায় মাত্র শূন্য দশমিক ২৩ শতাংশ। যদিও মাতৃমুত্যু হার কমেছে তারপরও প্রসবের সময় শহরের নারীর চেয়ে গ্রামীণ নারীর মৃত্যু ঝুঁকি তিনগুণ বেশি। এ ছাড়া সামাজিক সুরক্ষার আওতা বেড়েছে কিন্তু তার পরও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য খাতে অন্যদের তুলনায় বাড়তি ব্যয়ের বোঝা টানার আশঙ্কা পাঁচগুণ বেশি।

প্রতিবেদন বলা হয়েছে,আয় বণ্ঠনে অসমতা বৃদ্ধির কারণে দারিদ্র হ্রাসের গতি কমছে। স্বাধীনতার প্রথম দশকের তুলনায় বিগত দশকে আয় বৈষম্য বেড়েছে। দারিদ্র্য কমার ক্ষেত্রে ২০০৫ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দেশে প্রতিবছর ১ দশমিক ৭ শতাংশ পয়েন্ট হারে দেশের দারিদ্র্য কমেছে। কিন্তু ২০১০ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দারিদ্র্য হ্রাসের এ হার ১ দশমিক ২ শতাংশ পয়েন্টে নেমে এসেছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকার সত্ত্বেও দারিদ্র্য কমার হার নিচু হওয়ার অর্থ হলো আয় বণ্ঠনে অসমতা বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক জেষ্ঠ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, কাক্ষিত পর্যায়ে শোভন কর্মসংস্থান তৈরি না হওয়ায় আয় বৈষম্য বেড়েছে। ফলে দারিদ্র্য হ্রাসের গতি কমাটাও স্বাভাবিক। তবে করোনা মহামারীর কারণে এরইমধ্যেই নতুন দারিদ্র্য যোগ হয়েছে মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশ। যদি এটি হয়ত সাময়িক সময়ের জন্য। কিন্তু করোনা থাকলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়েই দেশের সব কিছু খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে অর্থনীতির চাকা সচল হয়েছে। কিন্তু এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি করোনা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। যেমন পোশাক কর্মী, রিকশা ভ্যান ও সিএনজি চালক, মুচি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, মুদি দোকানিসহ এক কথায় বলতে গেলে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের বেশিরভাগই কর্মীই স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এজন্য সরকারের উচিত টেকসই সহায়তা ব্যবস্থা করা। যাতে কেই কাজ হারালেও যাতে চলতে পারে। তাহলে নিম্ন আয়ের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা থাকবে। বাজারে ভোগের চাহিদা অব্যাহত থাকবে।

জিইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় উচ্চ দারিদ্র্য রেখা ও নিম্ন দারিদ্র্য রেখার নিচে অবস্থানকারী জনসংখ্যার হার স্থিতিশীলভাবে কমছে। সাম্প্রতিক প্রাক্কলন অনুযায়ী ২০১৯ সালে উচ্চ দারিদ্র্য রেখার নিতে বসবাসকারী জনসংখ্যার অনুপাত ২০ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে এসেছে। পাশাপাশি নিম্ন দারিদ্র্য নেমে এসেছে ১০ দশমিক ৫ শতাংশে। ঘাতসহনশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ত্বরিত প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে বহুমাত্রিক দারিদ্র্য মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজনীয় নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কিন্তু আয় অসম বণ্ঠন দারিদ্র্য নিরসনের গতির ক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। সেই সঙ্গে এসডিজি-১ এর ক্ষেত্রে রয়েছে আরও বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ।

https://dailysangram.com/post/431043