২৩ মার্চ ২০১৭, বৃহস্পতিবার, ৯:১৮

গ্যাসের পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু

গ্যাসের দাম বাাড়নোর পর এবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া শুরু করেছে বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানি। তবে এ প্রস্তাব নিয়ে শুনানি শেষে দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিবে বিইআরসি।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশিন (বিইআরসি) সূত্রে জানা গেছে, সংস্থা এবং কোম্পানিগুলোর প্রস্তাব কারিগরি মূল্যায়ন, শুনানিসহ সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বিদ্যুতের নতুন মূল্য ঘোষণা করা হতে পারে।

জানা গেছে, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় বিইআরসির মূল্যায়নে বলা হয়েছিল, তেলের দাম কমায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় প্রায় ৩৪ পয়াসা কমেছে। তাই গ্যাসের দাম বাড়ানো হলেও এর প্রভাব বিদ্যুৎ উৎপাদনে পড়বে না। তবে গত ১৩ মার্চ পেট্রোবাংলায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে জানানো হয়, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম আন্তর্জাতিক বাজারদরের সমান করা হলে প্রতি বছর সরকারের বিশাল অংকের বাজেট সাশ্রয় হবে। দাম বৃদ্ধির মাধ্যমে সে প্রক্রিয়া শুরু করছে সরকার।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পিডিবি ইতোমধ্যে বিদ্যুতের পাইকারী দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিইআরসিতে। প্রস্তাবে তারা বিদ্যুতের দাম শতকরা ১৫ভাগ বাড়ানোর জন্য বলেছে। বিদ্যুৎ খাতের গ্যাসের দাম ১২ শতাংশ বৃদ্ধি এবং বরাবরের মতো লোকসান কমানোর প্রসঙ্গ টেনে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় পিডিবি। তবে তেলের দাম কমার পর বিদ্যুতের দাম কমানোর প্রস্তাব দেয়নি সংস্থাটি।

সূত্র জানায়, পিডিবির মতো বিদ্যুতের খুচরা মূল্য বৃদ্ধির জন্য ওজোপাডিকো প্রস্তাব দিয়েছে। আরইবি, ডিপিডিসি, ডেসকোসহ অন্যান্য বিতরণ কোম্পানিগুলো প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে যা শীঘ্রই বিইআরসিতে জামা দেবে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটি পাইকারি বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৭২ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। বর্তমানে বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পিডিবি প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৪ টাকা ৮৭ পয়সায় বিক্রি করে। প্রস্তাব অনুযায়ী মূল্য বাড়ালে, ইউনিটে ৫ টাকা ৫৯ পয়সা পাবে পিডিবি। মূল্যবৃদ্ধি হবে ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। পিডিবির প্রস্তাবে আগামী ১ এপ্রিল থেকে বর্ধিত মূল্য কার্যকর করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) পিডিবির প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আর্থিক লোকসান হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে লোকসানি সংস্থা এটি। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (ডিসেম্বর-১৬ পর্যন্ত) লোকসান হয়েছে ২ হাজার ৯২ কোটি টাকা। বেসরকারি ভাড়াভিত্তিক ও আইপিপি (ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উচ্চ মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিতরণ কোম্পানির কাছে বিক্রি করায় লোকসান বাড়ছে।

বিশেষ করে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে গড়ে ইউনিট প্রতি আট থেকে নয় টাকায় বিদ্যুৎ কিনতে হয়। পিডিবি নিজস্ব কেন্দ্র ছাড়াও সরকারি-বেসরকারি কেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ কিনে তা বিতরণ কোম্পানিগুলোকে ইউনিট প্রতি লোকসানে বিক্রি করে। ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি), ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ভোক্তাদের কাছে এই বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন , সরকার টার্গেট নিয়ে গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে। সরকারের কাছে মূল্যবৃদ্ধির কোন যৌক্তিক প্রমাণ নেই। গায়ের জোরে অতিরিক্ত মূল্যহার জনগণের কাঁধে চাপানো হচ্ছে। তারা মনে করেন , বিদেশী কোম্পানির স্বার্থে দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ বাপেক্সকে অকার্যকর রাখায় নতুন গ্যাস আবিস্কার হয়নি। ফলে বিদ্যুৎ খাতে চাহিদা মাফিক গ্যাস সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। তেল চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র এখনও টিকে আছে। কতিপয় কোম্পানির স্বার্থ ঠিক রাখতেই এসব করা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা আরো বলেন, বিতরণ কোম্পানিগুলো লাভজনক অবস্থায় থেকেও বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর আবেদন করছে, যা অযৌক্তিক।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন, বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের প্রাইসটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিদ্যুতের দামও আমরা অ্যাডজাস্ট করতে চাই। ইতোমধ্যে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে বিইআরসিতে প্রস্তাব পাঠানোর কথা জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভবিষ্যতে সারা বাংলাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার লক্ষ্যে আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। এজন্য অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করা জরুরী।

সর্বশেষ ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। এরপর গত বছর (২০১৬) পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর আবেদন করে পিডিবি ও সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলো। সে সময় ডেসকো আট দশমিক ৩৫ শতাংশ, ডিপিডিসিআট দশমিক ৮৬, ওজোপাডিকো ১০ দশমিক ৭৬ ও আরইবি সাত দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে। তবে সে সময় আর এ প্রক্রিয়া এগোয়নি। এখন অবস্থার (বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধি) পরিবর্তন হওয়ায় নতুন করে প্রস্তাব দিচ্ছে বিতরণ কোম্পানিগুলো।

পিডিবির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ বলেন, বর্তমানে উচ্চমূল্যে বিদ্যুৎ কিনে কম মূল্যে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে বিক্রি করতে হচ্ছে। এতে বছরে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার ঘাটতিতে পড়তে হচ্ছে। এজন্য বিদ্যুতের বাল্ক (পাইকারি) মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) পাঠানো হয়েছে।

পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বিডি রহমতউল্লাহ বলেন, সরকার নিজস্ব গ্যাস অনুসন্ধান বাদ দিয়ে উচ্চমূল্যে এলএনজি আমদানি করতে চাইছে। এজন্য গ্যাসের মূল্য ধাপে ধাপে বৃদ্ধির প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। এরপর বাড়বে বিদ্যুতের দাম। আর এগুলোর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিল্প উৎপাদন। ফলে জিডিপি কমাটা স্বাভাবিক।

http://www.dailysangram.com/post/276757